বিজেপির নেতাদের ইদানিং আক্রমণের বেশিরভাগটা জুড়েই থাকছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Benarjee)। বিশেষ করে যেসব তৎকাল বিজেপি সদ্য তৃণমূল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছেন, তাঁরা সরব হচ্ছেন বেশি। শনিবার, কাঁথির (Kanthi ) জনসভা থেকে তাঁদেরই যোগ্য জবাব দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যে যে অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে করেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী (Shubhendu Adhikari), পয়েন্ট ধরে তার উত্তর দেন তৃণমূল সাংসদ। শুভেন্দুর দিকে পাল্টা চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দেন তিনি।

বিভিন্ন সময় অভিষেকের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ তুলেছেন শুভেন্দু। কাঁথির জনসভা থেকে অভিষেক বলেন, “কোথাও কোনো প্রমাণ যদি দেখানো যায় যে আমি তোলাবাজি করেছি তাহলে নিজেই ফাঁসির দড়ি গলায় পরব”। শুভেন্দুর টাকা নেওয়ার নথি হিসেবে সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের চিঠির উল্লেখ করেন তৃণমূল (Tmc) সাংসদ। সেখানে তিনি জানান, চিঠিতে সুদীপ্ত সেন (Sudipta Sen) শুভেন্দুকে টাকা দিয়েছিল বলে দাবি করেছেন। শুধু তাই নয়, যেদিন সুদীপ্ত সেন ফেরার হয়ে যান, তার আগেরদিন রাতেও শুভেন্দু অধিকারী তাঁর থেকে টাকা নিয়ে গেছেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন সুদীপ্ত। এই চিঠিটি সারদা-কর্তা আদালতকে লিখেছেন।
অভিষেক বলেন, শুভেন্দুর বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার আরো প্রমাণ রয়েছে নারদের ভিডিও টেপে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার কোনো নথি প্রমাণ বা ফুটেজ কেউ আজ পর্যন্ত দেখাতে পারেননি।

চিটফান্ডের টাকা ফেরত পেতে এবার কাঁথির ‘গদ্দার’কে ঘেরাও করার ডাক দিলেন তৃণমূল (Tmc) সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishesk Benarjee)। তিনি বলেন, “সারদা-রোজভ্যালির আমানতকারীরা টাকা ফেরত পেতে গদ্দারকে ঘেরাও করুন। পালাতে দেবেন না”। আইন আইনের পথে চলবে। কিন্তু আমানতকারীদের জমানো টাকা কোথায় গেল তা তাঁরা শুভেন্দু অধিকারীর কাছে জানতে চাইতেই পারেন।


এদিন জনসভায় দাঁড়িয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাকে ছেড়ে এখন আমার স্ত্রীকে আক্রমণ করছে। বলছে তাঁর নাকি সিঙ্গাপুরের ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট আছে। আমি বলছি কলকাতা ছাড়া আমার স্ত্রীয়ের কোথাও কোন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই”। তৃণমূল সাংসদ বলেন, “শুভেন্দু বলছেন, আমার স্ত্রী নাকি সোনা পাচার করতে গিয়ে বিমানবন্দরে ধরা পড়েছিলেন। সেখানকার নিরাপত্তারক্ষীরা তাহলে কী করছিল? বিমানবন্দরের অতগুলো সিসি ক্যামেরা রয়েছে, এই অভিযোগের সাপেক্ষে কোনও ফুটেজ কি তারা দেখাতে পারে?” প্রশ্ন তোলেন অভিষেক।

সরদার ভাইস-প্রেসিডেন্ট সোমনাথ দত্তকে কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কে নিযুক্ত করার বিষয়টি নিয়েও এদিন শুভেন্দুকে কাঠগড়ায় তোলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

একইসঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন শুভেন্দু অধিকারীর হঠাৎ এত বিদ্রোহী হয়ে উঠলেন? উত্তর নিজেই দেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ” তৃণমূলের জেলার অবজারভার পদ তুলে দেওয়া হয়েছে বলেই এত গাত্রদাহ”। তৃণমূল সাংসদের অভিযোগ, শুভেন্দুর পরিকল্পনা ছিল যে তিনজেলায় তিনি অবজার্ভার ছিলেন, নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর সেখান থেকে জয়ী তৃণমূল বিধায়কদের নিয়ে বিজেপিতে যোগ দেবেন। তারপর তৃণমূল সরকার ভেঙে গেলে, বিজেপিকে সরকার গড়তে সাহায্য করবেন এবং নিজে উপমুখ্যমন্ত্রী হবেন। সেটা আগেই বুঝে ফেলেছিল তৃণমূল। শুভেন্দু নিজেই বলেছেন, ২০১৬ থেকে অমিত শাহর (Amit Shah) সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ। এই খবর দলের কাছে ছিল বলেই শুভেন্দুকে বিশ্বাস করা হয়নি।

আরও পড়ুন:অভিষেকের সভার ভিড় বুঝিয়েছে, মমতার নন্দীগ্রামে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক

অভিষেক কটাক্ষ করে বলেন, এর আগে দিলীপ ঘোষকে গালাগালি দিতেন শুভেন্দু, এখন গলা জড়িয়ে ধরে বলছেন, “আমার ভাই”। শুভেন্দু রে বিশ্বাসঘাতকতার জবাব আগামী দিনে মেদিনীপুরের মানুষ দেবে বলেও জানান অভিষেক। তিনি অভিযোগ করেন, অধিকারী পরিবার নিজেরাই সব পদ নিয়েছিল, জেলায় যোগ্য নেতাদের কোনও পদ বা ক্ষমতা দেননি। শুভেন্দু-বিরোধী কথায় জনগণের সমর্থনে বুঝিয়ে দিয়েছে কাঁথিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রহণযোগ্যতা কতটা।