বিজেপি বিরোধী বিমল-বিনয়, সঙ্গে গোর্খালিগ- জিএনএলএফ: পাহাড়ে বিজেপি নো-হোয়্যার! কিশোর সাহার কলম

কিশোর সাহা

যশোবন্ত সিং টু রাজু বিস্তা, ভায়া সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া- প্রতিশ্রুতির বন্যা বইলেও বাস্তবে কেন্দ্র দার্জিলিংয়ের উন্নতি করতে কখনও কোমর বেঁধে নামেনি। সে কথা এখন দার্জিলিঙের ম্যাল চৌরাস্তার শাক বিক্রেতা বৃদ্ধা সবিতা রাই, কালিম্পঙের ডম্বর চকের চাওয়ালা মনবাহাদুর তামাং অথবা কার্শিয়াঙের মোমোর কারিগর সুখদেব গুরুংরা আলাদাভাবে হলেও একই সুরে বলে থাকেন। তাতেই বিজেপি এখন পাহাড়ে খাদেহর তলায় চলে গিয়েছে বলে বাসিন্দারা অনেকেই মনে করছেন।

বছর তিনেক আগে বিনয় তামাংরা, হালে বিমল গুরুংও বিজেপির বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গের তীব্র অভিযোগ এনেছেন। তাই পাহাড়ে খাদের নীচে পড়ে যাওয়া বিজেপি এখন যেন তেন প্রকারেন জিএনএলএফ কিংবা গোর্খা লিগের মতো কোনও দলকে পাশে পেতে প্রায় সর্বস্ব পণ করেছে বলে পাহাড়বাসীদের অনেকের অনুমান। সে জন্যই বিজেপির একাংশ প্রয়োজনে রাজ্যপালকে কাজে লাগিয়ে কাজ হাসিলের জন্যও মরিয়া বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু পাহাড়ে চিড় ধরানো অত সস্তা নয়। সেটাই সম্প্রতি বুঝিয়ে দিয়েছে জিএনএলএফও।
জিএনএলএফ সূত্র অনুযায়ী, কদিন ধরেই বিজেপির একাধিক নেতার মাধ্যমে জিএনএলএফের কাছে জোটসঙ্গী হওয়ার প্রস্তাব গিয়েছে। যা শোনার পরে জিএনএলএফ প্রধান মন ঘিসিং, যিনি প্রয়াত সুবাস ঘিসিংয়ের ছেলে তিনি তা শুনেও কোনও মন্তব্য করেননি। পরে মন তাঁর ঘনিষ্ঠমহলের মাধ্যমে বিজেপি নেতাদের জানিয়ে দেন, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের তরফে দিল্লি কিংবা কলকাকতায় বসে দার্জিলিং পাহাড়ের বাসিন্দাদের যে দাবি তা মেনে নেওয়া অথবা স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের জন্য কী করা হবে তা আগে ঘোষণা করতে হবে। তার পরেই মন ঘিসিংরা বিজেপিকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করার কথা ভাবতে পারেন।

জিএনএলএফের কয়েকজন নেতা জানান, বিজেপির আশ্বাস তাঁরা অতীতেও শুনেছেন। এমনকী, যখন পাহাড়ে সুবাস ঘিসিং ষষ্ঠ তফসিল ভুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত করেছিলেন, সেই সময়ে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সুষমা স্বরাজ পাহাড়ে গিয়ে সব খতিয়ে দেখে ষষ্ঠ তফসিলে স্থায়ী সমাধান হবে কি না বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। ফলে, ঘিসিংয়ের যাবতীয় উদ্যোগ ভেস্তে গিয়েছিল। তাঁর বাবার পরিণতির কথা মন ঘিসিং ভোলেননি। বৃহ্স্পতিবার রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা হলেও জিএনএলএফের পক্ষ থেকে বিজেপির পক্ষে যায় এমন কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
বস্তুত, পাহাড়ে এখন বিজেপির হাল খুব খারাপ বললেও কম বলা হয়। বিজেপির দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তা তো কার সঙ্গে কোথায় ঘুরবেন, কোথায় সভা করবেন সেটা ভেবে পাচ্ছেন না বলে দলীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে। এতদিন পাহাড়ে বিমলপন্থীরা তাঁর সঙ্গে থাকায় অনায়াসে ঘোরাফেরা করেছেন। এখন পাহাড়ে বিমল-বিনয় পন্থীরা সকলেই বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন:বর্বরতা! স্ত্রীকে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে শরীর থেকে চামড়া তুলে নিল স্বামী!

জিএনএলএফও নিস্পৃহ বিজেপির সম্পর্কে। গোর্খা লিগও মদন তামাং হত্যা মামনলায় বিমল গুরুংকে চার্জশিটে না রাখায় আজও অখুশি। তাই বিজেপির দার্জিলিঙের পাহাড়ের জেলা সভাপতি মনোজ দেওয়ানও বেশ দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। কীভাবে পাহাড়ে ফের কার হাত ধরে খাদ থেকে ওঠার রাস্তা মিলবে তা নিয়েই রাতদিন এখন রাতদিন ভাবছেন মনোজ দেওয়ানরা।
কিন্তু, বিজেপির বাড়িয়ে দেওয়া হাত পাহাড়ের কোনও দল এখনই ধরবে তা আপাতত ভাবা যাচ্ছে না। ভোটের আগেই দার্জিলিঙে বিজেপিকে আপাতত প্রায় নো-হোয়ার করে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার রেশ সমতলে এতটুকুও পড়বে না তা কী হয়।

Previous articleবর্বরতা! স্ত্রীর গায়ে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে শরীর থেকে চামড়া তুলে নিল স্বামী!
Next articleচণ্ডীতলায় মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধারে চাঞ্চল্য