‘নেপালের নাগরিক নও, সেটা প্রমাণ করতে হবে’, অনীত থাপাকে চ্যালেঞ্জ গুরুংয়ের

কিশোর সাহা: গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) কেয়ারটেকার চেয়ারম্যান অনীত থাপাকে নাগরিকত্ব ইস্যুতে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন তাঁর প্রাক্তন গুরু বিমল গুরুং। বৃহস্পতিবার দলীয় কর্মসূচিতে গিয়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার একটি গোষ্ঠীর প্রধান বিমল গুরুং জানান, অনীত থাপা নেপালের নাগরিক বলে সে দেশের একটি পোর্টালে নথিপত্রের জেরক্সও পোস্ট করা হয়েছে। তথ্য যে মিথ্যে তা প্রমাণ করতে হবে অনীত থাপাকেই।

বিমল গুরুং আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে এমন কথা কেউ বললে সর্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থা নিতাম এবং তা যে মিথ্যে সেটা প্রমাণ করে দোষীদের আইনি সাজার পথে নিয়ে যেতাম। বিমল গুরুংয়ের চ্যালেঞ্জ, অনীত থাপাকে নিয়ে নেপালের পোর্টাল যে ভুল পোস্ট করেছে সেটা ওঁকে প্রমাণ করতেই হবে। শুধু শুকনো বিবৃতি দিয়ে পাহাড়বাসীকে সন্তুষ্ট করতে পারবেন না অনীত।

দু’সপ্তাহ আগে নেপালের একটি নিউজ পোর্টাল পোস্ট করেছে, অনীত থাপার নেপালের পাসপোর্ট রয়েছে এবং সেটা দেখিয়ে তিনি দুবাইয়ে গিয়েছিলেন। সেই পাসপোর্ট অনুযায়ী, অনীত থাপার বাড়ি নেপালের ঝাঁপা জেলায়। ঝাঁপা হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার গা ঘেঁষা। মেচি নদীর ওপারে নেপালের ঝাঁপা, এপারে ভারতের দার্জিলিং। মিরিকের সঙ্গেও নেপাল সীমান্তে রয়েছে ঝাঁপার বিস্তৃতি। নেপাল ভারতের বন্ধুরাষ্ট্র হওয়ায় ঝাঁপা ও দার্জিলিং জেলার মধ্যে রোজই যাতায়াত চলে অবাধেই। তাতেই অনীত থাপার নেপালের নাগরিকত্ব থাকার বিষয়টি নিয়ে নেপালের পোর্টালের খবরের সত্যতা থাকতে পারে বলেও তাঁর বিরোধী পক্ষ প্রচার করছে।

ঘটনাচক্রে, অনীত থাপা যে দীর্ঘ ২ বছর দেশের বাইরে ছিলেন তা সকলেই জানেন। জিএনএলএফের এক নেতা জানান, অনীত দুবাইয়ে চাকরি নিয়ে গিয়েছিল। সে সময়ে কোন দেশের নাগরিক হিসেবে পাসপোর্ট করিয়েছিল তা অবশ্য তিনি জানেন না। তিনি জানান, যতদূর তাঁর মনে পড়ছে সে সময়ে নেপালের কাঠমাণ্ডু হয়ে দুবাই যাওয়ার কথা শুনেছিলেন তিনি। ওই জিএনএলএফ নেতা জানান, অনীত থাপা দুবাই থেকে বছর দুয়েক পরে ফিরে একটি ইলেকট্রিক সরঞ্জামের দোকান খোলেন। ক্রমশ বরাত সরবরাহের সুযোগে নানা নেতার ঘনিষ্ঠ হন। ধীরে দীরে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। একসময়ে বিমল গুরুংয়ের গোষ্ঠীতে নাম লিখিয়ে সুবাসর ঘিসিংয়ের বিরোধিতা করে উত্থান হয় তাঁর।

সেই অনীত থাপা এখন নানা কাণ্ডের পরে রাজ্য সরকার মনোনীত জিটিএ-র কেয়ারটেকার চেয়ারম্যান। তাঁর বিরুদ্ধে দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ ওঠায় নবান্নেও খোঁজখবর শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসন একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছে। আরও বিশদে রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রের খবর, বিদেশ মন্ত্রকের মাধ্যমে নেপালের পোর্টালের কাছে ঠিক কী তথ্য রয়েছে তা খতিয়ে দেখার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।

এই অবস্থায়, বৃহস্পতিবার অনীত থাপা ও বিনয় তামাং দীর্ঘ সময় ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেছেন। আগামী বিধানসভা ভোটে অনীতের বিরুদ্ধে দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ সামনে রেখে বিমল গুরুংরা যে বেগ দিতে চাইছেন তা তাঁরা বুঝতে পেরেছেন। অনীত দাবি করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে কোনও মহল থেকে ষড়যন্ত্র করে এ সব অপপ্রচার চলছে। তিনি জানান, দুবছর দেশের বাইরে থাকলেও তিনি ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে গিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন:পঞ্চায়েত এলাকার উন্নয়নের জন্য বাংলাকে ৩,৩০৯ কোটি টাকা অনুদান কেন্দ্রের

তা হলে সেই পাসপোর্টের মধ্যে যে ভিসার সিলমোহর রয়েছে তা কেন অনীত থাপা পোস্ট করে দিচ্ছেন না সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিমল গুরুং অনুগামীদের অনেকেই। অনীত অনুগামীদের দাবি, সময় হলেই সব নথিপত্র সামনে এনে মোক্ষম জবাব দেওয়া হবে। কিন্তু, কবে সময় হবে তা স্পষ্ট করে কেউ বলতে পারেননি।

Advt

Previous articleপঞ্চায়েত এলাকার উন্নয়নের জন্য বাংলাকে ৩,৩০৯ কোটি টাকা অনুদান কেন্দ্রের
Next articleতৃতীয় দফায় স্বেচ্ছায় ভাসানচর যাচ্ছে আরও ৩ হাজার রোহিঙ্গা