হার নিশ্চিত বুঝেই সম্ভবত ‌মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন শাহ! কণাদ দাশগুপ্তর কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

‘আর কোনও আশা নেই’, এটা বুঝেই সম্ভবত মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন বাংলার বিরুদ্ধে ‘খেলতে’ নামা গেরুয়া টিমের ‘ক্যাপ্টেন’ অমিত শাহ( amit shah) ৷

কমিশনের নতুন জারি করা সভা- বিধি অনুসারে শনিবার কোনও প্রচার সভা করতে শাহ কার্যত অস্বীকার করেছেন৷ জানিয়েছেন, বাংলায় আর কোনও সভা করবেন না৷ এদিন ভার্চুয়াল সভা অন্তত করতে পারতেন তিনি, প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার যেমন করেছেন৷ সে পথেও শাহ যাননি৷

আরও একটি কাজ করেছেন৷ বাকি দু’‌দফার ভোট শাহ ছেড়েছেন রাজ্য নেতৃত্বের হাতেই৷ বাংলা-দখলের খেলায় বঙ্গ-বিজেপিকে এতদিন ‘দুধে-ভাতে প্লেয়ার’ হিসাবে মোদি- শাহ গণ্য করেছেন৷ এর কারন, দিল্লি জানে, বাংলায় তাঁদের দলের ‘প্লেয়ার’ -দের দৌড় কতখানি৷ জানে বলেই ‘বড়’ ম্যাচে স্রেফ দর্শক হিসাবে রাখা হয়েছে বঙ্গ-বিজেপিকে৷ প্রার্থী বাছাই থেকে প্রচারের ধরন, কমিশন থেকে টাকা, সবকিছুই দিল্লির হাতে, বঙ্গ-টিম শুধু দেখেছে৷ এ সব জানার পরেও শেষ দু’দফার ৭১ আসনের ভোটের দায়িত্ব রাজ্য নেতাদের হাতে ছাড়ার অর্থ একটাই, দিল্লি নিশ্চিত হয়েছে, এই ‘ম্যাচ’ হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে, আর ঘাম ঝরিয়ে লাভ নেই৷

২০২০ সালের দিল্লি বিধানসভা ভোটেও বিজেপি এমন তেড়েফুঁড়েই নেমেছিলো এবং শেষভাগে এসে মিইয়েও গিয়েছিলো৷ এখানেও প্রায় একই ছবি৷ শেষপর্যন্ত দিল্লিতে বিজেপির দখলে যায় মোট ৭০ আসনের মধ্যে ৮টি৷ আর রাজনৈতিক মহলের ধারনা বিজেপি বাংলায় ৭০-এর বেশি আসন পাওয়ার জায়গায় নেই৷ ২০১৬-র ভোটে ৩ আসন পাওয়া দলের কাছে ২০২১-এর এই ‘গ্রোথ’ চমকপ্রদ ৷

ওদিকে, তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, নির্বাচন কমিশন আর কেন্দ্রীয় বাহিনী একসঙ্গে বিজেপিকে বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছে ভোটের প্রতিটি পর্বে। তবে সেই সুবিধা নিয়ে বিজেপি ৮ থেকে ১০টি আসন খুব বেশি হলে পেতে পারে। সব মিলিয়ে গেরুয়া শিবির এবার ৭০টির বেশি আসন পাবে না বলেও দাবি করেছেন তিনি। দীর্ঘদিনের রাজনীতিক মমতা৷ অসংখ্য নির্বাচনের অভিজ্ঞতা রয়েছে৷ নেত্রীর এই ‘অ্যাসেসমেন্ট’ প্রায় পুরোটাই মাটির কাছাকাছি৷ তার ভিত্তিতেই
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, তৃণমূলকে রোখার ক্ষমতা নেই বিজেপির৷ একইসঙ্গে দলীয় কর্মীদের জন্যও বার্তা দিয়েছেন মমতা৷ বলেছেন, “শেষ দুদফায় মরিয়া হয়ে উঠবে বিজেপি। ফলে দলের কর্মীদের EVM-এর দিকে আরও বেশি নজর দিতে হবে। প্রথমে EVM পরীক্ষার সময় ৩০টি ভোট দেওয়া হলেও, পরে অন্তত দুবার মেশিন অন-অফ করে দেখে নেওয়ার পরামর্শ তিনি দিয়েছেন।
আর এসবের পাশাপাশি এমন কথাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, যা বিজেপির ঘুম ওড়ানোর পক্ষে যথেষ্ট৷ প্রকাশ্যেই তিনি বলেছেন, ‘বিজেপি’র অন্দরে তাঁর লোক আছে। তারাই তাঁকে বিজেপির অন্দরমহলের খবরের জোগান দেন’। বঙ্গ-বিজেপি শীর্ষস্তরের সব লোকজনই যে বিশ্বস্ত, তা নয়৷ প্রায় সব দলের উপরের দিকেই দু-একজন এমন লোক আছে৷ তাঁরা দলে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থাকায় সব ধরনের খবরই পান৷ সেই খবর সঠিক সময় তুলে দেন অন্য দলের কাছে৷ তেমন লোকজন মারফতই তৃণমূলনেত্রী বিজেপির একাধিক কৌশল আগাম জেনেছেন৷ কারা ওই লোক, তা আন্দাজ করতে পারলেও এই মুহুর্তে বিজেপির কিছু করার নেই, সহ্য করা ছাড়া৷

মোটের উপর, এখন আর ‘ভালো’ নেই বিজেপি৷ বাকি দু’দফার ভোট করতে হবেই বলে ভেসে আছে বিজেপি৷ কথা বলতে হবে বলেই সেই পুরোনো কথাবার্তা এখনও চালায়ে যাচ্ছেন গেরুয়া নেতারা৷ খেলা হাতের বাইরে চলে গিয়েছে৷ বাকি দু’দফার ৭১ আসনের নির্বাচনে বিজেপি ১০-১৫টি আসন পেলে, তা হবে দুর্দান্ত ফল৷

ভোটপর্বের শুরুতে তৃণমূলের ভোট- স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোর বলেছিলেন, বিজেপির আসনসংখ্যা তিন অঙ্ক, পেরোবে না৷ নির্বাচনের শেষলগ্নে বিজেপির ‘বডি- ল্যাঙ্গুয়েজ’-ই বলছে, সেদিন ঠিকই বলেছিলেন প্রশান্ত কিশোর ৷

বিজেপি বরং এখনই ময়না তদন্তে নামুক, কেন এমন হলো ? খতিয়ে দেখুক, দলের বিশ্বস্ত আদিকর্মীদের ঘরে তুলে দিয়ে দলবদলু-দের সুয়োরানি বানানোর তথাকথিত ‘মাস্টারস্ট্রোক’ কতখানি আত্মঘাতী হলো !

আরও পড়ুন:দেশজুড়ে অক্সিজেনের হাহাকার , দেবদূত রতন টাটা

Advt

Previous articleদেশজুড়ে অক্সিজেনের হাহাকার , দেবদূত রতন টাটা
Next articleরাজস্থানের কাছে ম‍্যাচ হেরে দলের ব‍্যাটিংলাইনকেই কাঠগড়ায় তুললেন মর্গ‍্যান