কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের গুঁতোয় আজ গণভোটের সিদ্ধান্ত থেকে পিছোলেন বিপ্লব, ত্রিপুরা জটে জেরবার বিজেপি

কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের গুঁতোয় শেষ পর্যন্ত গণভোটের নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হলেন ত্রিপুরার (Tripura) মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব ( Biplab Deb)। বিজেপি সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা এবং দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক বিনোদ সোনকর তাঁকে জানিয়েছেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থায় ভোটে জিতে সংবিধানের শপথ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন বিপ্লব। এখন আবেগের বশে এসব অসাংবিধানিক কাজকর্ম করা যাবে না। গণভোটে মুখ্যমন্ত্রী পরিবর্তনের বিধান নেই সংবিধানে। দিল্লির নেতাদের কড়া বার্তার পরই অভিনব গণভোটের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী (chief minister of Tripura)। যদিও এর আগে রাজ্যবাসীর উদ্দেশে বিপ্লব বলেছিলেন, আমাকে আপনারা মুখ্যমন্ত্রী পদে দেখতে চান নাকি আপনারা চান আমি পদ থেকে সরে যাই? আপনারা যা চান আমি তাই করব। কারণ ত্রিপুরাবাসীর মতামতই আমার কাছে শিরোধার্য। ১৩ ডিসেম্বর রবিবার আগরতলার আস্তাবল ময়দানে প্রকাশ্য জনসভায় দাঁড়িয়ে আমি রাজ্যবাসীর মতামত নেব। মুখ্যমন্ত্রীর এই বার্তার পরেই হইচই শুরু হয়ে যায়। আসরে নামে বিজেপির (BJP) কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিবৃত্ত করা হয় মুখ্যমন্ত্রীকে। তবে এই ঘটনার পর বিপ্লব দেবের কাণ্ডকারখানায় দলের ভাবমূর্তি ধ্বংস হচ্ছে বলে ফের ময়দানে নেমেছে দলে তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর লোকেরা। এদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কংগ্রেস ও তৃণমূল ঘুরে বিজেপিতে আসা নেতা সুদীপ রায়বর্মন। বিপ্লবকে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে এবং জনসমক্ষে ‘অযোগ্য’ প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন তাঁরা। প্রথমদিকে বিপ্লবের প্রতি পূর্ণ সহানুভূতি থাকলেও তাঁর এই গণভোটের ঘোষণা নিয়ে এবার তাঁর উপরেও চটেছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ফলে দলের অভ্যন্তরে নানা কোন্দলে আন্দোলিত উত্তর পূর্ব ভারতের ছোট্ট রাজ্যটি।

দীর্ঘদিনের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে মাত্র আড়াই বছর হল ত্রিপুরায় সরকার গড়েছে বিজেপি। আর এই কম সময়ের মধ্যেই বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আর অন্তর্কলহে জেরবার ত্রিপুরার মানুষ। বামফ্রন্ট বা কংগ্রেসই শুধু নয়, খোদ রাজ্য বিজেপির একটা বড় অংশ চায় এক্ষুনি মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার থেকে সরানো হোক বিপ্লব দেবকে। কারণ তিনি এই পদের অনুপযুক্ত। কিন্তু রাজ্য বিজেপি নেতাদের এই দাবিকে এতদিন পাত্তা দেননি জেপি নাড্ডা, অমিত শাহরা। তাই ক্ষুব্ধ বিপ্লব বিরোধীরা এখন রাজ্যের মধ্যে প্রকাশ্যে মুখ্যমন্ত্রীর অপসারণ দাবি করে আওয়াজ তুলছেন। সম্প্রতি বিজেপির নতুন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক বিনোদ সোনকর আগরতলায় বৈঠক করছিলেন। সেই সময় বৈঠকের বাইরে বিজেপির একাংশ বিপ্লব অপসারণের দাবিতে শ্লোগান দিতে শুরু করেন। এই ঘটনায় প্রবলভাবে মুখ পুড়েছে বিজেপির। ঘটনা অস্বীকার করেও চেপে রাখা যায়নি। এরপরই মুখ বাঁচাতে গণ-রায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত বিপ্লব দেবের। শেষমেশ নাড্ডাদের চাপে গণভোটের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন বিপ্লব। তাঁর পক্ষে এই মুহূর্তে স্বস্তি একটাই। তা হল, ত্রিপুরা বিধানসভার ৩৬ জন বিজেপি বিধায়কের মধ্যে প্রায় ২৫ জন তাঁর সঙ্গে দেখা করে বলে এসেছেন বিপ্লবকেই তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী চান। যদিও তাতেও আশা ছাড়ছে না বিক্ষুব্ধরা। জনসমক্ষে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবকে হেয় প্রতিপন্ন করতে এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে তাঁকে অযোগ্য প্রমাণের জন্য যথারীতি তাঁরা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

আরও পড়ুন-রাজীবের সঙ্গে বৈঠকে পার্থ, রয়েছেন পিকেও, সমস্যা মিটে যাওয়ার ইঙ্গিত

Previous articleদত্তক নেওয়ার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেদন রতন টাটার
Next articleজাতীয় সঙ্গীত বদলাতে চান স্বামী ! কী বললেন সুখেন্দুশেখর?