প্রথিতযশা শিল্পী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে বই লিখলেন প্রত্যন্ত গ্রামের এক যুবক

প্রথিতযশা শিল্পী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে বই লেখা হচ্ছে। বইটি লিখছেন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কোচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমার প্রত্যন্ত গ্রামের এক যুবক। হ্যাঁ, কিছুটা অবাক হলেও সত্যি ঘটনা। তবে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে যে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিত্বকে নিয়ে কলকাতা থেকে বহুদূরের কোনও প্রত্যন্ত গ্রামের লেখকের আবির্ভাব হয় কিভাবে? তার ব্যাকগ্রাউন্ডই বা কি? এসব কৌতুহলের অবসান ঘটাতে ‘এখন বিশ্ববাংলা সংবাদ’এর চোখ পড়েছে উত্তরের জানালায়।

জানা গিয়েছে, কোচবিহার জেলার অন্তর্গত দিনহাটা মহকুমার পেটলা গ্রামের বাসিন্দা পার্থসারথি রায় সদ্য প্রয়াত বিখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে বই লিখছেন। এই কাজে তিনি বেশকিছুদিন পূর্বেই হাত দিয়েছেন। ইতিপূর্বে তার লেখা বই ‘বাহাদুর শৈলেন’ ও ‘ঠিকানা-আনিসুজ্জামান জীবন ও সাহিত্য’ প্রকাশিত। প্রথম বইটি উত্তরবঙ্গের গর্ব শিলিগুড়ির বাসিন্দা গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডধারী শৈলেন্দ্রনাথ রায়ের (টিকিওয়ালা শৈলেন) জীবনিগ্রন্থ। বইটিতে মুখবন্ধ লিখেছিলেন প্রথিতযশা লেখক মহাশ্বেতা দেবী। দ্বিতীয় বইটি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন সাহিত্যিক তথা বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক (যার জন্মভূমি ভারত, কর্মভূমি বাংলাদেশ) আনিসুজ্জামানের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে লেখা। এই বইয়ে মুখবন্ধ লিখেছেন বিখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। দুটি বই-ই কলকাতা দে’জ এর পরিবেশনা।

 

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ‘ঠিকানা’ বইটিতে মুখবন্ধ লেখার প্রস্তাব নিয়ে এক জনৈক ব্যক্তির মাধ্যমে লেখক পার্থসারথি রায় দিনহাটা থেকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের গল্ফগ্রিনের বাড়িতে পৌঁছান। সেই বইটির পান্ডুলিপি অভিনেতার বসার ঘরে তার হাতে তুলে দেওয়া হয়। দীর্ঘক্ষণ পান্ডুলিপি ঘেঁটে তিনি বলেন, “বা: ওরকম এক ব্যক্তিত্বের জীবন ও সাহিত্যের বইতে মুখবন্ধ লিখতে পারলে আমি নিজেকে গর্বিত মনে করবো। ব্যক্তিগতভাবে আমি আনিস সাহেবকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি।” এরপর তিনি মুখবন্ধ লিখে লেখকের হাতে দেন।

২০১৭ সালে ঢাকায় বইটি প্রকাশের পর সেবছরই লেখক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের হাতে বই তুলে দিতে গল্ফগ্রিনে যান। হাতে বই তুলে দেওয়া হলে লেখক বলেন, “স্যার, আনিসুজ্জামানের পর এবার আপনাকে নিয়ে আমি লিখতে চাই।” আর এই ইচ্ছের মধ্যে প্রেরণা জুগিয়েছেন স্বয়ং আনিসুজ্জামান, সেকথাও লেখক তুলে ধরেন। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি সম্মতি দেন।

সৌমিত্র বলেন, “আমি আমার কবিতার মধ্যে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে সন্নিবিষ্ট করেছি। আমার কাব্যগ্রন্থেই আমাক খুঁজে নাও।” এরপর ‘মধ্যরাতের সংকেত’, ‘ক্যালাইডোস্কোপ’, ‘স্বেচ্ছাবন্দি আশার কুহকে’ ও ‘কবিতা সমগ্র’ চারটি কাব্যগ্রন্থ লেখক হাতে পান। লেখক পেশায় একটি জনপ্রিয় দৈনিক সংবাদপত্রের (উত্তরবঙ্গ সংবাদ) সাংবাদিক। কাজেই কলকাতা থেকে গ্রামে ফিরে কাজের ফাঁকে রাত জেগে লেখক কবিতায় সৌমিত্রকে খোঁজার কাজ শুরু করেন। পার্থসারথি রায় বলেন,”লেখার কাজ সম্পন্ন হলে পান্ডুলিপি নিয়ে সৌমিত্র বাবুর কাছে পৌঁছনোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তা আর হলোনা।” তবে লেখার কাজ শেষ হলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অভিনেতার স্মৃতির উদ্দেশ্যে তাকে মলাটবদ্ধ করে সুধী পাঠক সমাজের হাতে বই তুলে দেবার সিদ্ধান্তের কথা তিনি জানান।

উল্লেখ্য, মহাশ্বেতা দেবীর কাছের মানুষ ছিলেন পার্থ। ছাত্রজীবনে দেবীর লেখা পড়ে তার কাছে পৌঁছনোর বাসনা জাগে তার। পরবর্তীকালে একসময় তা সম্ভব হয়। বারংবার জি ডি ৩০, রাজডাঙ্গা মেন রোড, নারকেল বাগানের বাড়িটির দোতলায় দেবীর পাশে বসে সময় কাটাতে পার্থ ছুটে আসতেন কলকাতায়। দেবীকে বড়-মা বলে ডাকতেন তিনি। দেবী তার হাতে কলম তুলে দেন‌। দেবী তার জীবনের অসম্পূর্ণ লেখার দায়িত্বভার লিখিতভাবে পার্থকে দিয়ে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলেন। জীবনের শেষ পর্যায়ে গল্ফগ্রিনের বাড়িতে থাকা অবস্থায় দেবীর মাতৃস্নেহ পেয়ে ধন্য হয় পার্থর জীবন। দেবীর নির্দেশ মতো লেখালেখির কাজকেই জীবনের ব্রত হিসেবে বেছে নিয়েছেন দিনহাটার এই লেখক। এখন তার লক্ষ্য কাবিতায় সৌমিত্রকে খোঁজার কাজ দ্রুত শেষ করা।

আরও পড়ুন-সেজে উঠছে কর্ণগড়, ইতিহাস ছোঁওয়ার অপেক্ষায় পর্যটকরা

Previous articleগরু পাচার কাণ্ডে সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদ সতীশ কুমারকে
Next articleকোনও প্রতিশ্রুতি দেয়নি সরকার, অন্ধকারে শহিদ পরিবার