‘মোদিজি জনপ্রিয়, কিন্তু দিদির থেকে বেশি নন’, জানালেন প্রশান্ত কিশোর

“মোদি’জির জনপ্রিয়তা অবশ্যই আছে৷ কিন্তু তিনি দিদির থেকে বেশি জনপ্রিয় নন”।

বক্তা, তৃণমূলের ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর৷ কোন অস্ত্রে ‘বিজেপি-বধ’ করবেন, তৃণমূলকে জেতাতে ঠিক কোন কৌশলে আস্থা রাখছেন, এমন অনেক কথাই স্পষ্টভাবে জানালেন ‘ইণ্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর এক সাক্ষাতকারে৷

কী বললেন তিনি একাধিক প্রশ্নের উত্তরে :

◾বাংলার এবারের ভোটকে অন্য রাজ্যের থেকে আলাদা কেন ভাবছেন ?

⏹ এই নির্বাচন অন্যান্য নির্বাচনের থেকে আলাদা৷ গত ৩০-৩৫ বছরে বাংলার ক্ষমতাসীন দলকে কেন্দ্রের শাসক দল কখনই এভাবে চ্যালেঞ্জ জানায়নি। যখন বামফ্রন্ট ক্ষমতায় ছিল, তাদের কখনই তৎকালীন ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়নি৷ এই প্রথমবার বাংলার একটি আঞ্চলিক শাসকদলকে জাতীয়স্তরের শাসকদলের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে৷ ওরা যে কোনও মূল্যে জিততে চাইছে৷ এটা ঠিক, একটি কেন্দ্রীয় দল, বিশেষত কেন্দ্রের শাসক দল তার নিজস্ব Mobility বা গতিশীলতা, সক্রিয়তা নিয়ে আসে। তাছাড়া, যখন দুটি আঞ্চলিক দল ভোটে লড়াই করে, তখন সেই ভোটের ‘হাইপ’ অনেক কম হয়। কিন্তু যদি কোনও কেন্দ্রীয় শাসক দল, কোনও ক্ষমতাসীন আঞ্চলিক দলকে চ্যালেঞ্জ করে, তখন সেই ভোট গোটা দেশের শিরোনামে চলে আসে৷ সেকারনেই গোটা দেশের মিডিয়া বাকি চার রাজ্যের নির্বাচনের থেকে বাংলাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এতেই স্পষ্ট হয় ২০২১-এর বাংলার নির্বাচন কেন সবার থেকে আলাদা ৷

◾বাংলায় বিজেপি’র রণকৌশল ঠিক কী? আপনার কী মনে হয়?

⏹ বাংলার জন্য মোটামুটি পাঁচদফা কৌশল সাজিয়েছে বিজেপি৷ পর পর বলতে হলে এ রকম দাঁড়ায়:

• প্রথম এবং প্রধান হচ্ছে মেরুকরণ। ভোটারদের মেরুকরণের চেষ্টা করছে ওরা। গুজরাটে, উত্তরপ্রদেশে এই কৌশলেই ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে। বাংলায় তা হওয়া অসম্ভব৷

• দ্বিতীয়ত, বিজেপি বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইমেজ নষ্ট করতে এবং তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি করতে চেয়েছিল।

• তৃতীয়ত, তৃণমূলের রাজনৈতিক অস্তিত্বে সংকট তৈরির চেষ্টা চালিয়েছে৷ এই কাজ করতে বিজেপি সব ধরনের পথ ব্যবহার করেছে। তৃণমূলের নেতা ও কর্মীরা দিদির উপরই বিশ্বাস রাখছেন। এটাই ভিত্তি তৃণমূলের।

• চতুর্থ কৌশল, বাংলার তফসিলী সম্প্রদায়ের সমর্থন পাওয়া। বিজেপির এবারের টার্গেট মতুয়া সম্প্রদায়। মতুয়ারা বৃহত্তর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। ওদিকে আর একটি বড় সম্প্রদায় নমশূদ্ররা বিজেপির পক্ষে ভোট দিয়েছিল৷ এখন পরিস্থিতি অনেক বদলে গিয়েছে৷

• পঞ্চমটি হলো, বিজেপি স্রেফ মোদির জনপ্রিয়তার উপরে ভরসা করছে, প্রোজেক্টও করছে৷

আসলে, বিজেপি প্রথম থেকেই চাইছে তৃণমূলকে নড়বড়ে করে দিতে। একটা দল থেকে ২০-২৫ জন বিধায়ক চলে যাওয়া বড় বিষয়। কিন্তু দলত্যাগীদের দিয়ে কোনও দলকে হারানো যায় না। লোকসভা নির্বাচনের পর তৃণমূল অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
তাছাড়া নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তাও রয়েছে। বিজেপির সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা তিনি। সেটাকেই আঁকড়ে ধরেছে বিজেপি৷ কিন্তু বাংলায় মোদি কখনই দিদির থেকে বেশি জনপ্রিয় নন। এটি আমাদের বড় সুবিধা।

◾ আপনি বলেছেন, বিজেপি বাংলায় ‘ডবল ডিজিট’ পেরোবে না। কোন অঙ্কে এ কথা বলছেন ?

⏹ ২০২০-র নভেম্বর- ডিসেম্বর নাগাদ বিজেপিকে নিয়ে খুব পাবলিসিটি হয়েছিল যে তারা নাকি রাজ্যে ২০০ আসন পাবে। আমাদের এ কথা বোঝানো দরকার ছিলো, যে এটি আদৌ সত্যি নয়। আমি এখনও এই কথা বলছি, নিশ্চিত হয়েই বলছি, বিজেপি বাংলায় ‘ডবল ডিজিট’ পেরোবে না। আমরা নির্বাচনে জেতার জন্য যে দলের হয়ে কাজ করি, তাদের জেতানোর জন্য যা যা করা দরকার আমরা সব করি।

◾ প্রার্থী বাছাই বা কৌশল রচনায় আপনি দিদিকে কোনও নির্দিষ্ট বিষয়ে পরিকল্পনা দেন?

⏹ আমরা যে কাজ করি তা নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা করা হয়। এটা ঠিক নয়৷ আমরা নির্বাচনে জয়লাভের জন্য যখন যে দল বা নেতা- নেত্রীর হয়ে কাজ করি, তাদের জন্য যা করা দরকার তা আমরা করি। আমরা সব কিছুই করি। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ডেটা দেওয়া, সব করি। আপনাদের কী ধারনা যে বিজেপি একাধিক পেশাদার সংস্থার ইনপুট ছাড়াই প্রার্থী নির্বাচন করে? তা কখনই নয়।

◾অনেকেই বলছেন, তৃণমূল যে এভাবে ভাঙ্গছে, তার জন্য আপনিই দায়ী। শুভেন্দু অধিকারীর মতো নেতারাই এই অভিযোগ করেছেন। কী বলবেন আপনি?

⏹ তৃণমূলকে নির্বাচনে জিততে সবরকম সাহায্য করতে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নতুন নতুন বন্ধু বানানোর জন্য এই পেশায় আমি আসিনি। শুভেন্দু অধিকারী নিঃসন্দেহে তৃণমূলের একজন শক্তিশালী নেতা। কিন্তু তিনি নিজেই তো মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ২০১৪ সাল থেকে তিনি বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। যে কোনও দলের উচিত এ ধরনের নেতাদের মুক্তি দেওয়া। আমার অভিমতও তাই৷ প্রশান্ত কিশোরকে ওরা দোষ দিতেই পারেন। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। মুকুল রায়ের মতো অনেক নেতা’ই তো অভিযোগ করেছেন যে দিদি আর তৃণমূল দল চালাচ্ছেন না। দল নাকি আমি চালাচ্ছি৷ আমার কথা খুব স্পষ্ট, অমিত শাহ বিজেপি পরিচালনা করেন। সংগঠনের সমস্ত সিদ্ধান্ত তিনিই নেন। কিন্তু তাঁর মানে তো এই নয় যে নরেন্দ্র মোদি দল চালান না। মোদির কিছু বলার অধিকার নেই৷ দিদি’ই তৃণমূলের প্রধান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া তৃণমূল কংগ্রেস হতে পারে না৷

Advt

Previous articleনিমতা বৃদ্ধা মৃত্যুকাণ্ড: ডেথ সার্টিফিকেট লিখলেন বিজেপির চিকিৎসক প্রার্থী! চক্রান্ত দেখছে তৃণমূল
Next articleমদনের সঙ্গে রঙ খেলা নিয়ে বিতর্ক থামাতে পায়েল-শ্রাবন্তীদের হয়ে ক্ষমাপ্রার্থী পার্নো