কৃষকদের ভারত বনধের আগে সব রাজ্যকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ‘অ্যাডভাইজারি’, শুরু বিতর্ক

কেন্দ্রের আনা কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে টানা বারোদিন ধরে দিল্লি ঘেরাও করে রেখেছেন লক্ষাধিক প্রতিবাদী কৃষক। দেশে বিদেশে এই আন্দোলনকে সমর্থন করছেন বহু মানুষ। দেশের বিরোধী দলগুলিও কৃষক আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছে। সমস্যা মেটাতে কেন্দ্রের সঙ্গে ৪০ টি কৃষক সংগঠনের আলোচনা এখনও নিষ্ফলা। প্রতিবাদ জোরদার করতে আগামিকাল মঙ্গলবার ভারত বনধ ডেকেছেন কৃষকরা। তার আগে নজিরবিহীনভাবে ভারত বনধ নিয়ে রাজ্য সরকারগুলিকে ‘অ্যাডভাইজারি’ বা বিশেষ নির্দেশিকা পাঠালো কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কৃষকদের ডাকা বনধ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দফতরের এই অতি তৎপরতা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।

সোমবার রাজ্য সরকারগুলিকে পাঠানো ওই অ্যাডভাইজরিতে বলা হয়েছে, আগামিকাল ভারত বনধ উপলক্ষে সর্বত্র নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। বনধকে কেন্দ্র করে কোথাও যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এবং শান্তি বজায় থাকে, তা সুনিশ্চিত করতে বলা হয়েছে এই নির্দেশিকায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এমন নির্দেশিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এর কারণ, অতীতে কোনও সংগঠনের বনধ বা ধর্মঘট নিয়ে এমন অ্যাডভাইজরি পাঠায়নি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। হঠাৎ কৃষকদের ডাকা ভারত বনধের আগে কেন্দ্রের এই অতি তৎপরতায় সন্দিহান বিরোধী দলগুলি। ইতিমধ্যেই কৃষকদের দাবিকে সমর্থন করেছে কংগ্রেস, এনসিপি, তৃণমূল, আরজেডি, আম আদমি পার্টি, টিআরএস, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা সহ একাধিক বিরোধী দল। কানাডার প্রধানমন্ত্রী এই আন্দোলনের সমর্থনে বিবৃতি দিয়েছেন। কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে বলেছে রাষ্ট্রসংঘও। কৃষকদের দাবির সমর্থনে ফাটল এনডিএতেও। ফলে যথেষ্ট চাপের মুখে মোদি সরকার। কৃষকরা দাবি করেছেন, সংশোধনী নয়, সংসদের অধিবেশন ডেকে পুরো আইন বাতিল করতে হবে। যদিও বিদ্রোহী কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে আন্দোলন থেকে নিরস্ত করার চেষ্টায় নেমেছে কেন্দ্র। পাঁচবার কৃষক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। কিন্তু সমাধান সূত্র অধরা। উল্টে, কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে দেশজুড়ে বনধের ডাক দিয়েছে কৃষক সংগঠনগুলি। কাল বনধ সর্বাত্মক সফল হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। আর তাই অ্যাডভাইজারি পাঠিয়ে কেন্দ্র চাপ তৈরি করতে চায় বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। মোদি সরকারের যে কৃষি আইনকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে কৃতিত্ব দাবি করছিল কেন্দ্র, তার প্রতিবাদে ভারত বনধ সফল হলে তা কেন্দ্রের কাছে প্রবল অস্বস্তির কারণ হবে। তাই আগেভাগে আসরে নেমেছে অমিত শাহের হাতে থাকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কাল ভারত বনধে কৃষকরা যাতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতে না পারে সেজন্য কোভিড স্বাস্থ্যবিধি ও মহামারি আইনের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের অ্যাডভাইজারিতে। রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মুখ্যসচিবদের কাছে এই অ্যাডভাইজরি পাঠিয়েছেন কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র সচিব। বলা হয়েছে, বনধের দিন কোনও মিছিল, অবস্থান-বিক্ষোভ, জমায়েত হলে যাতে শারীরিক দুরত্ব মেনে চলা হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুন- রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, উত্তরকন্যায় পৌঁছনোর আগেই সমাপ্ত বিজেপির অভিযান

 

Previous articleরক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, উত্তরকন্যায় পৌঁছনোর আগেই সমাপ্ত বিজেপির অভিযান
Next articleমুখ্যমন্ত্রীর জনসভা থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু তৃণমূল কর্মীর, আহত কমপক্ষে ২০