বাংলা দখলের লড়াইয়ে বিজেপি (BJP) নিজেদের লোককেও বলি চড়াতে পারে। এবং বিরোধীদের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এমন কৌশলের অভিযোগ আগেও বহুবার উঠেছে। ফের একবার ভোটবঙ্গে (West Bengal Assembly Election) বিজেপি আইটি সেলের (BJP IT Cell) প্রতারণা, মিথ্যাচারের পর্দা ফাঁস। নিজেদের কু-কর্ম ঢাকতে গিয়ে শেষরক্ষা হলো না, ঠাঁই হলো শ্রীঘরে। পুলিশের হাতে ধরা পড়ল গেরুয়া বাহিনীর আইটি সেলের তিন কর্মী।

এই তিন বিজেপি কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিজেদের বেআইনি অস্ত্রের গুলিতে জখম হওয়ার ঘটনা আড়াল করতেই দুষ্কৃতীদের গুলি ছোড়ার মিথ্যা গল্প ফাঁদে শুভময় কুণ্ডু, সুমন সাহানা, সুমন পাখিরা ও দেবাশিস রায়। গুলি চালানোর ঘটনায় তারা সুকৌশলে ভোটের মুখে বিরোধী তৃণমূলের নামও জড়িয়ে দেয়। তবে শেষ পর্যন্ত পুলিশি তদন্তে পর্দা ফাঁস হয়। মুখোশ খুলে যায় বিজেপি আইটি সেলের “দক্ষ” কর্মীদের।

নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বিজেপির সুমন সাহানা, সুমন পাখিরা ও দেবাশিস রায়কে পুলিশ গ্রেফতার করে। শুভময় হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেই তাকেও হেফাজতে নিয়ে তদন্ত করা হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। গ্রেফতার তিন অভিযুক্তকে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ১৪দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।

এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন তৃণমূল।
গোঘাটের তৃণমূল প্রার্থী মানস মজুমদারের দাবি, বিজেপি ষড়যন্ত্র করে শান্ত গোঘাটকে অশান্ত করতে চাইছে। তাঁর কথায়, “বিজেপি প্রার্থী হিসেবে বিশ্বনাথ কারকের নাম ঘোষণার পর থেকেই গোঘাটে বেআইনি অস্ত্র মজুত শুরু হয়েছে। বিজেপি সকলের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে। এখানে তৃণমূলকে সরিয়ে বিজেপি সন্ত্রাস তৈরি করতে চাইছে। এবার পুলিশের তৎপরতায় বিজেপির এই দুষ্কৃতীরা মিথ্যা বলেও ধরা পড়ে গিয়েছে। আমরা চাইছি পুলিশ এখানকার বিজেপি দুষ্কৃতীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করুক। প্রচুর বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার হবে চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি। গোঘাটে শান্তি বজায় থাকুক এটাই আমরা চাই।”
ঠিক কী ঘটেছিল গোঘাটে?

জানা গিয়েছে, শনিবার দুপুরে বিজেপির আইটি সেলের কর্মী শুভময় কুণ্ডু গুলিবিদ্ধ হয়। সুমন সাহানা, সুমন পাখিরা ও শুভময় বাইকে যাওয়ার সময় পোড়াবাগান জঙ্গলের কাছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে বলে সেই সময় অভিযোগ ছিল। সেই গুলি শুভময়ের পায়ের পাতায় লাগে বলে অভিযোগ। ঘটনার সরব হন গোঘাটের বিজেপি প্রার্থী। আরামবাগ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শুভময়কে তিনি দেখতেও আসেন। বিজেপি গোঘাট থানায় এনিয়ে অভিযোগও দায়ের করে। এরপরই ঘটনার তদন্তের নামে পুলিশ। যা বুমেরাং হয় বিজেপির জন্য।

হাসপাতালে শুভময়ের কাছ থেকে ঘটনা শোনার পর তার দুই সঙ্গীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তাদের তিনজনের কথায় অসঙ্গতি থাকায় সুমন সাহানা ও সুমন পাখিরাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে পুনর্নির্মাণ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় আরেক বিজেপি কর্মী দেবাশিস রায়কে। পুলিশি জেরায় শেষ পর্যন্ত তারা সকলেই ভেঙে পড়ে। এরপর পুলিশের কাছে সত্য ঘটনা তুলে ধরে তারা।

আরও পড়ুন:হাসপাতালে ভর্তি কয়লা কাণ্ডে অভিযুক্ত বিকাশ মিশ্র

গোঘাট থানার ওসি অনিলকুমার রাজের কথায়, জেরায় অভিযুক্তরা জানিয়েছে, শুভময় ও সুমনরা ভাদুরের জঙ্গলে শনিবার দেবাশিসের সঙ্গে দেখা করতে যায়। সেখানে সবাই মিলে তাড়ি খেয়ে নেশা করে। সেই সময় অসতর্ক মুহূর্তে শুভময়ের হাত থেকে গুলি ছিটকে পায়ে লাগে। এরপরই ওই তিনজন হাসপাতাল ও পুলিশের কাছে দুষ্কৃতীদের গুলি ছোড়ার মিথ্যা গল্প ফাঁদে। ওই ঘটনায় সুমন সাহানা, সুমন পাখিরা ও দেবাশিসকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুভময় সুস্থ হলেই হেফাজতে নেওয়া হবে।
