প্রচারের অর্থ নয়ছয় হচ্ছে, রাজ্য নেতাদের সতর্ক করলেন শাহ

রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে মরিয়া বিজেপি৷ গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই সব ধরনের ‘অস্ত্র’ নিয়ে বাংলায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে দিল্লির শীর্ষস্তর৷ কেন্দ্রের শাসকদলের কাছে বাংলা দখলই মুখ্য, অর্থ কোনও সমস্যাই নয়৷ এ পর্যন্ত কত শত কোটি টাকা যে বঙ্গ-বিজেপির হাতে দেওয়া হয়েছে, এক দমে তার হিসাব দিতে ব্যর্থ হবেন রাজ্যের শীর্ষ নেতারা৷ যখন যে পরিমান টাকা দাবি করা হয়েছে, প্রশ্ন না করেই তা বরাদ্দ করেছেন অমিত শাহ৷ ভোট প্রচারে তৃণমূল বিজেপি-র বিরুদ্ধে এই ‘অর্থবল’-এর অভিযোগই তুলছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বারবার ‘বিজেপি টাকা ছড়াচ্ছে’ বলে অভিযোগ তুলেছেন।

সূত্রের খবর, ভোটের শেষলগ্নে এসে অমিত শাহের মনে ধন্দ তেরি হয়েছে৷ বঙ্গ-বিজেপির নেতাদের টাকার চাহিদা ক্রমশ আকাশছোঁয়া হচ্ছে৷ ওদিকে এ পর্যন্ত হয়ে যাওয়া ভোটের ময়না তদন্তের ফলাফল বলছে, যে টাকা ‘বিনিয়োগ’ করা হয়েছে, তার সঙ্গে ‘লাভ’-এর অঙ্কে বিরাট তফাত রয়েছে৷ এমনিতেই গুজরাটিদের সুনাম রয়েছে, তাঁরা ব্যবসা- বাণিজ্য ভালো বোঝেন৷ তার ওপর ওই গুজরাটি যদি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন, তাহলে ব্যবসার ‘লাভ-লোকসান’ ধরতে পারার অসংখ্য মাধ্যম তাঁর হাতে থাকে৷ আর এখানেই ফেঁসেছেন বাংলার বিজেপি নেতৃত্ব ৷

দিল্লি থেকে বেশ মোটা পাইপের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা আসছে বাংলা-দখল অভিযানে৷ আর সেই পাইপের জায়গায় জায়গায় অসংখ্য বড় বড় ছিদ্র আবিষ্কার করেছেন শাহ স্বয়ং৷ সেই সব ফুটো দিয়ে বিপুল পরিমান টাকা বেপথে চলে যাচ্ছে বঙ্গ-বিজেপির হাতে গোনা জনাকয়েক নেতার ইশারায়৷ এতদিন দিব্যি চলছিলো, কিন্তু দিনকয়েক আগে বঙ্গনেতারা ফের টাকার দাবি করায় সন্দেহ হয় শাহের৷ সন্দেহ নিরসনে স্রেফ সতর্ক করেই থামেননি, সূত্রের খবর, দিল্লি থেকে একদল দক্ষ Chartered Accountant এ রাজ্যে উড়িয়ে এনেছেন শাহ৷ একদিকে যখন ভোটপ্রচার তুঙ্গে, তখনই এই হিসাবরক্ষক-বাহিনী দিল্লি থেকে আসা ‘গেরুয়া’ পাই-পয়সার হিসাব করছেন, কথা বলছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত বঙ্গ-নেতাদের সঙ্গে৷ নেহাতই কথা বলা নয়, এই দলকে প্রয়োজন হলে জেরা করার অধিকারও শাহ দিয়েছেন৷

এখানেই শেষ নয়৷ বাংলা ভোটে অংশ নেওয়া বিজেপির প্রার্থীদের খরচে লাগাম পড়াতে কড়া বার্তাও দিয়েছেন অমিত শাহ৷ জানা গিয়েছে, খরচ ‘নিয়ন্ত্রণ’ মানে কম খরচ করা নয়, শাহের নির্দেশ, দলের দেওয়া টাকা বড় নেতারা এবং প্রার্থীরা কে, কোন খাতে, কী ভাবে খরচ করছেন তার হিসেব দিতে বলা হয়েছে রাজ্যনেতাদের।
নেহাতই অকারনে এই ইস্যুতে বঙ্গনেতাদের উপর চটে যাননি শাহ৷ সূত্রের খবর, তাঁর কাছে তথ্য এবং নথি-সহ গুচ্ছ গুচ্ছ কাগজ জমা পড়েছে, যেখানে দেখানো হয়েছে বাংলার কিছু নেতা কীভাবে অকারনে কোটি কোটি টাকা খরচের গল্প করেছেন৷ এইসব অভিযোগের সারবত্তা খুঁজে পেয়েছেন অমিত শাহ৷ তিনি নিশ্চিত হয়েছেন, বঙ্গ-বিজেপির একাধিক নেতা এবং অনেক প্রার্থী অযথা খরচ করছেন অথবা খরচ করেছেন বলে দাবি করছেন। অনেকের নামে সুস্পষ্ট এমন অভিযোগও প্রমানিত হয়েছে যে দলের দেওয়া টাকা প্রচারের কাজে পুরোটা খরচ না করে নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন৷ এতেই ক্ষেপে গিয়েছেন বাংলা-দখল অভিযানের ‘চিফ-অফ- দ্য-স্টাফ’ অমিত শাহ৷

সূত্রের খবর, দিনকয়েক আগে রাজ্য নেতাদের কার্যত ধমক দিয়েই শাহ বলেছেন, কোথাও যেন একটা টাকাও নিজের কাছে রেখে দেওয়া না হয় অথবা অপচয় না হয়৷ খরচে নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাকি তিন দফার ভোটে প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি। এই প্রতিনিধিরা খরচের বিষয়টিও দেখবেন৷ বঙ্গ-বিজেপির নেতাদের শাহের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যে রাস্তা গাড়িতে যাওয়া সম্ভব সেখানে অযথা হেলিকপ্টার ব্যবহার করা যাবে না। একান্ত হেলিকপ্টার নিলেও এমন জায়গায় নামতে হবে যাতে গাড়িতে করেই বাকি কর্মসূচি শেষ করা যায়। অমিত শাহ নিজেও নাকি সেই নীতি মানছেন।


প্রসঙ্গত, এখনও পর্যন্ত বিজেপি-র বিরুদ্ধে কোনও নির্দিষ্ট আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ কমিশনে জমা না পড়লেও ‘অর্থবল’ নিয়ে আক্রমণ চলছেই। এর কারনও আছে৷ গত ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ঘাটাল আসনে বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষের গাড়ি থেকে নগদ টাকা উদ্ধারের ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল বিজেপিকে। পিংলায় ১ লক্ষ ১৩ হাজার ৮৯৫ টাকা উদ্ধারের পাশাপাশি ভারতী ঘোষকে আটকও করে পুলিশ। এর পর আবার নগদ ১ কোটি টাকা নিয়ে আসানসোল স্টেশনে ধরা পড়েন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের এক সময়ের আপ্তসহায়ক গৌতম চট্টোপাধ্যায়। ওই সব ঘটনায় যথেষ্ট বিব্রত হতে হয়েছিল দলকে। এবার তাই ভোটের শেষলগ্নে এসে যথেষ্ট সতর্ক থাকার চেষ্টা করছেন শাহ৷

অমিত শাহের এই সব নির্দেশের পরে বঙ্গ- বিজেপির একাধিক নেতানেত্রীই ‘ভীত’ হয়ে পড়েছেন৷ ভয়ের কারন, বাংলা-জয় করতে দিল্লি টাকার অভাব রাখেনি৷ অথচ হয়ে যাওয়া ভোটপর্ব বলছে ক্ষমতার করিডোরের গণ্ডি থেকে এখনও অনেকটাই দূরে আছে দল৷ ফল খারাপ
হলে দিল্লি-নেতারা সব কিছুর কৈফিয়ত চাইবেন৷ কোটি কোটি টাকার হিসাবও বাদ পড়বে না

Advt

Previous articleগায়ের জোরে নয়, ভালোবেসে মানুষের কথা ভেবে কাজ করতে হয় : মমতা
Next articleকরোনা রুখতে রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক মুখ্যসচিবের