বঞ্চনার অভিযোগ ঘোচাতে উত্তরবঙ্গের ভার নিজের হাতেই রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী

কিশোর সাহা

মুখ্যমন্ত্রী নিজেই এবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। তা হলে উত্তরবঙ্গকে বঞ্চনার অভিযোগ কি আর তোলার সুযোগ থাকবে! ঘটনা এটাই। এবার কারও উপরে ভরসা না করে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের দায়িত্ব নিজের হাতে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সহযোগিতায় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে রেখেছেন মালদহের সাবিনা ইয়াসমিনকে। সব ঠিক থাকলে উত্তরকন্যা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর অথবা শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডে মাল্লাগুড়িতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের যে অফিস রয়েছে তার বাইরেও মালদহ ও দক্ষিণ দিনাজপুরে আরও শাখা খুলতে চলেছে।

সরকারি সূত্র অনুযায়ী, গত দু-দফায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের কাজকর্ম নিয়ে যে সব অভিযোগ ও প্রশ্ন উঠেছে এবং কী কী কাজ অসমাপ্ত রয়েছে তা নিয়েও বিশদে স্টেটাস রিপোর্ট তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। চলতি মাসেই ওই রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে বলে সরকারি সূত্রেই জানা গিয়েছে।

উল্লেখ্য, তৃণমূল ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে উত্তরবঙ্গকে আলাদা গুরুত্ব দিতে তৈরি হয় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর। প্রথম পাঁচ বছর সেই দফতরের দায়িত্বে ছিলেন ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির বিধায়ক গৌতম দেব। তার পরে দ্বিতীয় দফায় তাঁকে সেই দফতর থেকে সরিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। দ্বিতীয় দফায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী হন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। ঘটনাচক্রে, এবার গৌতমবাবু ও রবীন্দ্রনাথবাবু দুজনেই হেরেছেন। তাতে অনেকে আশা করেছিলেন দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুরের বিধায়ক বিপ্লব মিত্র সেই দফতরের দায়িত্ব পেতে পারেন। কিন্তু, সোমবার মন্ত্রিসভার দায়িত্ব বন্টনের তালিকা প্রকাশের পরে দেখা যায়, খোদ মুখ্যমন্ত্রী নিজের হাতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রক রেখেছেন। স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সাবিনাকেও সঙ্গে রেখেছেন।

তৃণমূলের অন্দরমহলের খবর, দু-দফায় উত্তরবঙ্গের দুজন প্রবীণ তৃণমূল নেতাকে দায়িত্ব দেওয়ার পরেও উত্তরবঙ্গকে বঞ্চনার অভিযোগ তেমন কমেনি বলে মুখ্যমন্ত্রী উদ্বিগ্ন। সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা ভোটে আগের দুই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতমবাবু ও রবীন্দ্রনাথবাবু দুজনেই হেরে গিয়েছেন। তা নিয়েই প্রাথমিক পর্যায়ে খোঁজখবরের পরে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যে খবর পৌঁছেছে সেই অনুযায়ী, দুই মন্ত্রীকে সামনে রেখে একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী সক্রিয় হওয়ায় উত্তরবঙ্গে বিরূপ প্রতিক্রিয়া বাড়ে। দুই মন্ত্রীর স্বজ্ঞানে ও অজ্ঞাতসারে ওই স্বার্থান্বেষী চক্র বহু ভূসম্পত্তির মালিক হয়ে গিয়েছে বলেও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ পৌঁছেছে। শুধু তা-ই নয়, দুই মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠদের একাংশের বিরুদ্ধেও উদ্ধত আচরণ, জবরদস্তি জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে।

এই রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রী পাওয়ার পরে হিসেব কষে দেখেছেন উত্তরবঙ্গের হাল-হকিকত। মোট ৫৪টি বিধানসভা আসন উত্তরবঙ্গে। তার মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ২৩টি আসন। বাকি আসন পেয়েছে বিজেপি। সূত্র অনুযায়ী, সব দিক খতিয়ে দেখেই উত্তরবঙ্গের সামগ্রিক দেখাশোনার দায়িত্ব নিজের হাতে রাখতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের প্রথম সারির নেতা তথা উত্তরবঙ্গের একজন প্রাক্তন পর্যবেক্ষক জানান, “গৌতমদা ও রবিদা” কী কী ভাল কাজ করেছিলেন ও কী কী ভুল করেছিলেন, তা নিয়ে একটা রিপোর্ট রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে। ওই প্রাক্তন পর্যবেক্ষক জানান, এবার উত্তরবঙ্গে উন্নয়নের কাজ পুরোপুরি মসৃণ মুখ্যমন্ত্রী নিজের হাতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর রেখেছেন।

Advt

 

Previous articleঢোঁক গিললেন মুকুল, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুই
Next article‘বাংলায় কেন শূন্য হলো?’ প্রদেশ কংগ্রেসের কৈফিয়ত তলব সোনিয়া গান্ধীর