ব্যবসা বাঁচাতে বজরং দলের প্রতি সুর নরম জুকারবার্গের ফেসবুকের

সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থা ফেসবুকের(Facebook) বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ ভারতে নতুন নয়। এ নিয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েনও কিছু কম হয়নি। প্রবল চাপের মুখে পড়ে ফেসবুকের হিংসাত্মক মন্তব্যের(Hate Speech) ওপর নজরদারি চালানো কমিটির তরফে একাধিক সংগঠনকে বিপদজনক হিসেবে দেগে দেওয়া হলেও, রাজনৈতিক চাপে ভারতে ফেসবুকের যে হাত-পা বাঁধা তার প্রমাণ আরও একবার মিলল হাতেনাতে। সম্প্রতি দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের(The Wall Street journal) তরফে রবিবার যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে দাবি করা হয়েছে, কর্মী সুরক্ষা ও ব্যবসা বাঁচাতে ভারতের সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত হিংসা ও উস্কানি মূলক মন্তব্য চালিয়ে যাওয়া বজরং দলকে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের গতিবিধি চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অথচ বিপদজনক সংগঠন হিসেবে বজরং দলকে আগেই নিজেদের হিটলিস্টে রেখেছিল ফেসবুক।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তরফে প্রকাশিত প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ভারতে শাসক দল বিজেপির সঙ্গে সম্পর্কের কারণে ফেসবুক দক্ষিণপন্থী সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে কোনওরকম কড়া পদক্ষেপ নিতে ভয় পায়। বজরং দলের বিরুদ্ধে ফেসবুক শক্ত মনোভাব দেখালে ভারতে সংস্থার ব্যাবসায়িক সম্ভাবনা এবং কর্মচারী দুটির ক্ষেত্রেই বিপদ হতে পারে। নিজেদের বক্তব্যের সমর্থনে চলতি বছরের এক ঘটনা প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয় ওই সংবাদমাধ্যমের তরফ, যেখানে বলা হয়েছে চলতি বছরে শাসক দলের এক নেতার মুসলিম বিরোধী মন্তব্যকে সমর্থন করতে দেখা যায় ফেসবুকের আধিকারিক আঁখি দাসকে। ফেসবুকে এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার কিছুদিন পরেই ওই নেতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয় কতৃপক্ষ। যদিও নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে মার্ক জুকারবাগের সংস্থা। যদিও এটাও জানানো হয় সোশ্যাল মিডিয়ায় হিংসা রুখতে আরও কড়া হতে হবে তাদের। এর কিছুদিন পর আঁখি দাস ফেসবুক থেকে ইস্তফা দেন।

যুক্তি সাজিয়ে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের তরফে সাম্প্রতিক আরও এক তথ্য প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। যেখানে বজরং দলের একটি হিংসাত্মক ভিডিওতে ফেসবুকের নিরবতার উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে জুন মাসে দিল্লির পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে একটি চার্চের ওপর হামলা চালানো হয় এবং এক ব্যক্তি সেই হামলার দায় স্বীকার করে। এই ভিডিওটি ২.৫ লক্ষ বার দেখা হয়েছে ফেসবুকে। তবে এই নীরবতার কারণ হিসেবে ফেসবুকের অন্তরীণ রিপোর্ট বলছে, ‘ভারতে শাসক দলে থাকা হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক নেতৃত্ব বজরং দলের উপর কোনওরকম পদক্ষেপ ফেসবুক নিতে চাইলে তা ফেসবুকের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠবে। এক্ষেত্রে ফেসবুক কর্মীদের ওপর শারীরিক আক্রমণ অথবা কোম্পানি যে সমস্ত সুবিধা পায় তার ওপর প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে।

আরও পড়ুন:১৯ জন আইপিএসের নামের তালিকা প্রকাশ রাজ্যপালের

এর পাশাপাশি সম্প্রতি ফেসবুক কর্মীদের সংগঠনের তরফে একটি চিঠি ফেসবুকের নিজস্ব আলোচনার গ্রুপে পোস্ট করা হয় যেখানে বলা হয়, ‘এই প্লাটফর্মে অন্যান্য সংগঠনের মাঝে বজরং দলের উপস্থিতি ভারতে হেট স্পিচের বিরুদ্ধে সংস্থার পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি প্রতিবন্ধকতার উদাহরণ। যা সন্দেহজনক। যদিও এর উত্তরে ফেসবুকের মুখপাত্র জানান, আমরা রাজনৈতিক পক্ষপাত ছাড়াই বিশ্বব্যাপী বিপজ্জনক ব্যক্তি ও সংস্থার উপর আমাদের নীতি প্রয়োগ করি। তবে ফেসবুকের এহেন নীরবতার পিছনে কারণ হিসেবে উঠে আসে ভারতের বিশাল বাজার। গত অক্টোবর মাসেই ফেসবুক ভারতে বহু আরব ডলার বিনিয়োগ করেছে। ভারতের মাটিতে পাঁচটি অফিস রয়েছে ফেসবুকের। বর্তমানে ভারতকেই নিজেদের সবচেয়ে বড় বাজার হিসেবে মানছে ফেসবুক সংস্থা।

Previous article১৯ জন আইপিএসের নামের তালিকা প্রকাশ রাজ্যপালের
Next articleনতুন বছরের শুরুতেই বাজারে আসছে গেরুয়া ফুলকপি “করোটিনা”