ক্যান্সার। অতিমারির এই কঠিন সময়েও এই নাম আমাদের মনে এখনও শঙ্কা জাগায়। মনে হয় এ রোগ শরীরে বাসা বাঁধা মানে মৃত্যুর পরোয়ানা। তবে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা কিন্তু তেমনটা মনে করেন না। তাঁদের মতে, ক্যান্সারকে ভয় না পেয়ে, সচেতন হলেই এ রোগ থেকে নিরাময় সম্ভব। যদি সেটা অতিসচেতনতাও হয়, সেটাও ক্যান্সারের ক্ষেত্রে খারাপ নয়। আর এই নিয়ে আলোচনা করতেই সিআইআইডব্লিউএন- এর পক্ষ থেকে একটি ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়েছিল। আলোচ্য বিষয় ছিল: কীভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সারের উপসর্গ থেকে চিকিৎসার মাধ্যমে ঝুঁকি কমিয়ে দেওয়া যায়। সাত নভেম্বর ‘ন্যাশনাল ক্যান্সার অ্যাওয়ারেনেস ডে’। সেই উপলক্ষে ওইদিন এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সংস্থার চেয়ারপার্সন সুচরিতা বসু জানান, একমাত্র সচেতনতাই এই রোগের সম্পর্কে সঠিক দিশা দেখাতে পারে। কারণ, আজকের দিনেও বাড়িতে কারোর ক্যান্সার হয়েছে শুনলে পরিবারের লোক দিশেহারা হয়ে পড়েন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালিকা ক্যান্সার ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়ার এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর সুতাপা বিশ্বাস বলেন, ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতা মূলক প্রচার অভিযান চললেও সেদিকে নজর কম। উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, সিগারেটের প্যাকেটের উপর যত বীভৎসই ছবি দেওয়া হোক না কেন, তা দেখেও সেটা কিনে খান ধূমপায়ীরা। সুতরাং সচেতন হলে তবেই এই রোগের নিরাময় করা সম্ভব।

ওই ওয়েবিনারে বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক্তার ইন্দ্রাণী গুহ। তিনি নিজে একজন কার্ডিয়াক সার্জন শুধু তাই নন, একজন ক্যান্সার সারভাইভারও বটে। তিনি বললেন, যখন প্রথম তাঁর থাইরয়েড ক্যান্সার ধরা পড়ে, চিকিৎসক হয়েও তার মনে শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু মাত্র ৭ দিনের মধ্যে রোগ নির্ণয় করে সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অপারেশন করিয়ে নেন তিনি। এবং দ্রুত ফিরে আসেন কাজের জীবনে। তিনি জানান, একজন চিকিৎসক হয়ে যদি তাঁর এই ভয় হতে পারে তাহলে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে ভয়টা কত গুণ তা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু তার পরামর্শ ভয় পেয়ে নয়, রোগ হয়েছে সন্দেহ হলেই তৎক্ষণাৎ ডাক্তার দেখিয়ে তার উপশম করাটাই এই রোগের এক এবং একমাত্র পথ। তাতেই রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

প্রফেসর মহম্মদ সিদ্দিকি জানান, ক্যান্সারের সম্ভাবনা অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করে। তার মধ্যে প্রধান হল বয়স। চল্লিশের পরে ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সার অনেক কম বয়সেই হয়। তবে, সার্ভাইকাল ক্যান্সার একটু বেশি বয়সে হয়ে থাকে। ক্যান্সারের সম্ভাবনা নির্ভর করে জীবনশৈলীর উপর। একইসঙ্গে ভৌগোলিক অবস্থানের উপরও কী ধরনের ক্যান্সার হবে সেটা অনেকটাই নির্ভরশীল।

ডাক্তার পার্থ বসু জানা, ভারতে মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় স্তন ক্যান্সার। এরপরেই সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার। তাঁর মতে বর্তমান আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে মেয়েদের বিয়ের বয়স পরিবর্তন হচ্ছে। পরিবর্তিত হচ্ছে সন্তান ধারণের বয়সও। এর উপর নির্ভর করে বদলে যাচ্ছে ক্যান্সারের গতিপ্রকৃতি। মহিলাদের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে যদি কোনরকম সম্ভাবনা দেখা দেয় তাহলে কুড়ি বছর বয়সের পরেই এর ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত। তাঁর মতে, স্থূলতা ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। খাদ্যাভ্যাসও এর একটা কারণ। নিয়মিত যোগ অভ্যাস শরীরচর্চা, জীবনশৈলী ক্যান্সারকে রুখে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে বলে মত পার্থ বসুর।


ডাক্তার মানস রায় জানান, লিভার ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। তার মতে, ক্যান্সারের ক্ষেত্রে কোনও রোগী যদি অতিরিক্ত সচেতন হয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে ডাক্তারের কাছে চলে আসেন, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেন সেটা শেষ পর্যায়ে আসার থেকে অনেক ভালো।

ডক্টর রোজিনা আহমেদ তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানান, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা সবসময় যে ডাক্তারের কাছে দেরিতে আসেন তা নয়। বরং তাঁরা প্রথমদিকে বিশেষজ্ঞের কাছে না গিয়ে ভুল চিকিৎসকের কাছে যান। যাঁরা তাঁদের অন্যদিকে চালিত করেন। যার ফলে তাঁরা যখন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের কাছে আসেন, তখন চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে অনেক দেরি হয়ে যায়। তিনি বলেন, স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে অনেক সময় ব্যথা না থাকলে মহিলারা অনেক ক্ষেত্রে সেটাকে গুরুত্ব দেন না। মনে করেন ব্যথা নেই বলে এই লাম্বটি ম্যালিগন্যান্ট নয়। কিন্তু এটা মিথ। এর কোনো ভিত্তি নেই। ব্যথা ছাড়াও স্তনের ভিতরের লাম্ব ক্যান্সার হতে পারে।

ডাক্তার অবন্তিকা মুখোপাধ্যায় জানান, মুখের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে অনেক আগে থেকেই তাঁর উপসর্গ দেখা দেয়। মুখের ভেতর সাদা, লাল দাগ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আরও পড়ুন:পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করতে অভিনব উদ্যোগ, নজির গড়ল ধানবাদ
