রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, উত্তরকন্যায় পৌঁছনোর আগেই সমাপ্ত বিজেপির অভিযান

কিশোর সাহা

দুপুর থেকে বিকেল অবধি কয়েক দফায় পুলিশের সঙ্গে ধুন্ধুমার সংঘর্ষের পরে বিজেপির উত্তরকন্যা অভিযান শেষ হয়েছে। যতদূর শোনা যাচ্ছে, ওই অভিযান-আন্দোলনে যোগ দিতে আসা একজন বিজেপি কর্মী ফুলেন রায়ের (৫০) মৃত্যু হয়েছে। তবে পুলিশের তরফে রাত অবধি ওই মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কোনও বিবৃতি মেলেনি। তবে শেষ অবধি উত্তরকন্যায় পৌঁছতে পারেননি বিজেপির অভিযানকারীরা। পুলিশ জানায় বিনা অনুমতিতে মিছিল করায় ১৪৪ ধারা জারি হয়েছিল। তাই কাউকে উত্তরকন্যার কাছে এগোতে দেওয়া হয়নি।

পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধের সময়ে তাঁর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা। বিজেপির দাবি, পুলিশের লাঠি, রবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের সেলের আঘাতেই ফুলেনের মৃত্যু হয়েছে। কয়েক দফায় সংঘর্ষের জেরে পুলিশের অন্তত ৪০ জন জখম হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে মহিলা পুলিশ ৭ জন। বিজেপিরও ১৫ জন মহিলা সহ ৫২ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ গোলমালে জড়িত সন্দেহে ২ জন মহিলা সহ অন্তত ২০ জনকে আটক করেছে।

অভিযোগ, পুলিশের ব্যারিকেডে বাধা পাওয়ার পরে অভিযানকারীরা জলপাইমোড়ের একটি ট্রাফিক পোস্টে হামলা চালিয়ে আসবাবপত্র, নথি রাস্তায় ফেলে পুড়িয়ে দিয়েছে। তিনবাতি মোড়ে সরকারি অতিথি নিবাস পথসাথীতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশের গাড়ি, তাঁদের ভাড়া করে আনা বাসগুলিতেও ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে।

অবশেষে সন্ধ্যার মুখে ৫টা নাগাদ সব অভিযানকারীরা নিরস্ত হলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। কিন্তু, তিনবাতি মোড়, জলপাইমোড়, নৌকাঘাট এলাকার বাতাস তখনও কাঁদানে গ্যাসের কারণে ভারী হয়ে রয়েছে। ঝাঁঝাল গ্যাসের কারণে এলাকার অনেকেই দোকানপাট বন্ধ করে দেন। ওই এলাকায় রাস্তার ধারের বাসিন্দারাও কাঁদানের গ্যাসের জন্য অনেকে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েন।

সন্ধ্যার মুখে শহরের সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আসরে নামেন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার এ ত্রিপুরারি। পুলিশ কমিশনার প্রতিটি এলাকায় গিয়ে ক্ষয়ক্ষতির বহর দেখেন. রাতেই তা নিয়ে রাজ্য পুলিশের সদর দফতরে রিপোর্ট পাঠানো হবে বলে সূত্রের খবর। শিলিগুড়ির এক পুলিশ কর্তা জানান, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর, আগুন লাগানোর অভিযোগে মামলা দায়ের করা হবে।

বিজেপির এদিনের অভিযানে যোগ দিতে উপস্থিত হয়েছিলেন কৈলাশ বিজয়বর্গী, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়, যুব মোর্চার কেন্দ্রীয় সভাপতি তেজস্বী সূর্য, উত্তরবঙ্গের বিজেপির সব সাংসদ ও বিধায়ক। রাজ্যের তরফে উত্তরবঙ্গের পর্যবেক্ষক সায়ন্তন বসু। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবু জানান, পুলিশকে দিয়ে যেভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে তা মানুষ দেখছেন। তাঁর দাবি, আগামী বিধানসভা ভোটে সব জবাব নেবে মানুষ।

তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিজেপির বিরুদ্ধে উত্তরবঙ্গে অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগ এনেছেন। তিনি জানান, তৃণমূল জমানায় উত্তরবঙ্গে যে উন্নতি হয়েছে তা অতীতে হয়নি। এমনকী, উত্তরকন্যাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন। ডুয়ার্সকন্যাও হয়েছে ডুয়ার্সে। পাহাড়ে শান্তি ফিরেছে। কিন্তু, বিজেপির স্বরূপ দেখে পাহাড় মুখ ফিরিয়েছে। সমতলের মানুষও বিজেপির আন্দোলনের নামে নাটক ও অশান্তি ছড়ানো মেনে নেবেন না বলে পার্থবাবুর দাবি।

আরও পড়ুন- উত্তরকন্যা অভিযানে এক কর্মীর মৃত্যু, কাঁদানে গ্যাসে অসুস্থ কৈলাসও! দাবি বিজেপির

Previous articleউত্তরকন্যা অভিযানে এক কর্মীর মৃত্যু, কাঁদানে গ্যাসে অসুস্থ কৈলাসও! দাবি বিজেপির
Next articleকৃষকদের ভারত বনধের আগে সব রাজ্যকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ‘অ্যাডভাইজারি’, শুরু বিতর্ক