পেট্রোপণ্যের দাম বাড়িয়ে লাভের হিসেব কষছে মোদি সরকার

পেট্রোপণ্যের মূল্য হু হু করে বাড়ায় দেশব্যাপী সমালোচনা উঠলেও কোনও পদক্ষেপ নিতে রাজি নয় কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রের সাফ কথা, পেট্রোপণ্যের কর থেকে কেন্দ্রের রাজস্ব আদায় হচ্ছে। এই অবস্থায় দাম নিয়ন্ত্রণ করতে রাজি নয় কেন্দ্র। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে একাধিকবার সরব হয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাঁর প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি। উল্টে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে পেট্রোল ও ডিজেল দাম। সমীক্ষায় দেখা গেছে, মোদি সরকার ২০১৪ সালে যখন প্রথম ক্ষমতায় আসে, তখন পেট্রোলে উৎপাদন শুল্ক ছিল প্রতি লিটারে ৯.৪৮ টাকা আর ডিজেলের ক্ষেত্রে উৎপাদন শুল্ক ছিল ৩.৫৬ টাকা। এখন সেই শুল্ক বেড়ে হয়েছে পেট্রোলে ৩২.৯০ টাকা এবং ডিজেলে ৩১.৮০ টাকা।

সম্প্রতি পেট্রোলের (Petrol) দাম সেঞ্চুরির গণ্ডি ছাড়িয়েছে। ডিজেলের অবস্থাও তথৈবচ। সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় তুলেছে সাধারণ মানুষ। পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে গতকালই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে (Narendra Modi) চিঠি লিখেছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। তাঁর দাবি ছিল, গত কয়েকমাস ধরে কেন্দ্র সরকার যে অতিরিক্ত অন্তঃশুল্ক পেট্রোপণ্যের উপর চাপিয়েছে, তা প্রত্যাহার করে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়া হোক। কংগ্রেস সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধে বলেছেন, সরকার সাধারণ মানুষের দুর্দশার কথা না ভেবে নিজের লাভের হিসেব করছে। আজ সকালে রাহুল গান্ধীও জ্বালনির মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কেন্দ্রের মোদি সরকারকে বিঁধেছেন।

যদিও পেট্রোপণ্যের দামবৃদ্ধি প্রসঙ্গে আমদানি নির্ভর নীতিকে দায়ি করেছেন মোদি। অথচ আমদানিতে সস্তায় তেলে কিনে বিপুল কর চাপিয়ে বাড়ানো হয়েছে দাম। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন কর বৃদ্ধিতে কেন্দ্রের কোনও দায় না দেখে এতে রাজ্যের কর চাপানোকে দায়ী করে পেট্রোলের ওপর কর কমানোর অনুরোধ করেছেন। আগেই রাজস্থান ও মেঘালয় তাদের রাজ্যের কর ভ্যাট কমিয়েছে। এদিন পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম পেট্রোল ডিজেলে লিটারে যথাক্রমে এক টাকা ও পাঁচ টাকা দাম কমিয়েছে। বিপুল কেন্দ্রীয় কর চেপে থাকায় তাতে যদিও পেট্রোল ডিজেলের দাম খুব বেশি কমেনি।

আরও পড়ুন-আদালতের নির্দেশে ১৬ হাজার ৫০০ শিক্ষক পদে নিয়োগ আপাতত স্থগিত

বিরোধী শিবিরের দাবি, পেট্রোপণ্যের উপর করের পরিমাণ অনেকটাই বেশি। রাজ্য সরকারগুলির তুলনায় পেট্রোপণ্যে কেন্দ্র অনেক বেশি কর নেয়। গতকালই রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র (Amit Mitra) বলছিলেন,”এই মুহূর্তে প্রতি লিটার পেট্রোলে ৩২.৯০ টাকা ও ডিজেলপিছু ৩১.৮০ টাকা কর এবং সেস নিচ্ছে কেন্দ্র। সেখানে রাজ্য সরকার প্রতি লিটার পেট্রোলে মাত্র ১৮.৪৬ টাকা ও ডিজেলে লিটারপিছু মাত্র ১২.৫৭ টাকা কর নিচ্ছে।” বিরোধীদের দাবি, পেট্রোপণ্য থেকে কেন্দ্রের আয় যেহেতু রাজ্য সরকারের তুলনায় অনেক বেশি। তাই মূল্য নিয়ন্ত্রণ করার দায়ও কেন্দ্রের উপর বেশি বর্তায়। স্বাধীনতার পর থেকে কেন্দ্রই মূলত পেট্রোপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে।

তাছাড়া, ঊর্ধ্বমুখী জ্বালানির মূল্য নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েকটি রাজ্য ইতিমধ্যেই উদ্যোগী হয়েছে। ইতিমধ্যেই কংগ্রেস (Congress) শাসিত রাজস্থান এবং ছত্তিশগড় পেট্রোপণ্যের উপর করছাড় দিয়েছে। একধাক্কায় অনেকটা দাম কমিয়েছে মেঘালয় সরকার। গতকাল পশ্চিমবঙ্গ সরকারও পেট্রল-ডিজেলে এক টাকা করে সেস কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সব মিলিয়ে ১৮টি রাজ্য ইতিমধ্যেই পেট্রোপণ্যে ভ্যাট কমিয়েছে। একের পর এক রাজ্য যখন জ্বালানির দাম কমাতে এভাবে উদ্যোগী হচ্ছে, তখন মোদি সরকার কার্যত নির্বিকার।
Advt
Previous articleআদালতের নির্দেশে শিক্ষক পদে নিয়োগ স্থগিত, চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পাল্টা মামলা রাজ্যের
Next articleফের রাজনৈতিক “অজ্ঞাতবাস” শোভন-বৈশাখীর? মানহানি মামলার বয়ান রেকর্ড আদালতে