Inner Alert: মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠবৃত্তের অর্ধেকেই এখন দুকূল রাখার খেলায়

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজস্ব ঘনিষ্ঠবৃত্তের অর্ধেকের বেশি লোকজন এখন “দুকূল” রাখার খেলায় পা রেখেছেন। যা দল ও সরকারের ক্ষেত্রে আদৌ স্বাস্থ্যকর নয়। এর বিস্তারিত ক্রমশ প্রকাশ হয়ে পড়ছে। তিনি যাদের মুখ ভাবছেন, তাদের মুখোশ ক্রমশ সরছে। তুলনায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৃত্তটি এখনও দলের স্বার্থে দাঁতে দাঁত চেপে লড়ছে।

মুখ্যমন্ত্রীর আস্থাভাজনদের মধ্যে নেতা, মন্ত্রী, শিল্পপতি, আমলা, শিল্পীসহ প্রায় সবকটি শাখাতেই একই হাল।

নেতা ও মন্ত্রীদের মধ্যে যাঁরা তথাকথিত গুরুত্বপূর্ণ, তাঁদের মধ্যে সুব্রত বক্সি ও ফিরহাদ হাকিম ছাড়া বহু উইকেট নড়বড় করছে। একাধিক হেভিওয়েট মন্ত্রী দর্শনার্থীদের সামনেই সরকার সম্পর্কে যা তা বলছেন। এক বড় ব্যবসায়ীর পুত্র বিজয়া করতে এক নামি মন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলেন। মন্ত্রীই যেভাবে টেবিল চাপড়ে হেরে যাওয়ার কথা বলেছেন, তাতে অতিথি বিস্মিত। দুএকজন মন্ত্রী ঘনিষ্ঠদের বৈঠকে বেসুরো গাইছেন। বিধায়কদের অনেকেই, যাঁরা এতদিন সব ক্ষমতা পেয়েছেন, তাঁরা ভোটের মুখে যাত্রাপালার বিবেক সাজতে ব্যস্ত।

আরও পড়ুন:‘বঙ্গধ্বনি’ কর্মসূচিকে সামনে রেখে ভোট যুদ্ধে নামছে তৃণমূল

একই হাল আমলাদের। সাধারণ ফোন ছাড়া হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম ইত্যাদি যতরকম অ্যাপ হয় তাঁরা অনেকেই নামিয়ে নিয়েছেন। সেখানে খুল্লামখুল্লা নিন্দেমন্দ চলছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে যাকে নিয়ে আদিখ্যেতা করছেন, রাতে তিনিই বলছেন,” চাকরি করি বলে সব মানতে হয়।” মুখ্যমন্ত্রী বুঝতেও পারছেন না। যারা একসময়ে বাম নেতাদের গুড বুকে ছিলেন, তাঁদের অনেককে নিয়ে মাতামাতি করেও যে ফল হয়নি, সেটা স্পষ্ট। মুখ্যসচিব একা কতটা সামাল দেবেন?

সবচেয়ে উল্টো গাইছে বণিককুল। সরকারে আসার আগে কঠিন সময়ে যে শিল্পপতিরা বামরোষের ঝুঁকি নিয়েও মমতার শুভানুধ্যায়ী ছিলেন, সরকারে আসার পর তাঁরা ব্রাত্য। সিপিএমের সময়ে মঞ্চ আলো করে থাকা তারকাদের নিয়ে মেতেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁরা দুএকজন আজ বিজেপির সবচেয়ে বড় সমর্থক। একজন তো তাঁর ভিনরাজ্যের বাড়িতে বিজেপির গেটটুগেদার সেরে ফেলেছেন। এঁদের ভাষা শুনলে মুখ্যমন্ত্রী দুঃখ পাবেন। কিন্তু দুঃসময়ের বন্ধুদের যে অনেক দূরে ঠেলে দিয়েছেন তিনি। কে কী বলল আর কে কী ভাবল, ধান্দাবাজরা নেত্রীর পাশ থেকে বন্ধুদের সরিয়ে দলবদলু সুবিধেবাদীদের বসিয়ে দিয়েছে।

পুলিশের ক্ষেত্রেও এই কথা স্পষ্ট। এক অফিসার তো বিজেপির এক নেতাকে হিসেব দিয়েছেন কজন আইপিএস আর সরকারের কথা শুনবেন না।

মিডিয়াতেও তাই। মুখ্যমন্ত্রীর কাছের বলে পরিচিত একাধিক ব্যক্তি ও হাউস এখন অন্যপক্ষের সঙ্গে চা খেতে মরিয়া। এতদিন কোটি টাকার বিজ্ঞাপন নেওয়া একটি হাউসও এখন তৃণমূলের হয়ে বাড়তি কথা বলার ঝুঁকি নিচ্ছে না। নেত্রীর ছবি ছাপছে, কিন্তু ঠিক যাকে যখন আঘাত করার, সেটা ভুলেও করছে না। বরং সব পক্ষের ছবিই ছাপছে। মমতার হয়ে নিজেদের অপ্রিয় করার পথে একটি মিডিয়াও নেই। কলকাতা বা দিল্লি, বিজেপির সঙ্গে “মনের কথা” বলা শুরু হয়েছে। যত ভোট আসবে, সবাই নিরপেক্ষ হতে শুরু করছে। এখনও বিজ্ঞাপন চলছে তাই। নির্বাচনী বিধিতে বিজ্ঞাপন বন্ধ হলে শেষ কদিন নিরপেক্ষতা আরও বাড়বে।

যদিও এই গোটা বিষয়টির সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক নেই। জনগণ যদি মমতার সরকারের কাজ, স্কিমের সুফল এবং তৃণমূলের রাজনীতিকে সমর্থন করেন, তাহলে এইসব সুবিধেবাদী গিরগিটিরা কী করল কিছু এসে যায় না। মানুষের ভোটেই জিতবেন মমতা। কিন্তু এতদিন মমতার পাশে থেকে নিজেদের জাহির করার পর, বিভিন্নভাবে উপকৃত হওয়ার পর এখন বিজেপির একটু রমরমা হতেই ঘনিষ্ঠরাই যেভাবে উল্টোদিকে গিয়ে বিষ ঢালছেন, তাতে এটা স্পষ্ট যে ক্ষমতার হুজুগে লোক চেনেননি মমতা। আর এই সব লোকের আচরণে মানুষের উপর নেতিবাচক ধারণাও পড়ে।

তুলনায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেকে আড়ালে রেখে দিনরাত পরিশ্রম করছেন। তাঁর বৃত্ত থেকে এই দুকূল রাখার প্রবণতা প্রায় নেই। এঁরা প্রতিপক্ষের কাছে অপ্রিয় হয়েও মাটি কামড়ে লড়াই করছেন।

Previous article১৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবারের বাজার দর
Next articleকরোনার তৃতীয় ঢেউ দিল্লিতে! সর্বদল বৈঠকের ডাক কেজরিওয়ালের