হাইকোর্টে ডাক্তার গড়াইয়ের বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার মুচলেকা রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিবের

এম আর বাঙ্গুরের প্রাক্তন ডিরেক্টর শ্যামাপদ গড়াইয়ের মামলায় হাইকোর্টে চরম লজ্জা ও অস্বস্তিতে রাজ্য সরকার৷

হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের এজলাসে দাঁড়িয়েই শ্যামাপদ গড়াইয়ের বকেয়া অর্থ দ্রুত মিটিয়ে দেবে রাজ্য, এই মর্মে মুচলেকা দিতে হল স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমকে।

শুনানি চলাকালীন বিচারপতি সৌমেন সেন স্বাস্থ্য সচিবের কাছে জানতে চান, ডাক্তার গড়াইয়ের পাওনা বকেয়া টাকা মেটানো হয়েছে কিনা। উত্তরে স্বাস্থ্য সচিব জানান, টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডাক্তার গড়াইয়ের আইনজীবী শামিম আহমেদ এবং অর্ক মাইতি তখনই আদালতে জানান, ” স্বাস্থ্য সচিব অসত্য বলছেন৷ আদৌ টাকা মেটানো হয়নি।” গত ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল আদালত নির্দেশ দেয়, যে অভিযোগের ভিত্তিতে ডাক্তার গড়াইয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত, অবসরের পর আর সেই তদন্ত চালানোর অধিকার রাজ্যের থাকে না। এরপরই অবিলম্বে পেনশন চালু সহ সমস্ত বকেয়া ৮ শতাংশ সুদ সমেত মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় রাজ্যকে। রাজ্য সেই নির্দেশ পালন করেনি বলেই এদিন ওই মামলায় বেনজির মুচলেকা দেওয়ার লজ্জায় পড়তে হলো রাজ্যকে।

ঘটনার সূত্রপাত ২০১১ সালে, রাজ্যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর। সেই সময় হাসপাতালগুলি আচমকা- পরিদর্শন শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১১ সালের ২৬ মে বাঙ্গুর হাসপাতালে যান মুখ্যমন্ত্রী। ব্যস্ত সময়ে দলবল নিয়ে আউটডোরে ঢুকে পড়ায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ায় আপত্তি জানান তৎকালীন ওই হাসপাতালের তৎকালীন ডিরেক্টর শ্যামাপদ গড়াই।

তখন মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে প্রশ্ন করেন, এতে অসুবিধা কোথায়? উত্তরে ডাক্তার গড়াই জানান, মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী সবসময়ই হাসপাতালে আসতে পারেন৷ কিন্তু তাঁর সঙ্গে একগাদা লোক হাসপাতালে ঢুকে পড়লে চিকিৎসা পরিষেবায় সমস্যা হয়।

ঠিক তার পরের দিন ডাক্তার গড়াইকে সচিবালয়ে দেখা করতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ ডাক্তার গড়াই জানান, তাঁর কয়েকটি জরুরি অপারেশন আছে, সেগুলি ছেড়ে আসা সম্ভব নয়। অপারেশন শেষ করে তিনি দেখা করতে যাবেন৷ ওই সন্ধ্যাতেই বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের প্রধানদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেও হাজির হতে পারেননি ডাক্তার গড়াই। সেই রাতেই তাঁকে সাসপেনশনের চিঠি ধরানো হয়। সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় বিভাগীয় তদন্ত। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ডাক্তার পার্থজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ তদন্তকারী চিকিৎসক নিজেই অবসর গ্রহণ করেন৷ তদন্ত রিপোর্টের অপেক্ষায় থাকেন ডাক্তার গড়াই। এদিকে তাঁরও অবসরের বয়স পেরিয়ে গেছে ততদিনে। সাসপেণ্ড থাকার কারনে ২০১১ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত পূর্ণ বেতনও তিনি পাননি। একই কারনে অবসরের পর চালু হয়নি তাঁর পেনশনও।

আরও পড়ুন:ভার্চুয়াল নয়, ভর্তি থিয়েটারেই বসছে অস্কারের আসর

নিরুপায় হয়ে বকেয়া পাওনার দাবিতে তিনি দ্বারস্থ হন SAT বা স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালের। সেখানেও সুরাহা হয়না৷ হাইকোর্টে যান ডাক্তার গড়াই। তাঁর হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী শামিম আহমেদ। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত SAT-এর চূড়ান্ত রায় ঘোষণার আগে হাইকোর্টে রুজু করা এই মামলা নিয়ে আপত্তি জানান। আদালত রাজ্যের বক্তব্য তলব করে৷ রাজ্যের তরফে সময় চাওয়া হয়। ফলে শুনানি ও রায়দানও পিছোতে থাকে।
অবশেষে চূড়ান্ত শুনানি হয় বুধবার, সেখানেই কার্যত মুখ পুড়েছে রাজ্যের ৷ বকেয়া মিটিয়ে দেবে বলে মুচলেকাও দিতে হয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিবকে৷

Previous articleভার্চুয়াল নয়, ভর্তি থিয়েটারেই বসছে অস্কারের আসর
Next articleরাহুল গান্ধীকে ভুল প্রমান করতে গিয়ে নিজেই ফাঁসলেন বিজেপির আইটি সেলের প্রধান