জেলা কার্যালয়ে তালা, শিলিগুড়িতে আধ ঘণ্টা ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ক্ষিপ্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী! কিশোর সাহার কলম

কিশোর সাহা

ক্ষুব্ধ মন্ত্রী টেবিল মোছালেন প্রাক্তন পুরকর্তা তথা মহিলা নেত্রীকে দিয়ে, ক্ষুব্ধ জেলার কর্মীরা। বৃহস্পতিবার, সকাল সাড়ে ৯টা। শিলিগুড়িতে (Siliguri) অফিস টাইমের ব্যস্ততা শুরু হয়েছে। হিলকার্ট রোডের হাসমি চকেও জমজমাট জনস্রোত। ওই মোড়েই একটি ভবনের সেকেন্ড ফ্লোরে বিজেপির (Bjp) শিলিগুড়ির জেলা পার্টি অফিস। সেখানে আগাম খবর দিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এসেছেন। পৌঁছে দেখলেন জেলা পার্টি অফিসের তালাই খোলেনি। সেপাই-সান্ত্রী নিয়ে খোদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ফুটপাতে দাঁড়িয়ে রইলেন প্রায় আধ ঘণ্টা! কেন্দ্রের পর্যটন মন্ত্রী দীর্ঘ সময় ধরে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন দেখে তাজ্জব বনে গেলেন শিলিগুড়িবাসী। খোদ পর্যটন মন্ত্রী (Tourism Minister) প্রহাল্দ প্যাটেলও (Pralhad Petel) তাজ্জব হয়েছেন। তবে অন্য কারণে। সেটা হল, যেখানে তাঁর দলের তরফে ঘটা করে রোজই ঘোষণা করা হচ্ছে তাঁরা আগামী বিধানসভা ভোটে ২০০টির বেশি আসন এ রাজ্যে পাবেন, সেখানে তিনি আসার আগাম খবর দিয়েও জেলার সদর দফতর তালাবন্ধ দেখতে পেয়েছেন।

শেষ পর্যন্ত তাঁর আপ্ত সহায়কের মাধ্যমে খবর পেয়ে বিজেপির শিলিগুড়ি জেলা সভাপতি প্রবীণ আগরওয়াল (Praveen Agalwal) হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসেছেন। চাবি পাঠিয়ে অফিস খুলিয়েছেন। বিজেপি সূত্রের খবর, ততক্ষণে রাগে অগ্নিশর্মা হয়েছেন বিজেপির প্রবীণ নেতা তথা কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রী প্রহ্লাদ প্যাটেল। তিনি জেলা সভাপতি থেকে শুরু করে মণ্ডল সভাপতি কাউকে ছাড়েননি। সকলের পার্টির প্রতি দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ভর্ৎসনা করেছেন। দল সূত্রেই জানা গিয়েছে, এমনকী, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দলীয় পর্যায়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।

বিজেপি সূত্রেই জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দলের হাল-হকিকত দেখে হতাশা, ক্ষোভ সবই প্রকাশ করেছেন খোলাখুলি। একজন সাংসদ সেখানে উপস্থিত ছিলেন তাঁকেও বকাবকি করেছেন বলে দলের অন্দরের খবর। কিন্তু, মন্ত্রীর আচরণে বিজেপির নেতারাও কম ক্ষুব্ধ হননি। কারণ, পার্টি অফিসে কয়েকজনের প্রাতঃরাশের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেখানে খাওয়া-দাওয়ার সময়েও মন্ত্রীকে কয়েকজনকে বকাবকি করতে দেখেছেন দলের অনেকে। দলের কয়েকজন জানান, আচমকা মন্ত্রী একটি টেবিলের সামনে থাকা শিলিগুড়ি পুরসভার প্রাক্তন এক পুরকর্তা তথা মহিলা নেত্রীর উপরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দলীয় সূত্রের খবর, ওই টেবিলে খাবারের উচ্ছিষ্ট পড়ে থাকতে দেখে তিনি নেত্রীকে তা মুছে দেওয়ার নির্দেশ দেন। সে সময়ে একজন দলীয় কর্মী কাপড় নিয়ে তা মুছতে গেলে তাঁকে ধমকে সরিয়ে দেন মন্ত্রী।

দলের একাধিক কর্মী ক্ষোভের সঙ্গে জানান, তারপরে ওই নেত্রীতে দিয়ে টেবিল মুছিয়েছেন মাননীয় মন্ত্রী, যেটা তাঁরা মন থেকে মানতে পারেননি। শুধু তাই নয়, দিল্লি থেকে আসা মন্ত্রীর এহেন আচরণের কারণে অনেক বিজেপি নেতা-কর্মীর মনোবল তলানিতে চলে গিয়েছে। কয়েকজন বিজেপি নেতা জানান, অনেক দিল্লির নেতাকে দেখেছেন, অনেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে তাঁরা দেখেছেন, কিন্তু এরকম আচরণ, রাগ তাঁরা কাউকে করতে দেখেননি। দলের কয়েকজন নেতা-কর্মী জানান, সব মিলিয়ে কিছুটা ছন্নছাড়া অবস্থা যে চলছে সেটা তো বোঝাই যাচ্ছে!

বিজেপির শিলিগুড়ির প্রথম সারির নেতারা অবশ্য দাবি করেছেন, তেমন কিছু হয়নি। মন্ত্রীর বেলা ১১টায় প্রেস কনফারেন্স ছিল। সেই মতো বেলা ১০টায় অফিস খোলার কথা ছিল। হঠাৎ পূর্ব নির্ধারিত জনসম্পর্ক কর্মসূচি স্থগিত হওয়ায় মন্ত্রী তাড়াতাড়ি পার্টি অপিসে যাওয়ায় একটু অপেক্ষা করতে হয়েছে। তা নিয়ে কোনও গোলমাল, রাগারাগি হয়নি বলে সরকারিভাবে দাবি করা হয়েছে বিজেপি জেলা নেতৃত্বের তরফে।
কিন্তু, বিজেপির অনেক নেতা-কর্মী কিন্তু একান্তে গোটা ঘটনা যে ঠিক নয় তাতে সিলমোহর দিচ্ছেন।

আরও পড়ুন- পদত্যাগ করতে চান যাদবপুরের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস

Previous articleপদত্যাগ করতে চান যাদবপুরের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস
Next articleমাদার ওয়াক্স মিউজিয়ামে থাকবে না সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মূর্তি, কেন?