কাশ্মীরে ইসলামিক স্টাডিজের প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম পেহলুর শহরের শুভম

পেহলু খানের কথা মনে আছে? সালটা ২০১৭। লাল দাড়িওয়ালা এক বৃদ্ধ। চোখেমুখে মৃত্যুভয় ও প্রাণভিক্ষার আর্তি। যাকে ঘিরে ধরেছে একদল উন্মক্ত যুবক। একেবারেই ভোলার কথা নয়। গরু নিয়ে যাওয়ার অপরাধে ওই উন্মত্ত যুবকের দল(গো রক্ষক) সেদিন পিটিয়ে মেরেছিল পেহলুকে। এ ঠিক পরের বছর আকবর। একইভাবে গোরক্ষকদের গণপিটুনি প্রাণ কেড়ে নেয় এই যুবকেরও। শিউরে ওঠার মত এই দুটো ঘটনাই ঘটে রাজস্থানের অলওয়ার শহরে। দীর্ঘ বছর পর নৃশংসতার এ অভিশাপ কাটিয়ে এক অন্য ছবি উঠে এলো এই শহর থেকেই। তথাকথিত হিন্দু সংখ্যাগুরু এই শহর থেকে উঠে এল এক অন্য ভাবনা। তারই ফলস্বরূপ কাশ্মীর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে স্নাতকোত্তরের সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষায় শীর্ষ স্থান পেলেন শুভম।

নিজের শহরে নৃশংস দুই মৃত্যুর ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল শুভম নামের ওই যুবককে।তখনই ভেবেছিলেন ইসলাম ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করবেন তিনি। পরিবারের সদস্যদের বুঝিয়েছিলেন ইসলামের ইতিহাস সংস্কৃতি নিয়ে তার পড়াশোনার ইচ্ছার কথা। সেই শুভমই এবার গড়ে ফেললেন ইতিহাস। কাশ্মীর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে স্নাতকোত্তরের সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম হলেন তিনি। এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হামিদ নাসিম বলেন, এর আগে এই বিভাগে অ মুসলিম ছাত্রদের পেয়েছি আমরা। কিন্তু এই প্রথমবার প্রবেশিকা পরীক্ষায় এমন একজন প্রথম হলেন যিনি মুসলিম নয়। শুধু তাই নয়, কাশ্মীরের বাইরে এতদিন এই কৃতিত্ব কারও ছিল না বলে জানা গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে।

আরও পড়ুন:তদন্তের মাঝেই হঠাৎ বদলি ইডি কর্তা যোগেশ গুপ্তা

তবে এই কৃতিত্বের পর অবশ্য বেশ খোলামেলা ২১ বছর বয়সী শুভম। কলেজে পড়ার সময় থেকেই ইসলামের প্রতি আগ্রহ ছিল শুভমের। প্রথাগত পড়াশোনার বাইরে বেরিয়ে ইসলামের ইতিহাস নিয়ে তখন থেকেই শুরু হয় চর্চা। শুভমের কথায়, ‘সমাজে বিভেদ বাড়ছে। আমার মতে, আমরা যদি পরস্পরের সংস্কৃতিকে জানি, একমাত্র তবেই সামাজিক সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব। সেই কারণেই এই বিষয়টাকে বেছে নেওয়া’। তার দাবি, ইসলাম সম্পর্কে মানুষের মনে এক ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। ধর্মকে গোঁড়া ধর্ম হিসেবে পেশ করেছেন অনেকেই। তবে বিষয়টা তা নয়। শুভম আরও বলেন, বর্তমান সময়ে দেশজুড়ে যেভাবে ধর্মীয় মেরুকরণ বাড়ছে সেখানে দাঁড়িয়ে দুই ধর্মের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করতে চান তিনি। আপাতত স্নাতকোত্তর পড়ার জন্য রাজস্থান থেকে বহুদূরে কাশ্মীরে গিয়ে থাকতে হবে শুভম। তার ইচ্ছে ভবিষ্যতে সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষা দিয়ে আমলা হওয়ার।

Previous articleস্ত্রীর নির্যাতন-হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে স্বামীর মানববন্ধন
Next articleউত্তরবঙ্গে শাসকদলের আকচা-আকচি, আইটি অফিস খুলে ফেলল বিজেপি