উত্তরবঙ্গ সফরে মমতা, দিদির ভোকাল টনিকের দিকে তাকিয়ে তৃণমূল

কিশোর সাহা

নানা কারণে শাসকদলের নেতা-কর্মীদের একাংশের মনোবল ক্রমশ যেন দুর্বল হচ্ছে উত্তরবঙ্গে। বিশেষ করে ৭ ডিসেম্বর উত্তরকন্যা ( Uttarkanya) অভিযানে বিজেপি তেমন লোক জড়ো করতে না পারলেও দলের একজনের মৃত্যুকে সামনে রেখে যেভাবে রোজ খবরের শিরোনাম দখলের চেষ্টা করছে তাও তৃণমূলের(Tmc) অনেকের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এই অবস্থায়, ভোকাল টনিক দিয়ে সেই হতোদ্যম ও উদ্বিগ্ন নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করতে ভোটের ময়দানে নামাতে সোমবার উত্তরবঙ্গ যাচ্ছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।

প্রায় চার দিনের সফরে তিনি বিজেপিকে তুলোধনা যে করবেন তা নিয়েই সন্দেহ নেই। উপরন্তু, দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যাঁরা দলীয় কোন্দল কিংবা দলবিরোধী কাজে যুক্ত বলে সন্দেহ করছেন কেউ কেউ, তাঁদের প্রতি দলনেত্রী কতটা কঠোর বার্তা দেবেন তা নিয়েও তৃণমূলের( Tmc) অন্দরে এখন আলোচনা তুঙ্গে।

আরও পড়ুন : কাল, মঙ্গলবার বাড়ি ফিরছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য

গত বিধানসভা ভোটে তৃণমূল উত্তরবঙ্গে বিরোধীদলকে প্রায় দাঁড়াতেই দেয়নি। অথচ তারপরই লোকসভা ভোটে সেই উত্তরবঙ্গে তৃণমূলকে অনেকটা পিছনে ফেলে ৭টি আসনে জিতেছে বিজেপি(Bjp)। যে কোচবিহারে গত বিধানসভায় বিজেপি একটা আসন পায়নি সেখানে বিজেপির সাংসদ হয়েছেন তৃণমূল থেকে যাওয়া নিশীথ অধিকারী (Nishith Adhikari)। জলপাইগুড়ির চা বলয়েও জয়ী হয়েছেন বিজেপির জয়ন্ত রায়(Jayanta Ray)। আলিপুরদুয়ারে জিতেছেন বিজেপির জন বার্লা(John Barla)। জেলার রাজনীতিতে অতীতে যাঁকে কোনদিন দেখা যায়নি, সেই রাজু বিস্ত(Raju Bist) দার্জিলিং আসন থেকে রেকর্ড ভোটে জিতে লোকসভায় গিয়েছেন। বালুরঘাট (Balurghat), মালদহেও (Maldah) বিজেপির প্রার্থী জিতেছেন।

আরও পড়ুন : রাজ্যের জন্যই মেলেনি অনুদান, আসানসোল স্মার্ট সিটি নিয়ে পুরমন্ত্রীকে বিস্ফোরক চিঠি জিতেন্দ্রর

এতেই তৃণমূলের একাংশের মনোবল কিছুটা ভেঙেছে। বিশেষত, সারা বছর তৃণমূলের যে নেতা-কর্মীরা দলের হয়ে মিটিং-মিছিল করেন ও করান, সংগঠন বাড়াতে নানা কর্মসূচিতে ঝাঁপান, তাঁরাই এমন ফল কেন হল সেই প্রশ্নে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।

শুধু তাই নয়, গত লোকসভা ভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে থাকা সিপিআইএম (Cpim) সহ বামদলগুলি এবং কংগ্রেসের (Congress) একটা বড় অংশের ভোটই বিজেপির শিবিরে গিয়েছে বলেও ওই নেতাদের সন্দেহ। সিপিআইএম, কংগ্রেসের নেতারা যে আগামী বিধানসভা ভোটে নিজেদের ভোট ধরে রাখতে কোমর বেঁধে নামবেন তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তাতে আখেরে তৃণমূলেরই কিছুটা সুবিধা হতে পারে। কিন্তু, তৃণমূল যদি নিজেদের লোকজনের মনোবল চাঙ্গা করতে না পারে তা হলে যে মুশকিল বাড়বে তা নিয়ে দলের অনেকেরই সংশয় নেই।

কারণ, কোথাও দলের মধ্যেই দলাদলি, ঠেলাঠেলিতে বিরক্ত দলের লোকেরাই। আবার কোথাও দলীয় পর্যবেক্ষক কিংবা কলকাতার কিছু নেতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ বেড়েই চলেছে। কেউ কেউ আবার পি কে (Pk) ও তাঁর কর্মীদের ভূমিকায় বিরক্ত। সব মিলিয়ে উত্তরবঙ্গের দক্ষিণ পূর্ব দিকের জেলাগুলিতে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের একাংশের মনোবল কিছুটা যেন দুর্বল হয়ে পড়েছে।

সেই খবর পৌঁছেছে তৃণমূল নেত্রী তথা দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee)কাছেও। বিশেষত, কোচবিহারে বিধায়ক মিহির গোস্বামী (Mihir Goswami) বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে সেখানে জেলার নেতাদের একাংশের কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা অভিযোগ দলনেত্রীর কাছে গিয়েছে। জলপাইগুড়িতেও একাধিক নেতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে। চা বলয়ের অন্যতম বহৎ অংশ আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়িতে চা শ্রমিক সংগঠনের হাল নিয়েও দলে নানা ক্ষোভ-প্রশ্ন আছে।

দল সূত্রের খবর, তাই সাধারণত শিলিগুড়িতে(Siliguri) পৌঁছে উত্তরকন্যায় একদিন থেকে তার পরে উত্তরবঙ্গ সফর করতে অভ্যস্ত দলনেত্রীর সফরসূচি এবার বদলেছে।
সোমবার বাগডোগরায় (Bagdogra) নেমে সরাসরি হেলিকপ্টারে চলে যাচ্ছেন তিনি জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) তে। সেখানে রাতে দলের জেলার কয়েকজনকে ডেকে কথা বলবেন তিনি। পরের দিন জলপাইগুড়িতে দলের সভায় বক্তৃতা দেবেন। সে দিনই কপ্টারে কোচবিহারে যাবেন তিনি। রাতে সেখানকার সার্কিট হাউসে থাকবেন। সেখানে দলের কয়েকজন নেতাকে ডেকে কথাবার্তা বলবেন বলে সূত্রের খবর।

আরও পড়ুন : ‘মমতাকে খুনও করতে পারে বিজেপি’, বিস্ফোরক অভিযোগ মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের

বুধবার, কোচবিহারে (Coochbehar)রাসমেলায় ময়দানে দলীয় সভা করবেন মমতা। ওই দিন কপ্টারে বিকেলে শিলিগুড়ি ফিরে উত্তরকন্যা থাকবেন।
দলের সূত্র অনুযায়ী, উত্তরকন্যায় তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে পাহাড়ের কয়েকজন প্রতিনিধি দেখা করতে পারেন। শিলিগুড়ির কয়েকজন নেতারও দেখা করতে যাওয়ার কথা।

কিন্তু কোভিড ১৯ পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত কতজনের সঙ্গে সরাসরি দলনেত্রীর সাক্ষাৎ হতে পারে তা নিয়ে অবশ্য সংশয় রয়েছে। যদিও দলের অনেকেরই ধারনা, চলতি সফরেই দলনেত্রী বুঝিয়ে দেবেন, তিনি যেমন রাজ্য প্রশাসনে শেষ কথা, দলেও তিনিই শেষ কথা বলে থাকেন। তাতেই যাঁরা কলকাতার কয়েকজন নেতা কিংবা পিকেকে নিয়ে বাজার গরম করা বিবৃতি দিচ্ছেন, তাঁরা কিছুটা শান্ত হবেন বলেও দলের স্থানীয় প্রবীণ নেতারা অনেকেই মনে করছেন।

Previous article‘শিখদের সঙ্গে মোদির সুসম্পর্ক’, কৃষক আন্দোলনের মাঝেই দু’কোটি ই-মেইল রেলের
Next articleআদ্রা ডিভিশনে ফের শুরু লোকাল ট্রেন চলাচল