আঙুল আছে, কিন্তু কোনও ছাপ পড়ে না; শুনেছেন কখনও?

খালি চোখে দেখতে পাওয়া যায় আঙুল আছে। কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু সেই আঙুলের কোনও ছাপ পড়ে না। নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন। যদিও এটাই বাস্তব ।তিন পুরুষ ধরে ‘আঙুলে’ এই অভিশাপই বয়ে বেড়াচ্ছেন বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার বাসিন্দা ২১ বছর বয়সি অপু সরকার। এর ফলে পদে পদে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাকে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে পাসপোর্ট সর্বত্র সমস্যার সম্মুখীন তিনি। শুনতে আশ্চর্য লাগলেও সত্যি, অপুর পরিবারের কোনও পুরুষের হাতের আঙুলের কোনও ছাপ পড়ে না।
অবশ্য অপু নন, সমস্যাটা ছিল অপুর দাদুরও। কৃষিজীবী মানুষ হওয়ায় তাকে কোনও সমস্যায় ভুগতে হয়নি ।
প্রথম সমস্যার সূত্রপাত অপুর বাবা, অমল সরকারের ক্ষেত্রে । অপু তখন নিতান্তই কিশোর। বাংলাদেশে জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক হয় সে বছরই। সেই সঙ্গে চালু হয় আঙুলছাপ তালিকাভুক্ত করা। অপুর বাবার পরিচয়পত্র তৈরি করার সময় সরকারি আধিকারিকরা দেখেন, তাঁর আঙুল ছাপ পড়ছে না। অনেক চেষ্টা করেও কোনও কাজ হয়নি। বাংলাদেশ সরকার তাঁকে পরিচয়পত্র দিলেও সেই কার্ডে লেখা ছিল নো ফিঙ্গারপিন্ট।
এরপর অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে পাসপোর্ট জোগাড় করেছিলেন অপুর বাবা। কিন্তু সাহস করে দেশের বাইরে যান নি।
অপুর ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি । তার অভিযোগ, অনেক সময়েই পুলিশি হেনস্থার মুখে পড়তে হয়।তারা এই সুযোগ কে কাজে লাগিয়ে টাকা নেয় জুলুম করে।
এখন নিজের নামে বৈধ সিমকার্ডও নিতে পারেন না অপু। ভাই অনুরও সমস্যা এক।
তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, এই সমস্যার কী কোনও সমাধান নেই? চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় অ্যাডারমাটোগ্লিফিয়া। এটি জিনগত অসুখ। কনজেনিয়াল পালম‌োপ্লান্টার কেরাটোডার্মা এই অসুখের চেহারা ধারণ করেছে। এই রোগে আক্রান্তদের হাত ও পায়ের তালু শুষ্ক হয়, হাত, পায়ের তালুতে কোনও রেখাই থাকে না। তাই এই বিরল রোগের টিকিৎসাও বেশ ব্যায় সাপেক্ষ। এমনকি সব জায়গায় এর চিকিৎসাও হয় না তাই ভবিতব্য কে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে এই পরিবারের পরিজনরা । তাদের এই রোগ বিরলের মধ্যে বিরলতম। নিয়মের গেরো তাই আজ তাদের কাছে অভিশাপ।

Previous articleকয়লা-গরু পাচারকাণ্ড: তিন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর বাড়িতে হানা সিবিআইয়ের
Next articleবাড়িতে পদ্ম ! শুক্রবার বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন শুভেন্দু-ভ্রাতা সৌম্যেন্দু অধিকারী