রেল স্টেশনে বিমান ধরা যায় না: পাহাড়ের সমস্যা নিয়ে মোর্চাকে কীসের ইঙ্গিত রাজ্যপালের?

কিশোর সাহা

দার্জিলিং সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য পাহাড়বাসীদের তৃণমূল নয়, বিজেপির উপরেই ভরসা রাখার পরামর্শ দিলেন কী রাজ্যপাল! বুধবার কালিম্পঙে বৌদ্ধ গুম্ফা দেখে বার হওয়ার পরে সাংবাদিক সম্মেলনে এই প্রসঙ্গে রাজ্যপালের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য থেকেই পাহাড়ের রাজনৈতিক মহলের অনেকেই বিস্মিত।

কারণ, পাহাড়ের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের প্রসঙ্গে রাজ্যপালের মন্তব্য। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, রেল স্টেশনে গিয়ে কখনও বিমান ধরা যায় না। যে কোনও সমস্যার সমাধান আছে। পাহাড়ের সমস্যারও সমাধান আছে। সে জন্য রাজ্য কী করতে পারে, কেন্দ্র কী করতে পারে, সংসদ কী করতে পারে সবই মাথায় রাখতে হবে। দেশের আইন ও সংবিধান মেনেই সেই সমস্যার সমাধান হতে পারে।

আরও পড়ুন:মিডিয়ার ঘাড়ে বন্দুক রেখে জিটিএ অডিট নিয়ে টুইটে খোঁচা রাজ্যপালের

প্রায় এক মাস ধরে রাজ্যপাল পাহাড়ে রয়েছেন। মাঝখানে কোচবিহার ও মুর্শিদাবাদে গেলেও ফের দার্জিলিংয়েই রয়েছেন। মঙ্গলবার কালিম্পঙে পৌঁছেছেন তিনি। বুধবার, কালিম্পংয়ে একটি বৌদ্ধ গুম্ফা দেখে তিনি বার হওয়ার পরে সাংবাদিকদের সামনে পাহাড় সমস্যার প্রসঙ্গে জানিয়ে দেন, রেল স্টেশনে গিয়ে বিমান ধরা যায় না।

এর পরেই পাহাড়ের রাজনৈতিক মহলের একাংশের আলোচনায় উঠে আসে যে, রাজ্যপাল হয়তো ঘুরিয়ে বলতে চাইছেন, পাহাড়ের মানুষ যদি তৃণমূল পরিচালত রাজ্য সরকারের সঙ্গে থাকে তা হলে তাঁদের দাবি পূরণের সম্ভাবনা নেই। তাই রাজ্যপাল তৃণমূলকে রেল স্টেশন ও কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন বিজেপিকে বিমানবন্দর হিসেবে দেখাতেই ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন কি না তা নিয়েও আলোচনা এখন পাহাড়ে তুঙ্গে উঠেছে।

কালিম্পঙের জন আন্দোলন পার্টির সভাপতি হরকাবাহাদুর ছেত্রী জানান, পর পর তিনবার দার্জিলিং থেকে বিজেপি প্রার্থীকে লোকসভার সাংসদ পদে জেতানো হয়েছে। তাঁরা সেখানে গিয়ে অনেকেই মন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু, পাহাড়ের সমস্যা মেটানোর কথা রাখেননি। হরকাবাহাদুরের প্রশ্ন, তিন দফায় বিজেপিকে পাহাড় থেকে জিতিয়ে পাহাড়ের মানুষ তাঁদের লক্ষ্যপূরণের কাছাকাছি পৌঁছতে পারেনি। হরকাবাহাদুর মতে, সেই তুলনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার দার্জিলিং পাহাড়ের জন্য যথাসাধ্য করার চেষ্টা করেছেন ও করছেন। তিনি এটাও জানান, রেল স্টেশনে বিমান পাওয়া যায় না বলে রাজ্যপাল কী বার্তা দিতে চেয়েছেন জানি না। তবে হরাকাবাহাদুর ছেত্রী এটা জানিয়ে দিতে চান, পাহাড়ের মানুপষ সহজ-সরল হলেও স্টেশন ও বিমানবন্দরের ফারাক এটুকু বুঝতে পারবেন না এমন বোকা নন। তাঁর সংযোজন, তিন দফায় প্রায় ১১ বছর ধরে বিমানবন্দরে থেকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে পাহাড়বাসীকে সেটাও সকলের মাথায় গেঁথে গিয়েছে।

বস্তুত, বিনয় তামাং, অনীত থাপারা আগেই তৃণমূলের সঙ্গে জোট বেঁধেছেন। এর পরে মাসখানেক আগে ফেরার মোর্চা নেতা বিমল গুরুংও তৃণমূলের হয়ে আগামী বিধানসভা ভোটে প্রচার চালাবেন বলে জানিয়ে কাজে নেমে পড়েছেন। সে দিক থেকে দেখলে দার্জিলিং পাহাড়ে বিজেপি প্রায় অস্তিত্বহীন হওয়ার মুখে। সবটাই পাহাড়ের স্থানীয় দলের উপরে নির্ভর করে এগোতে হয়েছে বিজেপিকে। এখন ৬ মাসের মধ্যে বিজেপির পাহাড়ে তো বটেই, নেপালি অধ্যুষিত তরাই ও ডুয়ার্সেও সংগঠন গড়ে তোলাটা বেশ কঠিন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারনা, তাই ঘুরিয়ে বিজেপির সঙ্গে থাকলে পাহাড়ের সমস্যার সমাধান হবে বলে প্রচার চালানো হচ্ছে।

Previous articleমিডিয়ার ঘাড়ে বন্দুক রেখে জিটিএ অডিট নিয়ে টুইটে খোঁচা রাজ্যপালের
Next articleফুরফুরে মেজাজে টিম ইস্টবেঙ্গল, অনুশীলনে বিশেষ ক‍্যামেরা রবি ফাউলারের