ইতিহাস : অনার্স গ্র্যাজুয়েট শবর কন্যা রমনিতা

যে জাতি এতদিন ছিল পায়ের তলায়, আজ তাঁরা মাথা উচু করে দাঁড়াচ্ছে। পড়াশোনার জগতে আস্তে আস্তে উঠে আসছে শবর জাতি। এর আগে, ১৯৮৫ সালে রাজ্যের প্রথম আদিবাসী মহিলা হিসাবে, স্নাতক হয়েছিলেন মেদিনীপুরের ‘লোধা মেয়ে’ চুনি কোটাল। সরকারি চাকরিও পেয়েছিলেন। কিন্তু লোধার প্রজাতির নিচু মেয়ের, এতটা এগিয়ে আসা সহ্য হয়নি অনেকেরই। দিনের পর দিন ব্যঙ্গ, টিটকিরি সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন চুনি।

কিন্তু দিন বদলেছে। ধীরে ধীরে মূল স্রোতে ফিরছেন শবররা। স্কুল-কলেজেও যাচ্ছেন অনেকে। তারই মধ্যে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে, ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে রাজ্যে ইতিহাসই গড়লেন পুরুলিয়ার বরাবাজারের ফুলঝোর গ্রামের মেয়ে রমনিতা শবর। খেড়িয়া শবরদের মহিলাদের মধ্যে প্রথম স্নাতক হলেন রমনিতা। তিনি বরাবাজার লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের পটমদা ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী ছিলেন। তাঁর এই সাফল্যে খুবই খুশি শবর সম্প্রদায়।

রমনিতার মা বেহুলা শবর জানিয়েছেন, চান্ডিলের চৌকা গ্রামে থেকে সেখানকার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহায়তায় রমনিতা মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়েছে। পুরুলিয়ার কস্তুরবা হিন্দি বালিকা বিদ্যালয়ে পড়েছে হস্টেলে থেকে। তাঁর কোনও গৃহশিক্ষক ছিল না। ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে চায় রমনিতা। তাই আগামী দিনে পুরুলিয়ার সিধো কানহো বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পড়ার ইচ্ছা আছে তাঁর। কিন্তু খরচার কথা ভেবে এগোনোর সাহস পাচ্ছে না পরিবারটি।

আরও পড়ুন : ২৫০ দিনে যাদবপুরে বামেদের শ্রমজীবী ক্যান্টিন, কৃষকদের পাশে থাকার বার্তা

এই বিষয়ে এগিয়ে এসেছেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, রমনিতা পড়তে চাইলে, তাঁকে সবরকম সাহায্য করা হবে। সিধো- কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নচিকেতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ইতিহাসের স্নাতকোত্তরের ভর্তি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে ছাত্রীটি আবেদন করলে তা আলাদা করে দেখা হবে।

ইতিপূর্বে দু’-তিন জন শবর তরুণী কলেজে ভর্তি হলেও তাঁরা নানা কারণে পড়া শেষ করতে পারেননি। লোধা-শবরদের মধ্যে প্রথম মহিলা হিসেবে স্নাতক হয়েছিলেন চুনী কোটাল। তার কয়েক দশক পরে খেড়িয়া শবরদের মহিলাদের মধ্যে প্রথম স্নাতক হলেন রমনিতা।

Previous articleশীতে পায়ে মোজা পড়লে দুর্গন্ধ হয় ? জেনে নিন সহজ কিছু টোটকা
Next articleশুরু হল রাজ‍্য টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতা