Saturday, August 23, 2025

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন পরিবহন ব্যবস্থা চালু হলে উপকৃত হবে দুই দেশই। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, এর মাধ্যমে বাংলাদেশের আয় বাড়তে পারে ১৭ শতাংশ আর ভারতের বাড়বে অন্তত আট শতাংশ। গত সপ্তাহে ‘কানেক্টিং টু থ্রাইভ: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড অপারচুনিটিস অব ট্রান্সপোর্ট ইন্টেগ্রেশন ইন ইস্টার্ন সাউথ এশিয়া’-প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। চুক্তি শক্তিশালী করতে দেশগুলো কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা এবং এর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে বিনিয়োগের সুপারিশও করা হয়েছে বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে।

এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যে ভারতের অবদান প্রায় ১০ শতাংশ আর ভারতের মোট বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবদান মাত্র এক শতাংশের মতো। অথচ পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকান দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্যের ভাগ প্রায় ৫০ শতাংশ এবং মোট বাণিজ্যে অবদান অন্তত ২২ শতাংশ। অবশ্য ভারতের কোনও প্রতিষ্ঠানের একটি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাণিজ্য করতে যে খরচ হয়, সেই তুলনায় ব্রাজিল বা জার্মানির কোনও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসা করলে খরচ হয় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কম।

পূর্বেকার এক বিশ্লেষণে ধারণা করা হয়েছিল, দুই দেশের মধ্যে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি হলে ভারতে বাংলাদেশের রফতানি একলাফে ১৮২ শতাংশ বাড়তে পারে এবং বাংলাদেশে ভারতের পণ্য রফতানি বাড়তে পারে ১২৬ শতাংশ। বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, দুই প্রতিবেশীর মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আরও বহুগুণ বাড়বে। সেক্ষেত্রে ভারতে বাংলাদেশের রফতানি ২৯৭ শতাংশ এবং বাংলাদেশে ভারতের রফতানি ১৭২ শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনার কথা বলা হয়।

গত এক দশকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য অনেকটা বেড়েছে ঠিকই, তারপরও এটি বর্তমান সম্ভাবনার চেয়ে অন্তত ১০ বিলিয়ন ডলার কম। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্বল পরিবহন ব্যবস্থা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সীমান্তকে আরও স্থূল করে দিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা হয়েছে, দু’দেশের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত পোস্ট বেনাপোল-পেট্রাপোল অতিক্রম করতে কয়েক দিন লেগে যায়। অথচ পূর্ব আফ্রিকাসহ বিশ্বের অন্য অঞ্চলগুলোতে একই পরিমাণ পণ্য পারাপারে সময় লাগে ছয় ঘণ্টারও কম।

বর্তমানে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতীয় ট্রাক চলাচলের অনুমতি নেই। এর ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল দেশটির বাকি অংশ থেকে একপ্রকারে বিচ্ছিন্নই বলা যায়। ভারতীয় যানবাহনগুলোর ওই অঞ্চলে যাওয়ার একমাত্র পথ ‘‘চিকেন’স নেক’’ বলে পরিচিত শিলিগুড়ি করিডোর। এর জন্য অনেক দীর্ঘ এবং ব্যয়সাপেক্ষ পথ পাড়ি দিতে হয় তাদের। উদাহরণস্বরূপ বিশ্বব্যাংক বলেছে, ভারতের আগরতলা থেকে কলকাতায় পণ্য পরিবহনের জন্য শিলিগুড়ি করিডোরের মধ্য দিয়ে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। অথচ বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যাওয়ার অনুমতি পেলে এই দূরত্ব দাঁড়াত মাত্র ৪৫০ কিলোমিটার। বাংলাদেশের সীমান্ত ভারতীয় ট্রাকগুলোর জন্য উন্মুক্ত থাকলে আগরতলার পণ্যগুলো মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূরের চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আনা-নেওয়া করা যেত। আর তা হলে ভারতের পরিবহন খরচ কমে যেত অন্তত ৮০ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন পরিবহন ব্যবস্থা চালু হলে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলাই আর্থিকভাবে লাভবান হবে, তবে লাভের সবচেয়ে বড় ভাগটি যাবে পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে। আর ভারতে উপকার পাবে উত্তর-পূর্বের আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম ও ত্রিপুরা এবং পশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গসহ উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলো।

Related articles

প্রাপ্য চায় বাংলা, উপহার না: মোদিকে জবাব তৃণমূলের

বাংলার মানুষ উপহার চায় না, প্রাপ্য চায়। উপহার দিয়ে বাংলার মানুষকে অপমান করবেন না। বাংলায় বরাদ্দ নিয়ে শুক্রবার...

অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থ শাহ, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা মোদির: কটাক্ষ তৃণমূলের

অনুপ্রবেশ ইস্যুকে বার বার জাগিয়ে তুলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আদতে নিজেদের ভুল নিজেরাই চোখ আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।...

রাজ্যে শুরু SIR প্রস্তুতি: একাধিক পদক্ষেপ নির্বাচন কমিশনের

গোটা দেশেই এসআইআর লাগু হবে ঘোষণা করে দিয়েছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার (Gyanesh Kumar)। বিহারে ৬৫ হাজার...

আস্থা কোথায়? প্রধানমন্ত্রীর সভার দিন বুঝিয়ে দিলেন দিলীপ, কটাক্ষ তৃণমূলের

দৃশ্য এক, বিজেপির নক্ষত্রখচিত মঞ্চ। মালা, উত্তরীয়তে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে (Narendra Modi) বরণ করছেন একের পর এক বঙ্গবিজেপির...
Exit mobile version