বিকল্প কোথায়? অসুস্থ শরীরেও প্রচারে নামতে হবে মমতাকেই, কণাদ দাশগুপ্তর কলম 

 

কণাদ দাশগুপ্ত

নন্দীগ্রামের বিরুলিয়া বাজার এলাকার এক ঘটনায় আহত হয়ে বুধবার রাত থেকে SSKM-এর উডবার্ন ওয়ার্ডের ১২.৫ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন তিনি। প্রাথমিকভাবে ৪৮ ঘন্টা পর্যবেক্ষণে থাকবেন তিনি। তারপর পরিস্থিতি অনুসারে পরবর্তী পরামর্শ দেবেন চিকিৎসকরা৷

মুখ্যমন্ত্রীর শারীরিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে ওই হাসপাতালের অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “ওনার বাঁ পায়ের গোড়ালি ও পায়ের পাতায় সিভিয়র ইনজুরি রয়েছে। ডানদিকের কাঁধে ও কব্জিতে চোট আছে। ঘটনার পর থেকেই তিনি ট্রমার মধ্যে রয়েছেন। ঘটনার পর থেকে বুকে ব্যাথা ও শ্বাসকষ্টও অনুভব করছেন মুখ্যমন্ত্রী”।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী যে ধরনের আঘাত পেয়েছেন, তাতে সাধারণত দেড় থেকে দু’মাস বিশ্রামে থাকা প্রয়োজন৷ বিশ্রামে না থাকলে অথবা জোর করে পায়ের ব্যবহার হলে আনুষাঙ্গিক একাধিক সমস্যা তৈরি হতে পারে।

আর চিকিৎসকদের এই পর্যবেক্ষণের পরই তৃণমূলের অন্দরে দুশ্চিন্তার ছায়া৷ তাহলে কি ভোটের প্রচারে এবার আর অংশই নিতে পারবেন না তৃণমূল সুপ্রিমো ? মমতার নির্বাচনী প্রচার নিয়ে গভীর ধোঁয়াশা তৈরি হতে চলেছে৷
দলের একাধিক নেতা এবং চিকিৎসকদের অনুমান, প্রথম দু’পর্যায়ের ভোটে নেত্রীর পক্ষে দলের প্রচারে অংশ নেওয়া সম্ভব তো হবেই না, পরবর্তীতে কী হবে, তা বোঝা যাবে চিকিৎসকদের মতামত জানার পর৷
এ’দিকে, দ্বিতীয় দফায়, আগামী ১ এপ্রিল নন্দীগ্রামের নির্বাচন৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই তাঁর মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন বুধবার৷ নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে তাঁর প্রচার কর্মসূচিও প্রায় তৈরি হয়ে গিয়েছে৷ হাতে সময়ও বেশি নেই৷ ১৮-১৯ দিন পরই ওখানে নির্বাচন৷ এই মুহুর্তে মুখ্যমন্ত্রীর শারীরিক পরিস্থিতির যে বিবরণ চিকিৎসকরা দিয়েছেন, তাতে কমপক্ষে আগামী ৭-১০দিন তাঁর পক্ষে বাইরে বেরোনো সম্ভব নাও হতে পারে৷
তাছাড়া, শুধুই নিজের কেন্দ্র নয়, তৃণমূলনেত্রীকে প্রতি ভোটেই রাজ্যজুড়ে শতাধিক সভা,পদযাত্রা করতে হয়৷ এবারও তার অন্যথার প্রশ্নই নেই৷ প্রতিটি প্রার্থীই জানেন, দলনেত্রীর একটি কর্মসূচির যে প্রভাব, গোটা দলের সব ক’জন নেতানেত্রী একযোগে ময়দানে নামলেও সেই প্রভাবের দশ শতাংশও স্পর্শ করতে পারবে না৷ ফলে, দলনেত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ায় অজানা এক আশঙ্কায় প্রতি মুহুর্ত কাটাতে হচ্ছে দলীয় প্রার্থীদের৷ প্রথম দু’পর্যায়ের প্রার্থীদের অবস্থা তো আরও সঙ্গীন ৷

এটা নিশ্চিত, হাসপাতালের বেডে শুয়েও তৃণমূল সুপ্রিমো এই ভাবনাতেই আচ্ছন্ন৷ তিনি জানেন, তুলনায় কঠিন এবারের নির্বাচনে
বিরোধীদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার ‘এবিলিটি’ দলের কারোর নেই৷ প্রতিটি ‘ডাকসাইটে’ নেতাই নেত্রীর আলোয় আলোকিত৷
নির্বাচনের প্রাক্কালে তাঁকে যদি হাসপাতালে বা বাড়িতে কাটাতে হয়, তাহলে তৃণমূলের উপর চাপ যে বৃদ্ধি পাবে, তা সবথেকে ভালো জানেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই৷ তাঁর মানসিক জোর প্রবল৷ শুধু মনের জোরেই তিনি নানা অসাধ্যসাধন করেছেন৷ তাই প্রথম দু’দফায় চিকিৎসকরা অনুমতি না দিলেও বাকি ছ’দফার প্রচারে তিনি অবশ্যই ফিরবেন, শুধুই মনের জোরে৷

আবার, এটাও হতে পারে, প্রবল ইচ্ছাশক্তির জোরে শারীরিক এই পরিস্থিতিতেও এক সপ্তাহের মধ্যেই নেত্রী প্রচারে যাবেন৷ কপ্টারে যাবেন, সভাস্থলে থাকবে বিশেষ অ্যাম্বুল্যান্স ইত্যাদি৷ প্রয়োজনে হুইল চেয়ার বা স্ট্রেচারের সাহায্য নিয়েও দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেন তিনি৷ পূর্ণ সুস্থ না হলেও তিনি প্রচার করবেন, দলীয় প্রার্থীদের হয়ে ভোট প্রার্থনা করবেন, জিতিয়ে আনবেন দলের সৈনিকদের৷

আর এরপরেও ফলপ্রকাশের পর বিরোধীরা যদি কোনও কারনে সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে পৌঁছে যায়, তখন হয়তো দেখা যাবে অসুস্থ মমতা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দলের যে প্রার্থীদের তিনি জিতিয়ে আনলেন, তাদেরই কেউ কেউ ‘রাজ্যের স্বার্থে’ হাঁটা লাগাবেন অন্যদিকে৷

রাজনীতি বড়ই বিষম বস্তু৷

Previous articleভাগ্নে চান মামলা প্রত্যাহার, নারাজ মৃত কুরবানের দাদা
Next articleচ‍্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বিদায় নিল বার্সেলোনা