অপরাধীকে শোধরানোর নিদান, বাড়িতে থেকে দশটি বই পড়তে হবে

খায়রুল আলম, ঢাকা

যশোরে মাদক মামলার আরও একটি ভিন্নধর্মী রায় দিয়েছেন আদালত। দুই বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত পারভীন বেগমকে বাড়িতে থেকেই সাজা ভোগের আদেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এ সময় বাড়িতে থেকে পড়তে হবে ১০টি বই। আর মানতে হবে ৮টি শর্ত।

সমাজসেবা অধিদফতরের প্রবেশন অফিসারের নজরদারিতে থেকে তাকে এই সাজ ভোগ করতে হবে। তবে শর্ত ভঙ্গ করলে তাকে ২ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ১ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ মাসের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে কারাগারে থাকতে হবে।

মঙ্গলবার যশোরের যুগ্ম দায়রা জজ দ্বিতীয় আদলতের বিচারক শিমুল কুমার বিশ্বাস ভিন্নধর্মী এই রায় দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যুগ্ম দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) আইয়ুব খান বাবুল।

দণ্ডপ্রাপ্ত পারভীন বেগম শহরের আশ্রম রোডের গাড়োয়ান পট্টির মৃত ওহাব মুন্সির মেয়ে।

রায় অনুযায়ী যে বইগুলো পড়তে হবে সেগুলো হলো- ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখা জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলি, নীলিমা ইব্রাহিমের আমি বীরঙ্গনা বলছি, মালেকা বেগমের মুক্তিযুদ্ধে নারী, মুহাম্মদ জাফর ইকবালের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, আনিসুল হকের মা, জহির রায়হানের আরেক ফাগ্লুন, একুশের গল্প, সেলিনা হোসেনের নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি ও যাপিত জীবন, শওকত ওসমানের আর্তনাদ ও সৈয়দ শামসুল হকের আরও একজন।

একই সাথে অন্য শর্তগুলো হলো, সমাজসেবা অধিদফতরের প্রবেশন অফিসারের নজরদারিতে বাড়িতে থেকে কোনও ধরনের  অপরাধের সাথে জড়ানো যাবে না, সর্বত্র শান্তি বজায় রাখবেন এবং সকলের সাথে সদাচারণ করবেন, আদালত অথবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাকে কখনো তলব করলে যথাস্থানে হাজির হবেন, কোনো প্রকার মাদক সেবন, বহন, সংরক্ষণ এবং সেবনকারী, বহনকারী ও হেফাজতকারীর সাথে মেলামেশা বা চলাফেরা করতে পারবেন না, আদালত কর্তৃক প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে থেকে নিজের বাসস্থান ও জীবন ধারণের উপায় সম্পর্কে অবহিত করবেন, এই সময়কালীন প্রবেশন অফিসারের লিখিত অনুমতি ব্যতীত নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে যেতে পারবেন না।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০০৬ সালের ১৫ জুন আসামি পারভীনকে আটক ও তার কাছ থেকে ২০ পুরিয়া হেরোইন উদ্ধার করে পুলিশ। এই মামলায় আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর দীর্ঘ ১৫ বছরের মধ্যে আদালতে হাজিরা মিস করেননি পারভীন। এ মামলা ছাড়া তার আর কোনো মামলাও নেই।

স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগে প্রমাণিত হয়। আসামির সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত শর্তযুক্ত করে বাড়িতে থেকে সাজা ভোগের রায় দিয়েছেন বিচারক।

এর আগে গত সোমবার আজিমন বেগম নামে এক নারীকে দুই বছর কারাদণ্ড দিয়ে একই ধরনের শর্তে বাড়িতে থাকার রায় দেয়া হয়েছিল। তবে আজিমনকে বই পড়ার নির্দেশনা দেয়া হয়নি।

উল্লেখ্য, গত ৮ নভেম্বর উচ্চ আদালতের এমন একটি রায়ও প্রশংসিত হয়েছিল। সেদিন ইয়াবা মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মতি মাতবরকে বৃদ্ধ মায়ের সেবাযত্ন করাসহ তিন শর্তে প্রবেশনে পরিবারের সঙ্গে থাকার অনুমতি দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

অপরাধীকে শোধরানোর জন্য মানবিক গঠনমূলক এমন শর্তে প্রবেশন দিয়ে ঘোষিত এসব রায় সম্পর্কে আইনবিদরা বলছেন, আদালতের এমন উদ্যোগ খুবই ইতিবাচক ও আশাব্যঞ্জক। এতে সমাজে অপরাধে প্রবণতা কমবে।

Previous articleএবার করোনা-টিকা ষাটোর্ধ্বদের, বেসরকারি ক্ষেত্রে দাম দিতে হবে, ঘোষণা কেন্দ্রের
Next articleহোঁদল কুতকুত আর কিম্ভূতকিমাকার, যা বললেন মমতা