দিদির বার্তা নিয়ে বাড়িতে রবি, ‘আপ্লুত’ মিহির

- কিশোর সাহা

দিদির ফোন না পেয়ে ফেসবুকে অভিমানী পোস্ট লেখার সাতদিনের মাথায় দিদির দূত হিসেবে কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক মিহির গোস্বামীর বাড়িতে হাজির হলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। মঙ্গলবার, সকাল ১০টা থেকে ১১টা ১০ পর্যন্ত দুজনের মধ্যে কথা হয়। দিদির বার্তা পৌঁছে দিয়ে কোচবিহার তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, মিহিরবাবু দলে ছিলেন, আছেন ও থাকবেন। আর মিহির গোস্বামী জানান, বহুদিন পরে রাজ্যের মন্ত্রী তথা ভ্রাতৃপ্রতিম রবি তাঁর বাড়িতে যাওয়ায় তিনি আপ্লুত।

যদিও মিহির গোস্বামী জানান, ফেসবুক পোস্ট ও কলকাতার নেতাদের একাংশের ভূমিকা নিয়ে একই অবস্থানে রয়েছেন তিনি। তবে রাজ্য নেতৃত্ব তথা দলনেত্রীর বার্তা পাওয়ার পরে যে সব কিছু গভীরভাবে তলিয়ে দেখেই পদক্ষেপ করবেন সেটা জানিয়ে দিলেন মিহিরবাবু। তাঁর কথায়, “চিন্তন ও মন্থনের পরে যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব তা জনসমক্ষে জানিয়ে দেব”।

আরও পড়ুন : তৃণমূল নেত্রীর প্রতি আনুগত্য, বৈঠকে জানালেন মালদহ জেলা পরিষদ সভাপতি

কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক মিহির গোস্বামী মাস দুয়েক ধরেই প্রকাশ্যে তৃণমূলের সমালোচনা করছেন। কিছুদিন আগে তাঁর বাড়িতে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলেন বিজেপির কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ অধিকারী। তার পরেই মিহিরবাবু বিজেপিতে যাবেন বলে জল্পনা তুঙ্গে। এমনকী, খোদ মিহিরবাবুও অমিত শাহ ডাকলে অবশ্যই দেখা করতে যাবেন বলে জানিয়ে দেন। তার পরে গত ৩০ অক্টোবর রবীন্দ্রনাথ ঘোষ মিহিরের বাড়িতে গিয়ে তাঁর দেখা পাননি। গত ১৭ নভেম্বর মিহির গোস্বামী ফেসবুকে লেখেন, তিনি কলকাতার নেতাদের প্রতি ক্ষোভ-অভিযোগ জানানোর পরে অনেকে তাঁকে ফোন করে সমর্থন করেছেন, অনেকে ভিন্ন দল থেকে যোগ দিতে অনুরোধ করেছেন, কিন্তু দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে একটা ফোন কিংবা কোনও সাড়া শব্দ না পেয়ে মিহিরবাবু হতাশা প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে কিছু নেতার রাতারাতি বাড়ি-গাড়ি, ধনী হওয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। দল আর দলনেত্রীর হাতে আছে কি না সেই নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

এই অবস্থায়, রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে ডেকে পাঠান তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব। তৃণমূল সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী বাঁকুড়া সফরের ফাঁকে রবীন্দ্রনাথ ঘোষের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। এর পরে সোমবার রাতে কোচবিহারে ফেরেন রবীন্দ্রনাথবাবু। রাতেই মিহির গোস্বামীকে ফোন করে জানান, দলনেত্রীর তরফে কিছু বার্তা রয়েছে তা জানানোর জন্য সকালে তাঁর বাড়িতে যেতে চান। মিহির সকাল ১০টা নাগাদ যেতে বলেন। সেই মতো বেলা ১০টায় রবি ঘোষ পৌঁছলে দুজনে প্রথমে বিজয়া ও দীপাবলির শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তারপর আলোচনা শুরু হয়।

আরও পড়ুন : “একসঙ্গে কাজ করতে হবে”- কীসের বার্তা শুভেন্দুর

প্রথমেই রবিবাবু দলনেত্রী কী বার্তা দিয়েছেন সে কথা জানিয়ে দেন। তারপরেই কথা এগিয়েছে। সূত্র অনুযায়ী, রবীন্দ্রনাথ ঘোষ তাঁর কিছু ক্ষোভ-দুঃখের কথা মিহিরের সঙ্গে শেয়ার করেছেন। শুধু তাই নয়, যে হেতু তিনি উচ্চ সুগারের রোগী তাই মিহিরবাবু আলাদা করে কম মিষ্টি দিয়ে বাড়িতে বানানো তক্তি খাইয়েছেন বলেও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, “যে বার্তা পৌঁছতে আমাকে বলা হয়েছিল তা দিয়েছি এবং আমার কথা হল মিহিরদা তৃণমূলে ছিলেন, আছেন। আমি চাই মিহিরদা তৃণমূলেই থাকুক”। মিহিরবাবু সব পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে ফেসবুকে লিখেছিলেন, সেই প্রশ্নে রবিবাবুর জবাব, মিহিরদা কোনও পদ থেকে পদত্যাগ করতে চেয়ে দলকে কোনও চিঠি দেননি, তাই তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোর প্রশ্নই ওঠে না।

Previous article“একসঙ্গে কাজ করতে হবে”- কীসের বার্তা শুভেন্দুর
Next articleরানু মণ্ডলের পর এবার বালুরঘাটের বনানী দত্ত