বেনজির! কলকাতা প্রেস ক্লাব কেলেঙ্কারি, শ্লীলতাহানির অভিযোগে এল পুলিশ!

শুক্রবার, ৮ জানুয়ারি ২০২১। রাত দশটা। ঐতিহ্যমণ্ডিত কলকাতা প্রেস ক্লাবে (Kolkata Press Club) ঘটে গেল এক কলঙ্কজনক ঘটনা।

রাত সাড়ে দশটা নাগাদ আচমকা হইচই। হঠাৎ এত চেঁচামেচি কেন? কারণ অনুসন্ধানে নেমে জানা গেল প্রেস ক্লাবেরই এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্যের স্ত্রী চিৎকার করছেন, অভিযোগ করছেন। কী অভিযোগ? অভিযোগ, ক্লাবের ভিতরে ক্লাবেরই ভাইস প্রেসিডেন্টের (Vice President) হাতে শ্লীলতাহানির মুখে পড়তে চলেছিলেন। সতর্ক থাকায় শেষ মূহুর্তে কোনোওরকমে নিজেকে শ্লীলতাহানির হাত থেকে বাঁচাতে সক্ষম হয়েছেন। বিস্ফোরক অভিযোগ। ক্লাবের ভিতরে সেই সময়ে মহিলা-পুরুষ মিলিয়ে কিছু সদস্য আর অতিথি ছিলেন। সবার সামনে চিৎকার করে ওই মহিলা বলেন, অনেক সহ্য করেছি। এবারের মতো ছেড়ে দিলাম। এরপরে ঠাসিয়ে চড় মারব।

তখন উত্তেজনা চরমে। হইহই কাণ্ড। অভিযোগ গুরুতর।
একটু পরেই রাতের দিকে ময়দান থানার পুলিশ পৌঁছয় ক্লাবে। তখন অভিযুক্ত বেকায়দায় পড়ে। একটু আগেই হম্বিতম্বি করছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনি দোষ স্বীকার করে হাতজোড় করে পুলিশের সামনে ক্ষমা চান। বার কয়েক কান ধরে ওঠবোস করে কোনওক্রমে গ্রেফতারি এড়ান।

আরও পড়ুন : যেন কোন স্বামীজি এসেছে! শুভেন্দু-মুকুলকে লক্ষ্য করে কল্যাণের বোমা

ক্ষমা চাওয়া ওই ক্লাব পদাধিকারী সাম্প্রতিককালে বেশ কিছুদিন ধরেই ক্লাবের বিভিন্ন বিষয়ে হম্বিতম্বি শুরু করেন। ছড়ি ঘোরাচ্ছেন এবং যখন-তখন, যাকে-তাঁকে বলছেন আমি ভাইস প্রেসিডেন্ট। বুঝিয়ে দেব আমার ক্ষমতা। কখনও কাউকে বলছেন লাথি মেরে বের করে দেব। আবার কাউকে বলছেন, মেম্বারশিপ বাতিল করে দেব। দিন দিন তাঁর অভব্য অশালীন আচরণ মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল বলে অভিযোগ। লকডাউনের মধ্যেই অন্য কর্তাব্যক্তিদের না থাকার সুযোগ নিয়ে ক্লাবে কাজ করানোর নাম করে কয়েক হাজার টাকার শুধু সিগারেট উড়িয়েছেন এই ব্যক্তি, অভিযোগ ক্লাব সূত্রেই। ক্লাবের ভিতরে সে সময় লুকিয়ে চলেছে দেদার মদ্যপান। স্থায়ী চাকরি না থাকা এই ভাইস প্রেসিডেন্টটি প্রতি সন্ধ্যায় ক্লাবে ‘মুরগী’ ধরেই মদ্যপান করেন। ক্লাবকে কার্যত নিজের সম্পত্তি হিসেবে ভাবতে শুরু করেন।

কলকাতা প্রেস ক্লাবের মতো শতাব্দী প্রাচীণ ক্লাবে ভাইস প্রেসিডেন্টের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে, অশালীন আচরণে এবং ক্লাবে জমা পড়া বিভিন্ন অভিযোগে ক্ষুব্ধ সদস্যরা। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অনেকে ক্লাবের দুই শীর্ষ কর্তার দিকে আঙুল তুলছেন। ক্লাব সম্পাদক কিংবা সভাপতি কেন হাত গুটিয়ে বসে আছেন, সে নিয়ে অসংখ্য প্রশ্ন। এই ব্যক্তির কারণেই ক্লাবে শ্লীলতাহানির অভিযোগ, পুলিশের প্রবেশ, ক্লাব সদস্যের কান ধরে ওঠবোস করার ঘটনা ক্লাবের মর্যাদাকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে।

ঘটনার পর প্রায় ২৪ ঘন্টা কাটার পরেও, ক্লাব কর্তৃপক্ষ স্থবির। শুধু একটি জিডি (General Diary)! শোনা যাচ্ছে, সাংবাদিকের নামে কলঙ্ক এই ব্যক্তিকে মদত দিচ্ছেন এক সময়ে দিল্লির একটি চ্যানেলে কর্মরত এক সাংবাদিক। তিনি ক্লাব সদস্য নন, অথচ রোজ এসে ক্লাবে মদ্যপান করছেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্টকে বিভিন্ন অসামাজিক কাজে উৎসাহিত করছেন। বর্তমান ক্লাব কমিটির উপর যে সদস্যরা ব্যাপক ক্ষিপ্ত, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যে কোনও দিন বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।

Advt

Previous articleফের কলেজের উপরেই পরীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে
Next articleমোদীকে আমদানি শুল্ক কমানোর পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের