প্রেস ক্লাবের কলঙ্কিত রাত : চুলোয় যাক মান-সম্মান-দায়িত্ব, পদ তো রইল!

কলকাতা প্রেস ক্লাব (kolkata Press Club)। সাংবাদিকদের বা সংবাদ মাধ্যমের ক্লাব। ৭২ ঘন্টা আগে শ্লীলতাহানির অভিযোগে ( Complain of molestation) ময়দান থানার পুলিশ (Police of Maidan Thana) ঢোকে ক্লাবে। তারপর নানা চিত্রনাট্য, কানধরা, ওঠবোস করার ঘটনা দেখে-শুনেছে অনেকে। এবং আশ্চর্যের বিষয় হলো, সাংবাদিকদের মান-ইজ্জত ভূলুন্ঠিত করে, এখনও দু’পক্ষই বহাল তবিয়তে। যারা অন্যের সমালোচনা করেন, তারা নিজেরাই অভিযোগের কাঠগড়ায়।

প্রেস ক্লাব মানে তো সাংবাদিকদের অধিকার, দাবি নিয়ে সরব হওয়া। কিন্তু ঐতিহ্য মেনে প্রেস ক্লাবের হলো ধরি মাছ, না ছুঁই পানির মতো অবস্থা। সরকারের চাটুকারী করে পদে থাকা, ভোটে জেতা, অন্যান্য নানান সুবিধা নেওয়াই মূল লক্ষ্য। বাকি অধিকার আর দাবি সুরার বোতলেই শুরু, সুরার বোতলেই শেষ।

সাংবাদিক হয়েও কেন এমন সমালোচনা? আসলে কারওর দিকে তর্জনী তুললে হাতের তিনটে আঙুল কিন্তু নিজের দিকেই তাক করা থাকে। আর বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ ওই আকাশে। অর্থাৎ সমালোচনা করো, কিন্তু আত্মসমালোচনাও করো। কারণ সবটাই দেখছেন উপরওয়ালা।

অবাক হতে হয় পরম্পরা বজায় রেখে ক্লাবের কর্তাব্যক্তিদের কাজকর্মে। কেন? এরা নানান অকাজে অযথা বিবৃতি দিয়ে ভারাক্রান্ত করে। কিন্তু আসল সময়ে ভ্যানিশ। কেন বলছি?

১. সংবাদপত্র বা চ্যানেলে বিনা নোটিশে ছাঁটাই আকছার হচ্ছে। একটি বড় হাউসে ছাঁটাই করে ফাঁকা করে দেওয়া হলো। হঠাৎ চাকরি হারিয়ে কেউ কেউ আত্মহত্যা পর্যন্ত করলেন। কিন্তু ক্লাবের কর্তাব্যক্তিরা একটা টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করেনি। আসলে প্রতিবাদ করে বিপদে পড়তে চাননি। চক্ষুশূল হতে চাননি, ভবিষ্যতে কোথায় যেতে হয়, সেসব ভেবে মুখে লিউকোপ্লাস্ট মেরেছিলেন। ন্যায়-নীতি বড্ড ভারী শব্দ!

২. সাংবাদিকরা মার খাচ্ছেন। পুলিশ মারছে। রক্তাক্ত হচ্ছেন। আরে যেই সরকারে থাকুক না কেন, মারার অধিকার কে কাকে দিয়েছে? বারবার একই কাজ হবে আর পুলিশকর্তারা দুঃখজনক বলে দায় এড়াবেন, এটা কতদিন চলবে? একটা মিছিলেই প্রতিবাদ শেষ হয়ে যাবে? কত ঠুনকো সাংবাদিকদের জাত্যাভিমান। একটা পুলিশ অফিসারকে সাংবাদিকরা প্রকাশ্যে ধর্মতলায় পিটিয়ে একবার দেখুক না! সব দাঁত-নখ একসঙ্গে বেরবে। পারলে সরকার রাশ হারানোর ভয়ে সেই তালে তাল দেবে!

৩. সাংবাদিকদের হাউস বন্ধ হয়ে গিয়ে অথৈ জলে পড়া, যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। প্রেস ক্লাব এ নিয়ে নৈতিক দায়িত্ব এড়াতে পারে? হাউস বন্ধ হতে পারে। কিন্তু বকেয়া কেন মেটাবে না ম্যানেজমেন্ট? কেন সেখানে সাংবাদিকদের মুখপত্র হয়েও দায়িত্ব এড়িয়ে যাবে তারা!

৪. কোনও একটি মানবিক ইস্যুতেও প্রেস ক্লাব ভূমিকাহীন। তৃণমূলের এক সাংসদ ‘দু’টাকার সাংবাদিক’ বলে প্রকাশ্যে মন্তব্য করার পরেও ক্লাব মিটিং ডেকে বলতে পারেনি, আমরা বয়কট করছি সেই সাংসদকে। হিম্মত কোথায় ক্লাব কর্তাদের। কে কার তামাক খেয়ে রয়েছে কে জানে! নচিকেতার সেই গানটার কথা মনে পড়ছে… ভয় ভয় ভয়, যদি ভোট নষ্ট হয়।

ক্লাবের সেক্রেটারি-প্রেসিডেন্ট হতে হবে না! তাতে কেউ কেউ যদি ক্লাবকে ‘সস্তায় মদ খাওয়ার ক্লাব’ বলে তির্যক মন্তব্যও করে, তাহলেও তা সহ্য করে নিতে অসুবিধা কোথায়!

শুক্রবার রাতের ঘটনা সাংবাদিকদের মাথা নিচু করে দিয়েছে। এই ঘটনা আবার ঘটবে কিনা তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু একটি নিশ্চয়তা নিশ্চিত করে দেওয়া যায়। আর সেটা হলো আগামিদিনে এমন ঘটনার পুনিরাবৃত্তি হলে ক্লাবের পদাধিকারীরা চৌরিচোরার ঘটনার পর যেমন গান্ধীজি মৌনব্রত নিয়েছিলেন, তেমনই তাঁরা নিশ্চিত মৌনব্রত নেবেন!!

আরও পড়ুন:মঙ্গলবার থেকে ফিরবে শীতের দাপট, জানালো আবহাওয়া দফতর

Advt

Previous articleসৈয়দ মুস্তাক আলি টি-২০র প্রথম ম‍্যাচে ৯ উইকেটে জয় বাংলার
Next articleকৃষকরা মার্সিডিজ চড়ছে! আন্দোলনকে বদনাম করতে গেরুয়া শিবিরের কুৎসা ফাঁস