বেনজির জীবিকা সঙ্কট দেশে, দ্বিতীয় ঢেউয়ে শুধু এপ্রিলেই কর্মহীন ৭৪ লক্ষ

বেনজির জীবিকা সঙ্কট ভারতে৷

করোনা সংক্রমণের প্রথম ধাক্কায় গত মার্চ মাসে শেষ হওয়া ২০২০-২১ আর্থিক বছরে রুটি-রুজি হারিয়েছেন ৯৮ লক্ষ চাকুরিজীবী।

আর দ্বিতীয় ঢেউয়ে (Corona Second Wave) শুধু এপ্রিল মাসেই কাজ হারিয়েছেন আরও ৭৪ লক্ষ মানুষ। ফলে, চলতি এপ্রিল থেকে ভারতে বেকারত্বের হার ফের ঊর্ধ্বমুখী হয়ে পৌঁছেছে ৮ শতাংশে।
ভয়ঙ্কর এই তথ্য প্রকাশ করেছে CMIE বা সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি। সংস্থার সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশে ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে দেশে চাকুরিজীবীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৮.৬০ কোটি৷ গত ৩১ মার্চ শেষ হওয়া ২০২০-২১ আর্থিক বছরে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৭.৬২ কোটি। সমীক্ষা বলছে কাজ হারিয়েছেন প্রায় ৯৮ লক্ষ ব্যক্তি।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের দাপট লাগামছাড়া হওয়ায়
পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে এ বছরের এপ্রিলে৷ গত মাসে বিপুল সংখ্যায় মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। পাশাপাশি, দ্বিতীয় ঢেউয়ের মোকাবিলায় বিভিন্ন রাজ্যে লকডাউন হওয়ায় দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জোর ধাক্কা লেগেছে৷ আর এই ধাক্কার খেসারত দিয়েছেন চাকুরিজীবীরাই৷ সমীক্ষায় উঠে এসেছে, দেশে গত মাসে বেকারত্বের হার মার্চের তুলনায় ১.৫ শতাংশ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৮%-এ৷ এমনই জানিয়েছে সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি৷


CMIE-এর সমীক্ষা বলছে:

◾চলতি বছরের মার্চের তুলনায় এপ্রিলে দেশে মোট শ্রমিক সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে ১১ লক্ষ।

◾মার্চে শ্রমিক সংখ্যা ছিল ৪২.৫৮ কোটি, এপ্রিলে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪২.৪৬ কোটি।

◾মার্চে কর্মসংস্থানের হার যেখানে ৩৭.৬% ছিল, এপ্রিলে তা কমে হয়েছে ৩৬.৮%।

◾মার্চে যেখানে ৩৯.৮ কোটি কর্মী কাজ করছিলেন, এপ্রিলে সেই সংখ্যা কমে হয়েছে ৩৯.০৭ কোটি।

◾এপ্রিলে নতুন করে কর্মহীন হয়েছেন ৭৩ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষ।

◾কাজের সন্ধানে থাকা শ্রমিকদের সংখ্যা কমার কারণ, বড় একটা অংশই কোনও কাজ না পাওয়ার তীব্র হতাশায় কাজ পাওয়ার আশা’ই ছেড়ে দিয়েছেন।

◾বিভিন্ন রাজ্যে লকডাউন বা কড়া বিধি জারি হওয়ায় মানুষ একদিকে কাজ পাচ্ছে না,

◾অন্যদিকে, অনেকে জীবিকা ছেড়ে দিতেও বাধ্য হয়েছেন। এর ফলে, দেশের অর্থনীতি- পরিকাঠামোয় মোট শ্রমিক সংখ্যা অনেকখানি কমছে।

◾এই মুহূর্তের অর্থনীতি বিপুল মানুষকে কাজ দেওয়ার অবস্থায় নেই৷
যাঁরা কাজ চাইছেন, তাঁদের প্রত্যেককে চাকরি দিতে পারছে না অর্থনীতি৷

◾যে কর্মহীনরা কাজ খুঁজছেন, অথচ পাচ্ছেন না, তাঁদের সংখ্যা মার্চের তুলনায় এপ্রিলে ৬২ লক্ষ বেড়ে হয়েছে ৩.৩৯ কোটি।

◾আংশিক লকডাউনের জন্য মোট জনসংখ্যার তুলনায় শ্রমিক সংখ্যা কমতে পারে। কিন্তু, কর্মসংস্থান কমার জন্য কোনও ভাবেই লকডাউন দায়ী নয়৷

◾বেশির ভাগ কাজ গিয়েছে কৃষি ক্ষেত্রে, যেখানে লকডাউনের কোনও প্রভাব পড়েনি।

◾এপ্রিলে যে ৭৩ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষ নতুন করে কর্মহীন হয়েছে, তাদের মধ্যে ৬০ লক্ষই কৃষি ক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত।

◾মার্চে কৃষি ক্ষেত্রে কাজ করেছিল ১২ কোটি মানুষ, তা এপ্রিলে কমে দাঁড়িয়েছে ১১.৪ কোটিতে।

◾এপ্রিলে দিনমজুর ও ছোট ব্যবসায় কর্মরত প্রায় ২ লক্ষ কর্মীর কাজ চলে গিয়েছে।

◾প্রায় ৩৪ লক্ষ বেতনভোগী কর্মী তাঁদের চাকরি হারিয়েছেন।

◾এই নিয়ে টানা ৩ মাস দীর্ঘমেয়াদি চাকরি ক্ষেত্রে কর্মীসংখ্যা কমেছে।

◾গ্রামীণ এলাকায় বেতনভোগী কর্মীদের চাকরি চলে যাওয়ার সংখ্যা শহরাঞ্চলের তুলনায় বেশি।

◾করোনার দ্বিতীয় ঢেউ অর্থনীতিকে স্তব্ধ করে দেওয়ায় চলতি অর্থ বছরে চাকরির সম্ভাবনা একেবারেই উজ্জ্বল নয়

CMIE তথ্য বলছে, অভূতপূর্ব জীবিকা সঙ্কট দেখা দিয়েছে ভারতে৷

Previous articleগাড়ি নিয়ে গোয়ার উদ্দেশে রওনা দেওয়া পৃথ্বী শাহকে আটকাল পুলিশ
Next article‘কোভিড ভয় পাওয়ার মতো কোনও ভূত নয়’, করোনাকে হারিয়ে সুস্থ ১০৩ বছরের স্বাধীনতা সংগ্রামী