অভিযোগ প্রমাণিত হলে ৭ বছরের জেল হতে পারে নাসির-তামিমার

খায়রুল আলম,ঢাকা

ডিভোর্স পেপার ছাড়াই অন্যের স্ত্রীকে বিয়ে করার অভিযোগে ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তামিমা সুলতানা তাম্মির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। অভিযোগ আনা হয়েছে দণ্ডবিধির ৪৯৪/৪৯৭/৪৯৮ ও ৫০০ ধারায়। এই ধারাগুলোর সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছরের কারাদণ্ড।

একনজরে দেখে নিন কী কী ধারা:

ধারা : ৪৯৪

স্বামী বা স্ত্রীর জীবদ্দশায় পুনরায় বিবাহ করা।

কোনও ব্যক্তি যদি এক স্বামী বা এক স্ত্রী জীবিত থাকা সত্ত্বেও এমন কোনও পরিস্থতিতে বিবাহ করে, তবে ওই ব্যক্তি সাত বছর পর্যন্ত যে কোনও মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং সঙ্গে অর্থ দণ্ডেও দণ্ডিত হবে।

ধারা : ৪৯৭।
ব্যভিচার

কোনও ব্যক্তি যদি অপর কোনও ব্যক্তির স্ত্রী অথবা যাকে সে অন্য কোনও ব্যক্তির স্ত্রী বলে জানে বা তার অনুরূপ বিশ্বাস করার কারণ আছে এমন কোনও ব্যক্তির সঙ্গে উক্ত অন্য ব্যক্তির সম্মতি ও সমর্থন ছাড়া এইরূপ যৌনসঙ্গম করে যা নারী ধর্ষণের সামিল হয়, তবে সে ব্যক্তি ব্যভিচারের অপরাধের জন্য দোষী হবে এবং তাকে সাত বছর পর্যন্ত যে কোনও মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থ দণ্ডে, অথবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত করা যাবে।এই ক্ষেত্রে স্ত্রী দুষ্কর্মের সহায়তাকারী হিসেবে দণ্ডিত হবে না।

ধারা : ৪৯৮

কোনও বিবাহিতা নারীকে অপরাধমূলক উদ্দেশ্যে প্রলুব্ধকরণ বা অপহরণ বা আটক করা

কোনও ব্যক্তি যদি যে নারী অপর পুরুষের সঙ্গে বিবাহিতা এবং তা সে জানে বা তার অনুরূপ বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে, এইরূপ নারীকে কোনও ব্যক্তির সঙ্গে অবৈধ যৌনসঙ্গম করার উদ্দেশ্যে বিবাহিত পুরুষের নিকট থেকে বা সে পুরুষের স্বপক্ষে অপর যে ব্যক্তি সে নারীর তত্ত্বাবধায়ক সে ব্যক্তির কাছ থেকে অপহরণ বা প্রলুব্ধ করে নিয়ে যায় বা অনুরূপ কোনও নারীকে উপযুক্ত উদ্দেশ্যে গোপন বা আটক করে, তবে সে ব্যক্তি দু’ বছর পর্যন্ত যে কোনও মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থ দণ্ডে অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবে।

ধারা : ৫০০।
মানহানির শাস্তি

কোনও ব্যক্তি যদি অন্য কোনও ব্যক্তির মানহানি করে, তবে উক্ত ব্যক্তি দুই বৎসর পর্যন্ত যে কোনও মেয়াদের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থ দণ্ডে অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবে।

বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসীমের আদালতে তামিমার বর্তমান স্বামী রাকিব হাসান বাদী হয়ে এই মামলা করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ৩০ মার্চের মধ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

মামলার অভিযোগে থেকে জানাগিয়েছে, ২০১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাকিব হাসানের সঙ্গে আসামি তামিমা সুলতানার ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক ৩ লাখ এক টাকা দেনমোহরে বিয়ে এবং রেজিস্ট্রি হয়।

বিয়ের পর থেকে তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সংসার করতে থাকেন। তোবা হাসান নামে তাদের একটি মেয়ে রয়েছে। যার বর্তমান বয়স ৮ বছর।

মামলা সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, তামিমা পেশায় একজন কেবিন ক্রু। তিনি সৌদি এয়ারলাইন্সে কর্মরত রয়েছেন। চাকরির সুবাদে তিনি ২০২০ সালের ১০ মার্চ সৌদিতে যান। মহামারির কারণে জরুরি অবস্থায় সেখানেই থেকে যান। এই সময় ফোন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাকিবের সঙ্গে তার যোগাযোগ হতো।

মামলায় বলা হয়, ‘চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি তামিমার সঙ্গে ক্রিকেটার নাসির কথিত বিয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে তা বাদীর নজরে আসে। বাদী এই ধরনের ছবি দেখে হতবাক হয়ে যান। পরবর্তীতে পত্রিকায় এই বিষয়ে সংবাদ দেখে তিনি ঘটনার বিষয় নিশ্চিত হন।

এ ছাড়া তাদের গায়ে হলুদ ও বিয়ে পরবর্তী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান যথাক্রমে ১৭ ও ২০ ফেব্রুয়ারি সম্পন্ন হয়। যা ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে।

মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘তামিমা বাদীর সঙ্গে বিয়ের সম্পর্ক চলমান থাকা অবস্থায় নাসিরের সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। নাসির বাদীকে ফোন করে জানান যে সম্পূর্ণ বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত এবং তার নিকট তামিমা আছেন। বাদীর সঙ্গে বিয়ের সম্পর্ক চলমান থাকা অবস্থায় তামিমার নাসিরকে বিয়ে করা যা ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় আইনে সম্পূর্ণ অবৈধ। আসামির সঙ্গে তিনি অবৈধ বিয়ের সম্পর্ক দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন, যা নিকৃষ্ট ব্যভিচার। ’

অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘আসামীদের এরূপ অনৈতিক ও অবৈধ সম্পর্কের কারণে বাদী ও তার শিশু কন্যা মারাত্মকভাবে মানসিক বিপর্যস্ত হয়েছেন। আসামিদের এহেন কার্যকলাপে বাদীর চরমভাবে মানহানি হয়েছে যা বাদীর জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।’

মামলার বাদী রাকিব বলেন, আমি প্রতিকার চেয়ে নাসির ও তামিমার বিরুদ্ধে মামলা করেছি।মামলায় তামিমার মাকেও আসামি করতাম। মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে তাকে আসামি করিনি। হাজার হলেও আমি তাকে মা বলে ডেকেছি।’

Previous articleহঠাৎ সরলো প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীর নিরাপত্তা, রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন
Next articleএবার করোনা-টিকা ষাটোর্ধ্বদের, বেসরকারি ক্ষেত্রে দাম দিতে হবে, ঘোষণা কেন্দ্রের