‘অনুপ্রবেশ’ নিয়ে অমিত শাহের মন্তব্যে চটে লাল হাসিনা সরকার, নিন্দা বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রীর

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (amit shah) বাংলাদেশ (Bangladesh) সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানেন না। বাংলাদেশ নিয়ে ওঁর জ্ঞানের আলোর অভাব রয়েছে। বাংলার ভোটের প্রচারে মোদি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বাংলাদেশ সম্পর্কিত মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে এই প্রতিক্রিয়া দিলেন হাসিনা সরকারের বিদেশমন্ত্রী (foreign minister of Bangladesh) এ কে আব্দুল মোমেন (a.k.abdul momen)। প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ সফরে গিয়ে সেদেশের মুক্তিযুদ্ধে নিজের গ্রেফতার হওয়ার কাহিনি শুনিয়ে তামাম বাঙালিকে চমকে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এমন অকথিত তথ্যের সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন ভারতেরই বহু মানুষ। বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে মোদি এসব প্রচার করছেন বলেও অভিযোগ ওঠে। আর এবার রাজ্যের ভোট প্রচারে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের অভিযোগ তুলে যে কারণ ব্যাখ্যা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, তাতে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে ওপার বাংলায়। তাঁদের দেশ সম্পর্কে অমিত শাহের জ্ঞান সীমিত এবং তিনি বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করছেন বলে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। হাসিনা সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর এই প্রতিক্রিয়ার পর প্রশ্ন উঠছে, রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে কি ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে জটিলতা তৈরি করে ফেললেন অমিত শাহ?

পশ্চিমবঙ্গে এবারের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলা দখলে মরিয়া গেরুয়া বহিনী। এখানে প্রচার চালাতে কার্যত বাংলায় ডেলি প্যাসেঞ্জারি করছেন মোদি-শাহ। সম্প্রতি বাংলার ভোট নিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, বাংলাদেশে পর্যাপ্ত খাবারের অভাব রয়েছে। সেদেশে বহু মানুষ নিজেদের রাষ্ট্রেই অভুক্ত থাকেন। ফলে তাঁরা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়েন। এই কারণেই বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ বাড়ছে। বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশিদের এই অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ করা হবে।

অমিত শাহর এই বক্তব্য ঘিরেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে। আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ সম্পর্কিত এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী। বাংলাদেশ সম্বন্ধে শাহের জ্ঞান নিয়ে কটাক্ষ ছুঁড়ে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এই ধরণের মন্তব্য ‘দুর্ভাগ্যজনক’ ও ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে দাবি করেছেন। বাংলাদেশের প্রথম সারির সংবাদপত্র প্রথম আলো’র প্রতিবেদনে মোমেন বলেছেন, বিশ্বে এমন অনেক জ্ঞানী লোক আছেন, যাঁরা দেখার পরেও দেখেন না, জানার পরেও বুঝতে পারেন না। কিন্তু অমিত শাহ যে মন্তব্য করেছেন তার জবাবে আমাকে বলতেই হচ্ছে যে, বাংলাদেশ সম্পর্কে ওঁর জ্ঞান খুবই সীমিত। বর্তমানে এদেশে অভুক্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা নেই। এমনকী দেশের উত্তর পূর্ব প্রান্তেও ক্ষুধার জন্য হাহাকার নেই। একই সঙ্গে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রীর দাবি, সামাজিক উন্নয়নের সূচকে একাধিক ক্ষেত্রে ভারতের থেকেও এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। তিনি জানান, বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ ভালো শৌচাগার ব্যবহার করেন, ভারতে এই সংখ্যা ৫০ শতাংশের আশেপাশে। শিক্ষিতদের উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ঘাটতি থাকলেও তুলনায় কম শিক্ষিতদের এমন কোনও বিপদের মুখোমুখি হতে হয় না। অন্যদিকে, প্রায় লক্ষাধিক ভারতীয় বাংলাদেশে কাজ করছেন। এখন আর কাজের জন্য বাংলাদেশিদের ভারতে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না বলে জানিয়েছেন হাসিনা সরকারের বিদেশমন্ত্রী। এ কে আব্দুল মোমেন মনে করিয়ে দেন, বাংলাদেশিদের ভারতে অনুপ্রবেশ নিয়ে কথা বলার আগে বক্তার বাংলাদেশ সম্পর্কে জ্ঞানের আলো বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে।

আরও পড়ুন:মানা হচ্ছে না দূরত্ব-বিধি, মুখে নেই মাস্ক, দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে চলছে পুজো

Advt

Previous articleনববর্ষের দিনই চোখে পড়ল ইস্টবেঙ্গল ক্লাব ও বিনিয়োগকারী সংস্থার দ্বন্দ্ব
Next articleপ্রচার পর্ব শেষের পরেও বারপুজোর মাধ্যমে জনসংযোগ! কামারহাটি বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে কমিশনে অভিযোগ