প্রতিকূলতাকে হেলায় হারিয়ে ফেমিনা মিস ইন্ডিয়ায় রানার্স মান্যা সিং

বাবা পেশায় অটোরিক্সাচালক। তাই গ্ল্যামার জগতের থেকে খানিকটা দূরত্ব বজায় রাখবেন, এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু না, সেই ধারণা একেবারে নস্যাৎ করে দিয়ে গ্ল্যামার দুনিয়ায় অনায়াসে প্রবেশ করে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিলেন উত্তরপ্রদেশের মান্যা সিং। অটোরিক্সাচালকের মেয়ে হয়েও ফেমিনা মিস ইন্ডিয়া রানার্স আপ-এর মুকুট জিতলেন তিনি। আবারও একবার সমাজের নজীর হয়ে রয়ে গেলেন। উল্টে শেখালেন, সমস্ত প্রতিকূলতাকে ছাপিয়েও স্বপ্ন দেখা যায়। তবে তার জন্য চাই শুধু জেদ আর স্বপ্ন। শুধু আর্থিক স্বচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েরাই জন্যই।

Femina Miss India-2020র রানার্স আপের খেতাব জেতার পর মঙ্গলবার মান্যাকে সংবর্ধনা দেয় মুম্বইয়ের ‘ঠাকুর কলেজ অ্যান্ড সায়েন্স অ্যান্ড কমার্স’। মান্যা এই কলেজেরই ছাত্রী। মঙ্গলবার প্রথমে সেখানেই পৌঁছেছিলেন তিনি। তবে কোনও দামি গাড়িতে নয়, বাবার অটো চড়েই সেখানে পৌঁছন ‘ফেমিনা মিস ইন্ডিয়া রানার্স আপ’। সঙ্গে ছিলেন মান্যা সিংয়ের মা। কলেজে ঢোকার আগে মা মনোরমা সিংয়ের পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে দেখা গেল তাঁকে। এদিন মেয়ের সাফল্যে চোখে জল এসে যায় মান্যার বাবা ওমপ্রকাশ সিংয়ের। বাবার চোখে জল মুছিয়ে দেয় ফেমিনা মিস ইন্ডিয়া রানার্স আপ’।

মুম্বইয়ের বাসিন্দা হলেও মান্যা সিংয়ের আদিবাড়ি উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরে। ছোট থেকেই দিন আনি দিন খাইয়ের মতো অবস্থা ছিল মান্যার পরিবারের। কোনও কোনও দিন না খেয়েও কাটাতে হয়েছে তাঁকে। এক সাক্ষাৎকারে মান্যা বলেন, “প্রথমে পিৎজার দোকানে কাজ করতাম। এমনকী লোকের বাড়িতে বাসনও মেজেছি। এমনও দিন গিয়েছে, যখন আমাকে অন্যের জুতো পরিষ্কার করতে হয়েছে। পরে কলেজে স্নাতকস্তরে পড়ার সময় কল-সেন্টারে কাজ করে পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি।”

পরিবারকে দুমুঠো খাবারের যোগান দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে অটোরিক্সাচালক মান্যার বাবাকে ।তাই মেয়ের পড়াশোনার দায়িত্ব নিতে তিনি পারেননি। ফলে তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ঠিকভাবে স্কুলে যাওয়া হয়নি মান্যার। তাতে অবশ্য বাবার প্রতি কোনও অভিমান নেই মান্যার। তিনি বলেন, ”আমার বাবা-মা স্কুল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে যাতে আমাকে পড়ার সুযোগ দেওয়া হয়। তাঁরা কেবল আমার পরীক্ষার খরচটুকুই জোগাড় করতে পেরেছিলেন। কিন্তু, স্কুলের ফি দিতে পারেননি। এভাবেই দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়েছিলেন তিনি। পরে, কলেজে উঠলে তাঁর পড়ার খরচ তুলতে মায়ের রুপোর নুপূর বিক্রি করতে হয়েছিল”।

Advt

Previous articleকলকাতার জার্সি গায়ে নামতে মুখিয়ে হরভজন
Next articleনিয়োগের দাবিতে কলেজ স্ট্রিটে টানা অনশনে এসএলএসটি চাকরি প্রার্থীরা