ভাববাচ্য কেন, সাহস থাকলে নাম বলুন কৈলাস: কুণাল ঘোষ

শনিবার মেদিনীপুরের সভা থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না করে “ভাইপো” সম্বোধনে একরাশ ব্যক্তিগত আক্রমণ ও অভিযোগ করছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়।

রবিবার তৃণমূল ভবনে এক সাংবাদিক বৈঠক থেকে কৈলাসকে ধুয়ে দিলেন প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন,” বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ তো বলেন তিনি ভাববাচ্যে কথা পছন্দ করেন না। বোঝেন না। স্পষ্ট কথা পছন্দ করেন। তাহলে কৈলাসবাবু নাম না করে ভাইপো ভাইপো করছেন কেন? আমি ওঁকে চ্যালেঞ্জ করছি, যদি সাহস থাকে, যার বিরুদ্ধে কুৎসা করছেন, সরাসরি তার নাম বলুন। হয় নির্দিষ্টভাবে নাম বলুন, অন্যথায় মিথ্যে গল্প রটানো বন্ধ করুন।”

কুণাল বলেন,” বিজেপি যেভাবে এক তরুণ বাঙালি যুবনেতার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন গুজবের গোয়েবেলসীয় কায়দা নিয়েছে, তাতে দুটো বিষয় স্পষ্ট। এক, বিজেপি তাকে ভয় পাচ্ছে। দুই, বাংলায় উন্নয়ন বা কাজের বিষয়ে বিজেপির কিছু বলার নেই। কুৎসাই তাদের হাতিয়ার।”

কুণাল বলেন,” রাজনীতিতে পেরে না উঠলে ব্যক্তিকুৎসা বিজেপি আর বামেদের পুরনো খেলা। প্রফুল্ল সেন স্টিফেন হাউস কিনেছেন বলে রটানো হয়েছিল। পরে দেখা গেল মিথ্যে। রাজীব গান্ধীর বিরুদ্ধে বোফর্স কেলেঙ্কারির অভিযোগ এনে মানুষকে ভুল বোঝানো হয়েছিল। সেটাও পরে দেখা গেল মিথ্যে। এখন বাংলায় রাজ্য সরকারের উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে, যুবনেতার বিরুদ্ধে ব্যক্তিকুৎসা চলছে।”

পরিবারসূত্রে রাজনীতি নিয়েও বিজেপিকে ধুয়ে দেন কুণাল। সর্বভারতীয় হিসেব দেন। কৈলাস থেকে মুকুল, তাঁদের ছেলেদের কথা বলেন। কুণাল বলেন,” বহু পেশাতেই পরিবারের পরের প্রজন্ম আসে। কেউ যদি ভালোবেসে এসে পারফর্ম করে, দল ও সংগঠনে মন দেয়, দোষ কোথায়? বেছে বেছে একজনকে নিয়ে কুৎসা কেন?”

শুভেন্দু অধিকারী সম্পর্কে একটিও বিরূপ মন্তব্য করেননি কুণাল। তবে মিহির গোস্বামীসহ কোনও কোনও বিধায়ক মুখ খোলার প্রশ্নে তিনি বলেন,” এতদিন দলে থেকে, পদে থেকে, সব ক্ষমতা ভোগ করে এখন যে দু’তিনজন বিবেকের কথা বলে প্রশ্ন তুলছেন, তাঁরা ব্যক্তিগত সুবিধাবাদী রাজনীতি করছেন। এতদিন না বলে ভোটের মুখে এসব নাটক কাপুরুষতার পরিচয়। মানুষ এসব দেখছেন। বিচার করবেন।”

কুণাল ঘোষ এদিন বলেন,” আমি যেদিন যন্ত্রণার কথা বলেছি, ষড়যন্ত্রের কথা বলেছি, সেই দিনও দলকে সদস্যপদের চাঁদা দিয়েছি। ইস্যুভিত্তিক প্রতিবাদ আর দলবদলুর খাতায় নাম লেখানো এক কাজ নয়। আমি তৃণমূলের কঠিন দিনের একজন সৈনিক। যাঁরা কুৎসিত চক্রান্ত করেছিলেন, তাঁরা আশি শতাংশই এখন বিজেপিতে।”

কৈলাস চিট ফাণ্ড ইস্যু আর দুর্নীতির কথা তোলায় তুলোধনা করেন কুণাল। তিনি বলেন,” চিট ফান্ড থেকে নারদা, আসল চক্রীদের দলে নিয়ে আড়াল করছে বিজেপি। আমি সারদা তদন্তে মুকুল রায়ের সঙ্গে যৌথ জেরা চেয়ে চিঠি দিয়েছি। নারদাতে সিআরপিসি ১৬১ অনুযায়ী আইপিএস মির্জার বয়ানের ভিত্তিতে মুকুল রায়কে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি করছি। কলকাতার মেয়রের চেয়ারে বসে যিনি ঘুষের টাকা গোনেন, তার বাড়িতে যে বিজেপির নেতারা ছোটেন, তারপর যেন বড় বড় কথা না বলেন। আর সিণ্ডকেটের প্রকাশ্য সমর্থক বিধায়ক এখন বিজেপির রাজ্য সম্পাদক। অথচ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে যাচ্ছে বিজেপি।”

কুণাল বলেন,” বহিরাগতদের এনে এখানকার গোষ্ঠীবাজি ঠেকিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে নজর ঘোরাতে চাইছে বিজেপি। বাংলার মন বোঝার কোনও নেতা বাংলায় নেই। মুকুল রায়ও বাংলা থেকে ভোটার হিসেবে নাম কাটিয়ে দিল্লি চলে গেছেন।”

অর্জুন সিং সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে কুণাল কিছু নথি দেখিয়ে বলেন,” একদিনে সব বলব না। তৃণমূল নিয়ে বাজে কথা বলার আগে অর্জুনবাবু বলুন নির্বাচনী হলফনামায় নিজের পরিবার ও স্ত্রী সম্পর্কে সব ঠিক বলেছিলেন কি না। এক মহিলার নথি কিন্তু অন্য কথা বলছে। এসব তোলা থাকল। ব্যক্তিকুৎসার রাজনীতি আমরা করি না। এসব বন্ধ করুন।”

আরও পড়ুন:মাদককাণ্ডে গ্রেফতার ভারতী সিংয়ের স্বামী হর্ষ লিম্বাচিয়া

দীর্ঘ সাত বছর পর তৃণমূল ভবনে আসেন কুণাল। সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে সাংবাদিক বৈঠকে কুণালের পাশে ছিলেন সাংসদ নাদিমুল হক। এদিন তৃণমূল ভবনে কুণালের সঙ্গে ছিলেন অধ্যাপক নেতা মণিশংকর মণ্ডল, বাংলা সিটিজেন্স ফোরামের উত্তর কলকাতার নেতা ভাস্কর চৌধুরী, যুবনেতা মৃত্যুঞ্জয় পাল প্রমুখ।

Previous articleমাদককাণ্ডে গ্রেফতার ভারতী সিংয়ের স্বামী হর্ষ লিম্বাচিয়া
Next articleঅস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হবে বিরুষ্কার সন্তান! বিরাটের কাছে আজব আবদার বর্ডারের