নিজেই নিজের অস্ত্রোপচার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন এক চিকিৎসক! কে জানেন?

চিরতুষারের দেশে চারদিকে শুধু বরফ। চিকিৎসক তিনি একাই। তাই নিজের অসুখে নিজেরই চিকিৎসা করা ছাড়া উপায় ছিল না। শুধু চিকিৎসা-ই নয়। নিজের দেহে নিজেই অস্ত্রোপচার করেছিলেন রাশিয়ার লিওনিড রোগোজোভ। দেহ থেকে বাদ দিয়েছিলেন অ্যাপেন্ডিক্স।মঙ্গোলিয়া এবং চিনের সঙ্গে রাশিয়ার সীমান্ত থেকে ১৭ কিমি দূরে পূর্ব সাইবেরিয়ার চিটা ওব্লাস্ট গ্রামে রোগোজোভের জন্ম ১৯৩৪-এর ১৪ মার্চ। শৈশবেই পিতৃহীন হন তিনি।
লেলিনগ্রাদ পেডিয়াট্রিক মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে তিনি ডাক্তারি পাশ করেন ১৯৫৯ সালে। তাঁর খ্যাতি ছিল অস্ত্রোপচারে।১৯৬০ থেকে ১৯৬২, দু’ বছর অ্যান্টার্কটিকায় কর্মরত ছিলেন রোগোজোভ। তেরো জন বিজ্ঞানী তথা গবেষকের দলে তিনিই ছিলেন একমাত্র চিকিৎসক।
যখন তিনি অসুস্থ, অস্ত্রোপচার করা ছাড়া কোনও উপায় নেই তখন জানলেন অস্ত্রোপচারের জন্য যেতে হবে আরও একটি গবেষণাকেন্দ্রে। সেই মুহূর্তে নোভোলাজারেভস্কায়া-র সবথেকে কাছের গবেষণাকেন্দ্র মিরনি ছিল ১৬০০ কিমি দূরে। সেখানে যাওয়ার একমাত্র ভরসা এয়ারক্র্যাফ্ট। কিন্তু তীব্র তুষারঝড়ে সে বাহনও ব্যবহারের অযোগ্য ছিল।
রোগোজোভ বুঝলেন নিজের অস্ত্রোপচার নিজেকেই করতে হবে। নইলে মৃত্যু আসন্ন। ১৯৬১-র ১ মে দুপুর দু’টো-র সময় অস্ত্রোপচারের সময় ঠিক হল। গবেষণাকেন্দ্রে তৈরি হল অস্থায়ী অস্ত্রোপচার থিয়েটার। রোগোজোভের পাশে থাকলেন একজন আবহাওয়া-বিজ্ঞানী এবং একজন গাড়িচালক।আধশোয়া রোগোজোভের সামনে ধরা হল আয়না। ইঞ্জেকশন দিয়ে তলপেটের নির্দিষ্ট অংশ অবশ করলেন তিনি। এরপর অস্ত্রোপচার শুরু করলেন তিনি।
আয়নায় প্রতিবিম্ব দেখে এগোতে লাগল রোগোজোভের হাতের ছুরি-কাঁচি। অ্যাপেন্ডিক্স বাদ দিতে গিয়ে প্রথমে অন্য অঙ্গ ‘সিকাম’-কে আঘাত করে বসেন তিনি। তারপর সেটি সেলাই করে আবার নির্দিষ্ট দিকে এগোতে শুরু করল তাঁর হাতের অস্ত্র।
অবশেষে অ্যাপেন্ডিক্স দেখতে পেলেন রোগোজোভ। সেটি তখন যথেষ্ট স‌ংক্রামিত। দেহ থেকে সেটি বাদ দিলেন তিনি।
ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গ বাদ দেওয়ার পরে আবার নিপুণ হাতে অস্ত্রোপচারের জায়গা সেলাই করে ফেলেন রোগোজোভ। প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হতে সময় লাগে প্রায় দু’ ঘণ্টা। লিওনিড রোগোজোভকে পুরস্কৃত করা হয় ‘অর্ডার অব দ্য রেড ব্যানার অব লেবার’ সম্মানে।
এরপর তিনি লেনিনগ্রাদের বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৬ থেকে ২০০০ অবধি তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর টিউবারকুলার পালমোনোলজি-র বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে লিওনিড রোগোজোভ প্রয়াত হন ২০০০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর, ৬৬ বছর বয়সে।

 

Previous articleপাকিস্তানকে ঘুঁটি করে ভারতের সঙ্গে সংঘাতের ফল ভালো হবে না চিনের জন্য: বায়ুসেনা প্রধান
Next articleকরোনা ভ্যাকসিন ট্রায়ালের দ্বিতীয় ডোজ নিলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম