সোনার বাংলা’ গড়তে ‘বিষাক্ত সাপ’-এর ভূমিকায় মিঠুন? কণাদ দাশগুপ্তর কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

প্রাক্তণ নকশালাইট, প্রাক্তণ আলিমুদ্দিন- ঘনিষ্ঠ, প্রাক্তণ তৃণমূল- সাংসদ রবিবার থেকে গেরুয়া শিবিরের ‘কোবরা’৷

বাঙালিবাবু সেজে ব্রিগেড ময়দানে এসে পদ্ম-ছাপ উত্তরীয় গলায় নিলেন মিঠুন চক্রবর্তী ৷
মঞ্চে দাঁড়িয়ে বললেন, “আমি গর্বিত আমি বাঙালি।” তবে নিজের পরিচয়টা দিলেন, “আমি জলঢোঁড়া নই, বেলেবোড়া নই, আমি জাত কোবরা”৷ এত ঘন ঘন ছাপ-বদলে পারদর্শী ‘গোখরো’ বাঙালি আগে দেখেনি৷

বেশ কিছুদিন ধরে সলতে পাকানোর কাজ চলছিলো৷ মাসখানেক আগে তিনি ঘুরে এসেছেন নাগপুরে মোহন ভাগবতের ডেরা থেকে৷ তার পরেও অনেকের সঙ্গে অনেক আলোচনা হয়েছে৷ এমনিতেই মিঠুন চক্রবর্তী যথেষ্ট বিব্রত ছেলের মামলা, উটির ‘দ্য মনার্ক’ হোটেল নিয়ে৷ চাপ ছিলো কি’না, থাকলে কোন ইস্যুতে ছিলো বা কতখানি ছিলো, তা এখনও প্রকাশ্যে আসেনি বটে, তবে স্পষ্ট বোঝা যায়, নির্দিষ্ট কোনও শর্তেই (না’কি টোপে) মিঠুন চক্রবর্তী সরাসরি বিজেপিতে যোগ দিলেন৷

দেশের যে কোনও নাগরিকের মতো তিনিও রাজনীতিতে যোগ দিতেই পারেন৷ বিজেপিও করতে পারেন৷ কিন্তু মিঠুন চক্রবর্তীর থেকে বহুগুণ কম ওজনের একাধিক তারকা তো দিল্লিতে বসেই ‘গেরুয়া’ রং-এ রাঙিয়ে দলে সমাদর পাচ্ছেন৷ তাহলে তিনি এই বয়সে ঠা-ঠা রোদ্দুরে বাংলায় ঘুরে ঘুরে “মারবো এখানে….” বলে বেড়াবেন, এটা হজম করা মুশকিল৷ বিজেপিতে যোগ দিতে তিনি এতটাই আগ্রহী ছিলেন যে ব্রিগেডে তিনি বলেই বসেন,
“মোদিজির সঙ্গে একমঞ্চে থাকবো, এটা আমার কাছে বহুদিনের স্বপ্ন”। স্ক্রিপ্ট অনুসারে নাম না করে তৃণমূলকে আক্রমণ শানিয়ে বলেছেন, “মারব এখানে, লাশ পড়বে শ্মশানে”৷ এবং “আমি জাত গোখরো” বলে খুব পরিষ্কার ভাষায় বিজেপির নেতা-কর্মীদের আশ্বস্ত করলেন, ‘সোনার বাংলা’ গড়তে তিনি ‘বিষাক্ত সাপ’-এর ভূমিকাই পালন করতে চান৷

২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের আগে মিঠুন, তাঁর গ্ল্যামারকে সঙ্গী করে রাজ্যজুড়ে তৃণমূলের হয়ে প্রচারের পর হঠাৎই বেপাত্তা হয়ে যান। প্রায় তখনই সারদা-কাণ্ডেও ভেসে ওঠে মিঠুন চক্রবর্তীর নামও৷ সংবাদমাধ্যম তখন জানায়, একাধিকবার না’কি ED তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদও করছে।

কেন্দ্রে তখন এই নরেন্দ্র মোদিরই সরকার৷ বস্তুত তখন থেকেই তিনি চলে যান স্বেচ্ছা-নির্বাসনে৷ কিছুটা অভিমানী হয়ে গুটিয়ে নেন নিজেকে৷ রাজ্যসভা যাওয়াও ছেড়ে দেন৷ তার মাঝেই প্যানক্রিয়াটাইটিসের ব্যথা মাথাচাড়া দেয়৷ খুব কষ্ট পেয়েছেন৷ নার্সিংহোমেও ভর্তি হয়েছিলেন মিঠুন। ব্যথা একবার এতটাই ওঠে যে দূরে নেওয়া যায়নি, বাড়ির এক কাছের মধ্যবিত্ত নার্সিংহোমে দিন চারেক ভর্তিও ছিলেন। অভিমান বাড়তে থাকে৷ মোবাইল ফোন ব্যবহার করাও ছেড়ে দেন, পাছে কারো সঙ্গে কথা বলতে হয়৷ নিজেকে সরিয়ে নেন তীব্র বিতৃষ্ণায়।

কেন অভিমান?
একটা সময় ছিলো যখন মিঠুন চক্রবর্তী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে টানা কয়েক বছর সবার থেকে বেশি আয়কর দিয়েছেন। অগণিত জনহিতকর কাজে জলের মতো অর্থ খরচ করেছেন৷ অথচ সারদা -কাণ্ডে নাম যুক্ত হওয়ায় তাঁর সযত্নলালিত বিশ্বাসযোগ্যতার ব্র্যান্ডিং আক্রান্ত হয়৷ মিঠুন চক্রবর্তীর ঘনিষ্ঠ বৃত্তের কাছে শুনেছিলাম, তিনি নাকি একেবারে ভেঙে পড়েন, হতাশগ্রস্ত হন৷ যে রাজ্যের মানুষের জন্য তিনি এত কিছু করেছেন, তাদের একজনও পাশে দাঁড়িয়ে মুখ খুললেন না ! একজনও এগিয়ে এসে বললেন না এই লোকটা আমাদের জন্য কী কী করেছে! জানিনা, এসব কথা কতখানি সত্যি ৷ কিন্তু সত্যি হলে, সেই রাজ্যে ফের সক্রিয় রাজনীতিতে কেন ফিরতে চাইলেন মিঠুন চক্রবর্তী ? শুধুই পদ্ম-সম্মান বা আরও ‘বড়’ কোনও প্রত্যাশায় ?

এটা হয়তো ঠিক যে মিঠুনের বিজেপিত যোগদানে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে তৃণমূল, কিন্তু এদিনের ব্রিগেডে যেভাবে নেহাতই এক অভিনেতা হিসাবে নিজেকে পেশ করলেন মিঠুন, তাতে যেন মনে হচ্ছিলো ওই ‘গোখরো’ শরীরে বিষের পরিমান অনেকটাই কমে গিয়েছে৷

মিঠুন চক্রবর্তীর জন্য সময় কী নিয়ে অপেক্ষা করছে, আগামী ইতিহাস।

Previous articleট্রাফিক পুলিশের তৎপরতায় হারানিধি পেলেন দরিদ্র শ্রমিক, উদ্যোক্তা ওসি সৌভিক
Next article‘বহিরাগত’ নয়, স্থানীয় প্রার্থী চাই’, বিক্ষোভ বিজেপির