‘শুভেন্দুদের চাই না’, নন্দীগ্রামেই আদি- বিজেপি কর্মীদের বেনজির বিক্ষোভ

নিজের ‘গড়’ বলে দাবি করা নন্দীগ্রামের (Nandigram) মাটিতেই এবার বিক্ষোভ বিজেপিতে যোগ দেওয়া শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikary) বিরুদ্ধে ৷ শুভেন্দু যে কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন, সেই নন্দীগ্রামেই তাঁর এবং তাঁর দলবদল করা অনুগামীদের বিরুদ্ধে সোমবার মিছিল করে বিক্ষোভ ( protest) দেখালেন বিজেপির পুরনো কর্মীরা। বিজেপির আদি-কর্মীদের বিক্ষোভের মূল কথা, ‘শুভেন্দুদের চাই না’৷ কেন্দ্রীয় বিজেপি যতই গুরুত্ব দিক, নন্দীগ্রামেই শুভেন্দুর বিরুদ্ধে বিজেপি-র এই বিক্ষোভে বিস্মিত পদ্ম-শিবির৷ এই ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য বিজেপি৷ কারন খোঁজার চেষ্টায় দল নামছে৷

রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের কাছে আদি বিজেপি কর্মীদের দাবি, তৃণমূলের এইসব নেতাদের কেন বিজেপিতে জায়গা দেওয়া চলবে না৷ এই দাবিতেই বিক্ষোভে শামিল হন নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের আমদাবাদ-১ পঞ্চায়েতের সুবদি গ্রামের বিজেপি নেতা-কর্মীদের একাংশ। বিজেপির এই পুরনো কর্মীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, শুভেন্দু অধিকারীদের এখনই বিজেপিতে থেকে বহিষ্কার করা না হলে নন্দীগ্রামের ১২ জন বুথ সভাপতি পদত্যাগ করবেন৷ সুবদি গ্রামের প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দেওয়ায় নন্দীগ্রামের পুরনো বিজেপি নেতা- কর্মীদের বক্তব্য, যে সব দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে এতদিন লড়াই করেছেন, তাঁরাই আজ বিজেপিতে৷ এসব মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।

নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি শেখ সুফিয়ানের কটাক্ষ, ‘‘বিজেপি হচ্ছে ভারতীয় যাত্রা পার্টি। ক্ষমতাই না আসতেই ডামাডোল শুরু হয়ে গিয়েছে। আশা করব, আগামী দিনে নন্দীগ্রামের বিজেপি কর্মীরা সব তৃণমূলে চলে আসবেন।’’

বিক্ষুব্ধ স্থানীয় বিজেপি নেতা নান্টু মাইতি বলেছেন, ‘‘এখন যাঁরা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, একসময় বিজেপি করার অপরাধে তাঁরা আমাদের কর্মীদের উপর হামলা করেছেন দিনের পর দিন৷ মিথ্যা মামলা দিয়ে হেনস্থা করা হয়েছে। এখনও সেই সব মামলা আদালতে চলছে। ওঁরা বিজেপিতে আসছেন বলেই আমরা বিজেপি ছেড়ে দিচ্ছি।’’ বিজেপির এই নেতা কর্মীদের ক্ষোভ মূলত শুভেন্দু অধিকারী এবং তাঁর সঙ্গে বিজেপিতে আসা নন্দীগ্রাম-২ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সঞ্জয় দিন্দা, প্রভাস ভুঁইয়া, পবন গায়েনদের বিরুদ্ধে। দীর্ঘ তিন বছর ধরে রেশন-দুর্নীতিতে অভিযুক্ত সঞ্জয়ের গ্রেফতারের দাবিতে স্থানীয় বিজেপি কর্মীরারা আন্দোলনও করেছেন। ফলে, তাঁদের বিজেপিতে আসা কিছুতেই মানতে পারছেন না এই পুরনো কর্মীরা।
শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই নন্দীগ্রাম-সহ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন অংশে গেরুয়া শিবিরে আদি-নব সংঘাত মাথাচাড়া দিয়েছে৷ গত ৮ জানুয়ারি শুভেন্দুর নন্দীগ্রামের সভাতেও এ ধরনের বিক্ষোভ সামনে চলে আসে।

প্রসঙ্গত, গত ডিসেম্বরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন শুভেন্দু অধিকারী। এর পর পূর্ব মেদিনীপুরে তাঁর অনুগামী হিসেবে পরিচিত একাধিক তৃণমূল নেতা গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছেন৷ জল্পনা চলছে, জেলার আরও বেশকিছু তৃণমূল নেতা-কর্মী যোগ দিতে পারেন বিজেপিতে৷ এতেই ক্রুদ্ধ জেলা বিজেপি-র পুরনো সদস্যদের একাংশ।

নন্দীগ্রামের তেখালিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee)
জনসভা করেন সোমবার৷ ওই সভার আগেই আদি ও নব্য বিজেপি-র সংঘাত তুঙ্গে ওঠে গোকুলনগরে৷
শুভেন্দু এবং তাঁর দলবদলু অনুগামীদের বিরুদ্ধে স্লোগানও দেওয়া হয়৷
ওদিকে, বিজেপি-র তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি প্রলয় পাল এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বলেছেন, ‘‘নন্দীগ্রামে আমাদের সংগঠন বাড়ছে। কর্মীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকতেই পারে, সব মিটে যাবে।’’

আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছাকাছি কেউ নেই: বলছে সমীক্ষা

Advt

Previous articleনেতাজির জন্মদিন “পরাক্রম দিবস” হিসেবে পালিত হবে, ঘোষণা কেন্দ্রের
Next articleবৃষ্টি হবে উত্তরবঙ্গে, জাঁকিয়ে শীত দক্ষিণে