হৃদরোগ ঠেকাতে ওমেগা-৩ এর জুড়ি মেলা ভার

অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে কোলস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। কিন্তু মনে রাখবেন সব চর্বি অস্বাস্থ্যকর নয়।

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর জন্য। বিষণ্ণতা, ক্যান্সার, ডিমেনসিয়া ও আর্থাইটিস থেকে রক্ষা করতে পারে। এটি পাওয়া যায় স্যামন মাছ, ওয়াল নাট বা বাদাম, স্পাইনাক বা পাতা শাক ইত্যাদি খাবারে। আমাদের দেশে ইলিশ মাছেও পাওয়া যায়। ইলিশ মাছ পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকলে সামুদ্রিক মাছ স্যামন এবং টুনা মাছ খাওয়া যেতে পারে। মাছ থেকে যে ধরনের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায় তা DHA এবং EPA নামে পরিচিত যার স্বাস্থ্য উপকারিতাও বেশি।

ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের আরেকটি রূপ হল ALA যা ভেজিটেবল ওয়েল, ওয়াল নাট বা বাদাম, গাঢ় পাতাযুক্ত শাক যেমন স্পাইনাকে পাওয়া যায়। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রক্তনালি, জয়েন্ট এবং অন্যস্থানের প্রদাহ কমিয়ে রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করতে সাহায্য করে, অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দনের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া রক্তনালিতে অস্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন অতিরিক্ত ট্রাইগ্লিসারাইড কমায়। এটি রক্তনালিতে প্ল্যাক গঠন প্রক্রিয়ার গতি কমিয়ে দেয়। কোলন ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার এবং প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

যদি আপনি মাছ খেতে না চান তাহলে ওমেগা-৩ সাপ্লিমেন্টস বা সম্পূরক খাবার গ্রহণ করতে পারেন। ওমেগা-৩ সাপ্লিমেন্টস ক্যাপসুল আকারে পাওয়া যায়।

ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবারের কয়েকটি নাম জেনে নিন

আখরোট: এক কাপ আখরোট থেকে ৩.৩৪৬ গ্রাম এএলএ পাওয়া যায়। প্রতিদিন এক মুঠ আখরোট খাওয়া দৈনিক ওমেগা-৩’য়ের চাহিদা পূরণ করে। সকালের জলখাবারে, স্যালাড সুপ হিসেবে এই বাদাম খেতে পারেন।

স্যামন মাছ: স্যামন মাছ উচ্চ মাত্রায় ওমেগা-৩ ফ্যাট ইপিএ এবং ডিএইচএ সমৃদ্ধ। এই বিশেষ চর্বি হৃদক্রিয়া উন্নত রাখতে ও প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। ‘হার্ট অ্যাটাক’-এর ঝুঁকি কমাতে ও রক্ত চাপ ঠিক রাখতে সপ্তাহে দুই দিন স্যামন মাছ খাওয়া ভালো। অতিরিক্ত ভেজে অথবা বেশি তেলে রান্না করে স্যামন মাছ খাওয়া ঠিক না। বেইক, রোস্ট এমনকি সিদ্ধ করে স্যামন মাছ খান। এতে বেশি উপকার পাওয়া যাবে।

তিসির বীজ: এ বীজে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ পাওয়া যায়। নিরামিষভোজি হয়ে থাকলে খাবারে তিসির বীজ যোগ করুন। এই বীজ ভেজে, এক চিমটি লবণ ছিটিয়ে খেতে পারেন।

এছাড়াও, ওটস, স্মুদি এমনকি কয়েকটি বাদাম, বীজ বা বেরির সঙ্গে মিশিয়ে তিসির বীজ খেতে পারেন।

তেল: স্বাস্থ্যকর তেল খেতে চাইলে রান্নায় ক্যানোলা তেল যোগ করুন। বলা হয় জলপাইয়ের তেলের চেয়েও এই তেল বেশি স্বাস্থ্যকর। চাইলে প্রতিদিনের রান্নায় এই তেল খেতে পারেন। এটা শরীরে ওমেগা-৩ যোগায় ও কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দেয়।

চিয়া বীজ: চিয়া বীজে কেবল ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড নয় বরং ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও ম্যাগনেসিয়ামেরও ভালো উৎস।

ডায়াবেটিকদের রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে চিয়া বীজ সহায়তা করে। স্মুদি, সালাদ, শেইক ও সিরিয়ালে চিয়া বীজ যোগ করে খেতে পারেন।
ওমেগা-৩ কি? কেন খেতে হবে?

অনেকেই শুনেছেন ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের প্রয়োজনীয়তার কথা। কিন্তু আসলে কী এই ফ্যাটি এসিড? কেনই বা খেতে হয় এই ওমেগা-৩? উপকারিতা কি কি? এসবের উত্তর জানা নেই অনেকেরই। চলুন জেনে নিই ‘ওমেগা-৩’ সম্পর্কে।

আমাদের মস্তিষ্কের শতকরা প্রায় ৬০ ভাগই এই ফ্যাটি এসিড। সেল মেমব্রেন, হরমোন, সিগনালিং ম্যাসেঞ্জার প্রভৃতি তৈরিতে ফ্যাটি অ্যাসিডের গুরুত্ব অনেক। উপকারী এই ফ্যাটি অ্যাসিডকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন বিজ্ঞানীরা- অতি প্রয়োজনীয় ও স্বল্প প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড। এদের মধ্যে অতি প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিডের অধিকাংশই মানুষের শরীর নিজে নিজে তৈরি করতে পারে না। খাবারের থেকে গ্রহণ করতে হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় হল ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এদিকে স্বল্প প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে শরীর নিজেই তৈরি করতে পারে।

ওমেগা-৩ কি?

‘ওমেগা-৩’ হল এক ধরনের অসম্পৃক্ত চর্বি। স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ মাত্রই জানেন, সম্পৃক্ত চর্বি হৃদযন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। তেল-চর্বিযুক্ত খাবার একটা বয়সের পর সে কারণে খেতে বারণ করা হয় । কিন্তু অসম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খেতে বাধা নেই, বরং এটি রক্তে উপকারী চর্বির পরিমাণ বাড়ায় এবং দেহের নানা উপকার করে।
প্রকৃতিতে কয়েক ধরনের ‘ওমেগা-৩’ চর্বি আছে। এর মধ্যে ‘আলফা লিনোলেইক’ এসিড পাওয়া যায় কিছু উদ্ভিজ্জ্ব খাবার বা তেলে। অন্যদিকে সামুদ্রিক খাবারে পাওয়া যায় ‘ইকোসা পেন্টানোয়িক অ্যাসিড’ এবং ‘ডোকোসা হেক্সানোয়িক অ্যাসিড’। চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে আমাদের খাদ্যে প্রধান উপাদান তিনটি।কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও চর্বি। এর মধ্যে চর্বির প্রধান কাজ হল দেহে শক্তি যোগানো। চর্বি থেকে সমপরিমাণ কার্বোহাইড্রেট বা প্রোটিনের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি শক্তি মেলে। শরীরের চর্বি আবার তিন ধরনের- ট্রাইগ্লিসারাইড, কোলেস্টেরল আর ফসফোলিপিড। এদের মধ্যে আবার ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। ট্রাই গ্লিসারাইড তৈরি হয় তিনটি ফ্যাটি এসিডের সঙ্গে গ্লাইসেরল মিলে। স্যাচুরেটেড বা সম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড দিয়ে তৈরি চর্বি শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে ধমনীর ভেতরের গায়ে লেগে যায়। এতে ধমনীর ব্যাস ক্রমশ ছোট হয়ে আসে। ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। দুধ, ঘি, মাখন, মাংস, ক্রিম, ডিম, চকোলেট ইত্যাদি সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস। এই সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডগুলো স্বাভাবিক তাপমাত্রায় কঠিন আর অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডগুলো তরল হয়। মোনোআনস্যাচুরেটেড চর্বি পাওয়া যায় সমস্ত ধরনের বাদাম, জলপাই তেল, এবং ক্যানোলা তেল এ। মোনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএল কমায়। তাই এর ব্যবহার নিঃসন্দেহে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল এর মাত্রা কমিয়ে কোলেস্টেরল জনিত ধমনীর রোগ প্রতিহত করে। পলি আনস্যাচুরেটেড চর্বি পাওয়া যায় সয়াবিন, সূর্যমুখীর তেল, ভুট্টা ইত্যাদিতে।

Advt

Previous articleব্রেকফাস্ট নিউজ
Next articleকেন সব ভারতীয় বিনামূল্যে ভ্যাকসিন পাবে না?