Thursday, November 13, 2025

কলসি ফাঁকা থাকলে আওয়াজ তো বেশি হবেই ! কণাদ দাশগুপ্তর কলম

Date:

কণাদ দাশগুপ্ত

আগেও এই প্রসঙ্গ একবার আলোচনা হয়েছে৷ শেষ দু’দফার ভোটের আগে আরও একবার কিছু বিষয় সামনে আনা দরকার৷

প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং করোনাক্রান্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত আদিত্যনাথের মতো জাতীয় রাজনীতির মহাতারকাদের বাংলায় এত দৌড়ঝাঁপ দেখে কোনও সিদ্ধান্তে আসার আগে একবার মাথায় আনুন দিল্লি বিজেপির প্রাক্তণ ‘হতভাগ্য’ সভাপতি মনোজ তিওয়ারি বা কিরন বেদির কথা৷ ২০১৫ সালে কিরন বেদি এবং ২০২০-এ মনোজ তিওয়ারি মোটামুটি জামাকাপড় গুছিয়ে রেখেছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার জন্য৷ বাংলায় প্রায় দু’মাস যাবৎ মোদি-শাহের যে তৎপরতা দেখা যাচ্ছে, ২০২০-এর দিল্লির ভোটে তার চতুর্গুন ছিলো এনাদের দৌড়ঝাঁপ৷ বিজেপির ‘মালব্য প্রচার কোম্পানি’ গোটা দেশে ছড়িয়ে দিয়েছিলো, দিল্লিতে নিশ্চিত ‘ডবল ইঞ্জিন’৷ মানুষ তা বিশ্বাস করাও শুরু করেছিলেন৷ শেষপর্যন্ত কী দাঁড়ালো ?
ফল প্রকাশের পর গোটা দেশ দেখেছে মোদিজি-শাহজি’র ‘অমানুষিক’ পরিশ্রম সত্ত্বেও দিল্লিতে বিজেপির প্রাপ্তি মোট ৭০ আসনের মধ্যে ৮টি৷ তবে ২০১৫-র থেকে ২০২০ সালে বিজেপি ভালো ফল করে৷ সেবার বিজেপি মোট ৩টি আসনে জিততে পেরেছিলো৷ ২০২০-এর ভোটে তার দ্বিগুণেরও বেশি আসন পায় গেরুয়া শিবির৷ ৫টি আসন বাড়িয়ে মোট ৮ আসন জয়ের সাফল্য অর্জন করেন মোদি-শাহ৷ এই দুই মেগাওয়েট নেতার পরিশ্রম ফলে একেবারে জলে যায়নি৷ তবে তখন অনেকে এটাও বলেছে, মাত্র ৫ আসন বাড়ানোর জন্য বিজেপি’র শীর্ষ নেতাদের এত পরিশ্রম, এত টাকা খরচ করার কোনও মানেই হয়নি৷ এর থেকে অনেক সহজ ছিলো, টাকার থলি নিয়ে অন্য দলের ৫-৭ বিধায়ক খরিদ করে নেওয়া৷ এতো বাঁ হাতের খেলা ছিলো ওনাদের কাছে৷ অনেক সস্তাতেও হতো৷

দিল্লিতে এ পথে হাঁটার কথা প্রথমদিকে বোধহয় বিজেপি মাথাতেই আনেনি স্রেফ ‘ওভার- কনফিডেন্স’-এর কারনে৷ ক্ষমতায় প্রায় পৌঁছে যাওয়ার কথা এখন বাংলায় যেভাবে প্রচার হচ্ছে, দিল্লি নিয়েও একই প্রচার ছিলো গেরুয়া শীর্ষস্তরের৷ সাধারণ মানুষ তখন ভেবেছিলেন,প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন বলছেন, তখন নানা এজেন্সির কাছ থেকে খবর নিয়েই বলছেন৷ ওনাদের ‘আসল’ খবর পাওয়ার সুযোগ ‘আপ’-এর থেকে অনেক বেশি৷ সেই তথ্যেই মোদি-শাহ সমানে গলা ফাটিয়েছিলেন, দিল্লির ক্ষমতা এবার বিজেপির করায়ত্ত হবেই৷ এত ক্ষমতা, এত এজেন্সি, এত মেগা- নেতা, এত অর্থ থাকা সত্ত্বেও দিল্লির ‘গ্রাউণ্ড-রিয়েলিটি’ বুঝতেই পারেননি মোদি-শাহ৷ অথচ এই শাহকে আসল চাণক্যের থেকেও বড় ‘চাণক্য’ বলতে পছন্দ করে তামাম গেরুয়া ব্রিগেড৷

বঙ্গ-ভোট ঠিক এমনটাই চলছে৷ প্রচারের ঢক্কা নিনাদ ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ জোরদার প্রচার চলেছে, ‘ইস বার, দো-শো পার’৷ এই ধরনের আওয়াজ তুলে দিল্লির মতো বাংলাতেও একই ভুল করছে নাতো বিজেপি ? কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি দিল্লির মতো বাংলার ভোট নিয়েও নাগাড়ে ভুল রিপোর্ট পেশ করছে না’তো সর্বোচ্চ টেবিলে ? সেই অসম্পূর্ণ তথ্যের উপর দাঁড়িয়েই মোদি- শাহ এবং তাঁদের ডেপুটিরা ‘ডবল ইঞ্জিন’-এ গাড়ি চালানোর দাবি করছেন নাতো ? পাশাপাশি মোদি-শাহের মুখে এই ‘দো-শো পার’ -এর আওয়াজ শুনে বঙ্গ-বিজেপির নেতা-কর্মীরা এক ধরনের আত্মতুষ্টিতেই ডুব দিয়েছেন৷ সবাই ভাবছেন, একটু ঢিলে দিলেও ক্ষতি নেই, আইবি রিপোর্ট হাতে নিয়েই তো শীর্ষনেতারা সরকার গঠনের ব্যাপারে সর্বাংশে নিশ্চিত হয়েছেন৷ এই আত্মতুষ্টিই বিজেপিকে শেষপর্যন্ত ৮০-৯০ আসনে না থামিয়ে দেয়৷

এসব প্রশ্ন এ কারনেই উঠছে, বাংলার Ground Reality এখনও বিজেপির দাবির সঙ্গে মিলছে না৷ এ কথা ঠিক, ২০১৬ -র ভোটে ৩ আসন পাওয়া দলটির আসন এবার অনেক বাড়বে৷ তবে ম্যাজিক-ফিগার স্পর্শ করার মতো পরিস্থিতি ভোটপর্বের আগে বা প্রথমভাগে বিজেপির অনুকূলে যতখানি ছিলো, এখন তা অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়েছে৷ করোনার বাড়বাড়ন্ত সত্ত্বেও শেষ তিন পর্বের ভোট একসঙ্গে করার প্রস্তাব খারিজ করার বিরূপ প্রতিক্রিয়াও পড়েছে জনমানসে৷ শেষ তিন পর্বে বিজেপি আশানুরূপ ফল নাও করতে পারে৷ শেষ দু’দফায় ভোট ৭১ আসনের৷ এখনও পর্যন্ত নির্বাচন হয়েছে ২২১ আসনে৷ তর্কের খাতিরে এবং বিজেপির কোলে ঝোল টেনেও যদি ধরা যায় ওই ২২১ আসনের ১০০ আসন বিজেপি পাবে, তাহলেও দরকার আরও প্রায় ৫০টি আসন৷ শেষ দু’দফার ৭১ আসনের মধ্যে ৫০ আসনেই বিজেপি জিতবে, এমন আশা যারা করছেন, তাঁরা ওই ‘দো-শো পার’-এর আবেগে ফুটছেন বলেই এই দাবি করছেন৷

তবে এটাও ঠিক, ঘটনাচক্রে মাথায় মাথায় এসে বিজেপি আটকে গেলে, ওই ফাঁক পূরণ করে দিতে পারে অন্য দলের বিধায়করা৷ এমন আশঙ্কা তৃণমূলনেত্রী নিজেও প্রকাশ করেছেন৷ কিন্তু এই পরিস্থিতি দেখা দিলে ওই ‘দো-শো পার’-এর জোরালো দাবি যে নিতান্তই ফাঁকা আওয়াজ তা প্রমানিত হবে৷ এটাও প্রমানিত হবে, গেরুয়া-চাণক্যরা দিল্লি থেকে কোনও শিক্ষাই নেননি৷

তাহলে বিজেপি এভাবে ‘সরকার গঠন করছিই’ বলে চিৎকার করছে কেন ? ভোট বাজারে নেমে ভোটারদের বিভ্রান্ত করা ছাড়া এর নির্দিষ্ট আর কোনও কারণই নেই৷ কলসি ফাঁকা থাকলে আওয়াজ তো একটু বেশি হবেই !

Related articles

“রিচার নামে স্টেডিয়াম ইতিহাস হয়ে থাকবে”, উচ্ছ্বসিত ঝুলন

শিলিগুড়িতে রিচা ঘোষের(Richa Ghosh)  নামে স্টেডিয়াম হচ্ছে শিলিগুড়িতে। কিছুদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা করেছেন বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটারের নামে...

‘হাঁটি হাঁটি পা পা’-র ট্রেলার-পোস্টার লঞ্চে ‘বাবা-মেয়ে’র রসায়নে চিরঞ্জিৎ-রুক্মিণী

অর্ণব মিদ্যার ছবি 'হাঁটি হাঁটি পা পা'-র ট্রেলার ও পোস্টার লঞ্চের জমজমাট অনুষ্ঠান হল ফ্লোটেলে। বৃদ্ধ বাবা ও...

লক্ষ্য ২০২৭! ২৫ নভেম্বর শুরু ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ

ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হচ্ছে আগামী ২৫ নভেম্বর থেকে। রাজ্যের সেচ ও জলপথ মন্ত্রী মানস...

রাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্কে স্বচ্ছতা আনতে চালু অনলাইন অডিট ব্যবস্থা

রাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা আনতে বড় পদক্ষেপ নিল রাজ্য সরকার। এ বার থেকে সমস্ত সমবায় সমিতি...
Exit mobile version