শাড়ি-পাঞ্জাবিতে বাগদেবীর আরাধনায় মত্ত বাঙালি, কিন্তু জানেন কি দেবীর মর্ত্যে আগমনের ইতিকথা?

জয় জয় দেবী চরাচর সারে…ভগবতী ভারতী দেবী নমস্তুতে! বাঙালির প্রায় প্রতিটি বাড়ি থেকে পাড়ায়-স্কুলে-কলেজে আজ মহানন্দে পালিত হচ্ছে সরস্বতী পুজো। কচিকাচা থেকে শুরু করে কলেজ পড়ুয়াদের কাছে সরস্বতী পুজো মানেই বিদ্যাদেবীর আরাধনার দিন। তবে শুধু বাংলায় নয় ভারতের অনান্য জায়গাতেও নানাভাবে পালন করা হয় এই বসন্ত পঞ্চমী তিথি। পৌরাণিক মতে বসন্ত পঞ্চমীর দিনই সরস্বতী পুজো অর্থ্যাৎ বিদ্যরাধনা করা হয়। তাই জ্ঞান লাভের উদ্দেশ্যে দেবী আরাধনায় মেতে ওঠেন সকলেই, বিশেষ করে পড়ুয়ারা তো বটেই। তবে শোনা যায় পুরাণে যাই লেখা থাকুক না কেন, সে সবটাই আসলে ভিত্তিহীন। লক্ষ্মী-গণেশের সঙ্গে সরস্বতীর নাকি আদতে কোনও সম্পর্কই নেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কে এই শিব এবং পার্বতীর কন্যা না হলে সরস্বতী দেবীর পরিচয় কী?

ঋগবেদ অনুযায়ী ,দেবী সরস্বতী ‘ভূঃ ভুবঃ স্বঃ’ এই জ্ঞানময়ী ত্রিমূর্তি রূপে সর্বত্র বিরাজমান। শুধু ভারতেই নয় ,বিশ্বজুড়ে দেবীর মহিমায় জ্ঞানের আলো বিকশিত হয়। দেবীর জ্ঞানের আলোর স্পর্শে অন্ধকারের ন্যায় অজ্ঞানতা দূর হয়। তিনি সত্ত্বগুণময়ী,অনন্ত জ্ঞানী ঈশ্বরের বাকশক্তির প্রতীক, দেবী সারদা।  শোনা যায় ব্রহ্মা হলেন দেবী সরস্বতীর সৃষ্টকারী। অর্থ্যাৎ তাঁর কোনও মাতা পিতা নেই। জন্মের পরে ধ্যানে বসে তাঁর সকল ভালো গুণগুলিকে একত্রিত করতে থাকেন ব্রহ্মা। সেইসব গুণ মিলিত হয়ে একটি নারীর আকার ধারণ করে। তারপরই ব্রহ্মার মুখ গহ্বর থেকে সৃষ্টি হয় বাগদেবীর।

বসন্ত পঞ্চমীর দিনটিতেই দেবীর জন্ম তিথি হিসেবে কথিত। বলা হয়, আগে  ব্রহ্মার একটি মাত্র মুখ ছিল। কিন্তু দেবীর আগমনের পর অপরূপা সরস্বতীকে দর্শ্ন করার জন্য আরও চারটি মুখের সৃষ্টি হয়। সরেওস্বতীকে ‘সকল বেদের মা’ বলেও মানা হয়। শব্দ ও ভাষার উৎপত্তিও ঘটে তাঁর কাছ থেকেই। তাই ব্রহ্মা তাঁকে বাগদেবী নাম দেন। এখানেই শেষ নয়, পৌরাণিক মতে কোথাও আবার ব্রহ্মাকে স্বরস্বতীর স্বামীও মানা হয়। সেই নিয়ে একটি গল্পও প্রচলিত আছে। একবার কোনও এক অনুষ্ঠানে সঠিক সময়ে পৌঁছতে পারেননি সরস্বতী। সেই কারণেই ঘায়ত্রী নামে আরও এক স্ত্রীর সৃষ্টি করেছিলেন ব্রহ্মা। আর তা জানতে পেরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন সরস্বতী। তাই ব্রহ্মাকে অভিশাপ দেন, মর্ত্যলোকে কোনও দিনও পূজিত হবেন না ব্রহ্মা। আর তাই শিব, বিষ্ণুর মন্দির দেখা গেলেও ব্রহ্মার মন্দির চোখে পড়ে না।

তবে হিন্দু ধর্মে বসন্ত পঞ্চমী হলুদ-আম্রপল্লব-সরষে-পলাশ ফুল-যবের শীষের সঙ্গে পূজিত হওয়ার পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মেও বাগদেবীর উল্লেখ পাওয়া যায়। পার্থক্য শুধু রূপে। বৌদ্ধ ধর্মে দেবীর চার রূপ। মহাসরস্বতী, ব্জ্রবীণা সরস্বতী, ব্জ্রসারদা ও আর্যা সরস্বতী। এখানে আর্যা সরস্বতী রূপী দেবী শুভ্রবর্ণা ও যৌবনা। তাঁর ডানহাতে রক্তপদ্ম ও বাম হাতে পদ্মের সঙ্গে প্রজ্ঞাপারমিতা পুস্তক থাকে।

Advt

Previous articleব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যায় পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দিল বাংলাদেশের আদালত
Next articleহিটলারি কায়দায় রাম মন্দিরের চাঁদা না দেওয়া ব্যক্তিদের চিহ্নিত করছে RSS: কুমারস্বামী