ট্রাক্টরে চেপে ৬ মাসের রসদ নিয়ে বিক্ষোভে যোগ কয়েক হাজার কৃষকের

দুপক্ষই অনড়। সরকার বলছে, কৃষি আইন বাতিল হবে না, আর কৃষকরা বলছে আইন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
দিন যত গড়াচ্ছে, তত তীব্র হচ্ছে আন্দোলনের মেজাজ। এবার কৃষক বিক্ষোভকে আরও শক্তি জোগাতে পাঞ্জাবের একাধিক জেলা থেকে প্রায় ৫০ হাজার কৃষক আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে। বিক্ষোভে আনা হচ্ছে ১২০০ ট্রাক্টর। তার মধ্যে মজুত রয়েছে আন্দোলনকারী কৃষকদের প্রায় ছ’মাসের খাদ্যসামগ্রী। এবিষয়ে মজদুর সংঘর্ষ কমিটির প্রধান সতনাম সিং পান্নুর দাবি, অধিকার আদায়ের জন্য দিল্লিতে মৃত্যুবরণ করতে রাজি তাঁরা। কিন্তু আইন বাতিলের দাবি থেকে পিছু হঠবেন না। দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত দিল্লির এক ইঞ্চি জমিও ছাড়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি তাঁদের। জানা গিয়েছে, পাঞ্জাবের ফিরোজপুর, ফজিলকা, আবোহার, ফরিদকোট ও মোগা থেকে ৫০ হাজার কৃষক দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। ১২০০ ট্রাক্টরে করে দিল্লি যাচ্ছেন তাঁরা।প্রতিটি ট্রাক্টরে ভর্তি রয়েছে ৬ মাসের খাদ্যসামগ্রী। এই নিয়ে ১৭ দিনে পড়ল কৃষক বিক্ষোভ। টানা কৃষক বিক্ষোভে উত্তাল রাজধানী দিল্লি। কার্যত অবরুদ্ধ দিল্লি প্রবেশের সব রাস্তা। কেন্দ্রের সঙ্গে একাধিক বৈঠকেও মেলেনি সমাধান সূত্র। কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর ও খাদ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের নতুন অভিযোগ, কৃষক বিক্ষোভের পিছনে কোন দল রয়েছে, তা তদন্ত করে দেখুক মিডিয়া। যদিও তাঁদের বিক্ষোভে কোনও রাজনৈতিক উদ্দ্যেশ্য ও পটভূমিকা নেই বলে সরাসরি জানিয়েছেন কৃষকরা। তাঁরা বলেছেন, এই বিদ্রোহ কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের মদতে হচ্ছে না। এটা কৃষকদের নিজেদের অধিকার রক্ষার স্বার্থে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন।

শনিবারই সতেরোদিনে পড়েছে কৃষি আইনের প্রতিবাদে কৃষকদের আন্দোলন। দিল্লির রাজপথে লাগাতার ধরনা, বিক্ষোভের পাশাপাশি আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিয়েছেন কৃষকরা। নতুন তিনটি কৃষি আইনের যৌক্তিকতা চ্যালেঞ্জ করে সরকারের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে ভারতীয় কিষান ইউনিয়ন (BKU)। একইসঙ্গে কেন্দ্রের উদ্দেশে কৃষকদের বার্তা, সংশোধন নয়, আইন পুরোপুরি বাতিল করতে হবে। নতুবা রাজপথে সংঘাত ও দিল্লি ঘেরাও অভিযান জারি থাকবে। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে অবশ্য পাল্টা অনড় মনোভাব নিয়ে বার্তা দেওয়া হয়েছে, পুরো আইন বাতিল করার প্রশ্নই নেই। তবে কৃষকদের আপত্তির বিষয়গুলি খতিয়ে দেখে কয়েকটি সংশোধনী আনতে রাজি সরকার। কৃষি আইন নিয়ে দুপক্ষের এই অনমনীয় অবস্থানে বাড়ছে জটিলতা। কৃষক সংগঠনগুলি ইতিমধ্যেই আন্দোলন আরও তীব্র করার কথা বলে ১৪ ডিসেম্বর দেশজুড়ে সমস্ত জেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। দিল্লির প্রবল ঠাণ্ডায় কৃষকরা সীমান্ত এলাকাগুলিতে লাগাতার অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন। এখনও পর্যন্ত অসুস্থতা, দুর্ঘটনা ও প্রবল ঠাণ্ডায় ১৫ জন আন্দোলনকারী কৃষকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানোয়েছে কৃষক সংগঠনগুলি। সরকার কর্পোরেট লবির স্বার্থরক্ষায় কৃষকদের প্রতি অসংবেদনশীল মনোভাব নিচ্ছে বলে দাবি করেছে তারা। কৃষক সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশ সীমান্তের পাশাপাশি জয়পুর থেকে দিল্লিগামী রাস্তাও এবার অচল করে দেওয়া হবে। সরকারের কর্পোরেট-প্রীতির প্রতিবাদ জানাতে আদানি- আম্বানি শিল্পগোষ্ঠীর পণ্য ও পরিষেবা বয়কটের ডাক দিয়েছে কয়েকটি কৃষক সংগঠন।

 

Previous article‘কিছু মন্ত্রী লোভী, চাহিদার কোনও শেষ নেই’, সাংসদ কল্যাণের পোস্ট ঘিরে তুমুল বিতর্ক
Next articleফিফা বর্ষসেরার দৌড়ে ফের মেসি-রোনাল্ডো