বন্দিশালার ঠিকানা বদল ছাড়া চার অভিযুক্তের আর কোনও লাভ হলো কি’না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷
দু’দিনের দীর্ঘ শুনানিতেও কিন্তু জামিন পেলেন না চারজন৷ সেই বিচার বিভাগীয় হেফাজতেই থাকতে হবে৷ নারদ-মামলা আপাতত এখানেই দাঁড়িয়ে৷
চার অভিযুক্তের বাড়িকে কার্যত জেলখানা বানানোর নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট ৷ শুক্রবারের নির্দেশে বলা হয়েছে, জেল প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে অভিযুক্তদের গতিবিধি ৷ বাড়ির প্রবেশদ্বারে থাকতে হবে সিসি ক্যামেরা৷ কেউ দেখা করতে পারবে না৷ দুই মন্ত্রীকে সরকারি কাজ করতে হবে অনলাইনে৷ অফিসারদের সঙ্গে কথা বলতে হবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৷ অন্য কোনও ইস্যুতে ভিডিও কনফারেন্স করা যাবেনা৷ ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের পূর্ণাঙ্গ রেকর্ড রাখতে হবে৷ কেউ যদি দেখা করতে আসে, তার পরিচয় রেকর্ড করতে হবে ৷ গোটা বিষয়টি থাকবে রাজ্যের জেল প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে৷ এবং এই নির্দেশিকা লঙ্ঘিত হলে, সংশ্লিষ্ট পক্ষকে কড়া জবাবদিহির মুখে পড়তে হবে৷ সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, নারদ-মামলায় গত সোমবার গ্রেফতার হওয়া চার নেতা-মন্ত্রীর বন্দিশালার ঠিকানা বদল করার অনুমতি দিয়েছে হাইকোর্ট ৷ এইটুকুই৷
বরং চার অভিযুক্তের ভোগান্তি বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা ষোলোআনা৷ এই ভোগান্তি বা হয়রানি যে শুধুই ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র বা শোভন চট্টোপাধ্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকবে, এমন ভাবাও এখন ঠিক হবেনা৷ অন্য দু-একটি রাজ্যের মতো বাংলার রাজনীতিতেও সম্ভবত নিজের জায়গা করে নিতে চাইছে সিবিআই৷ ভবিষ্যতে ছোটখাটো ইস্যুতেও হস্তক্ষেপ করার ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন হয়ে গেলো বললে, খুব একটা বেশি বলা হবেনা৷
চার অভিযুক্তের হাতে নারদ-মামলার চার্জশিট তুলে দেওয়ার মতো ছোটমাপের একটি আইনিপ্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে ঝড় উঠে গেলো রাজ্য রাজনীতিতে৷ তোলপাড় হলো আইনি মহলও৷ অতীতে কোনও রাজ্যে, কখনও এক চার্জশিট পেশ করার ঘটনা ঘিরে হাইকোর্ট পাঁচ বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চ গঠন করেছে, এমন নজিরই বা কোথায় আছে, তা প্রবীণ আইনজীবীরাও বলতে পারছেন না৷
সুতরাং চার নেতা-মন্ত্রীর গ্রেফতারির ঘটনার গুরুত্ব শতগুণে বৃদ্ধি পেলো বলা হলে, একটুও বাড়তি কথা বলা হবেনা৷
পাঁচ বিচারপতির বিশেষ এজলাশের তিনজন এখনও এই মামলা শোনেননি৷ ফলে আগামী ২৪ মে প্রথম শুনানির দিন সিবিআই এবং অভিযুক্তদের আইনজীবীদের গোটা ঘটনা প্রথম থেকে বলতে হবে৷ বেঞ্চ থেকে প্রশ্ন আসতে পারে ঘন ঘন, সে সবের জবাব দিতে হবে৷ এবং নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে হবে৷ পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ মূলত দু’টি বিষয় বিচার করবেন৷ এক) অভিযুক্তরা জামিন পাবেন কি’না এবং ২) সিবিআইয়ের আর্জি অনুসারে নারদ-মামলা অন্য আদালতে স্থানান্তর করা যাবে কি’না৷
মামলা স্থানান্তর বলতে সিবিআই ঠিক কী বলতে চাইছে, তা এখনও অস্পষ্ট৷ অনেকে বলছেন, সিবিআই নারদ-মামলার বিচার পর্ব অন্য রাজ্যে নিয়ে যেতেই আবেদন করেছে৷ এর কারন ব্যাখ্যা করে হাইকোর্টে সলিসিটর জেনারেল বলেছেন, এ রাজ্যে নারদ-মামলার তদন্ত বা বিচারপর্ব নিরপেক্ষ ভাবে চালানোর পরিবেশ-পরিস্থিতি নেই৷ বিচার অবাধ, চাপমুক্ত বা নিরপেক্ষ হবেনা৷ সিবিআই তাদের এই দাবির পক্ষে ১৭ মে’র ঘটনার উল্লেখ করেছে৷ নিজাম প্যালেসের বিক্ষোভ, নিজাম প্যালেসে টানা ৫-৬ ঘন্টা মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি এবং জামিনের শুনানি চলার সময় আদালতে রাজ্যের আইনমন্ত্রীর উপস্থিতিকেই হাতিয়ার করেছে৷ এই কারন দেখিয়েই সিবিআই মামলা স্থানান্তরের আবেদন করেছে৷ শোনা যাচ্ছে, সিবিআইয়ের এ সংক্রান্ত আবেদন আদালতে পেশ করার আগেই আগাম শুনানি হয়েছে দু’দিন ধরে৷ সিবিআই ‘স্থানান্তর’ বলতে ঠিক কী বুঝিয়েছে, তা নিয়ে আইনি মহল দু’রকম ব্যাখ্যা দিয়েছে৷ কেউ বলছেন, সিবিআই নারদ-মামলা ভিনরাজ্যে নিয়ে যেতে চাইছে৷ কিন্তু অন্য রাজ্যে মামলা পাঠানোর নির্দেশ দেওয়ার অধিকার কোনও হাইকোর্টের নেই৷ এই আদেশ দিতে পারে একমাত্র শীর্ষ আদালত৷ অপরপক্ষ বলছে, ভিনরাজ্যে নয়, সিবিআই ‘আদালত-বদল’ করতে চাইছে৷ নারদ-বিচার প্রভাবমুক্ত, নিরপেক্ষ তখনই হতে পারে, যদি এই মামলার ট্রায়াল হয় হাইকোর্টে ৷ হাইকোর্ট এই অনুমতি দিতে পারে৷ সেই বিচারও করবেন পাঁচ বিচারপতি৷
ফলে ধরেই নেওয়া যায়, নারদ-মামলার জল অনেকদূর যাবে৷ নারদ-মামলার অন্যান্য অভিযুক্তদেরই শুধু নয়, কপালের ভাঁজ বাড়তে পারে আরও অনেকের৷ ভোটপ্রচারে বিরোধীরা যে সব অভিযোগ তুলেছিলো, একে একে সেই সব ইস্যুতেও তদন্তকারী সংস্থাগুলি সক্রিয়তা যে দেখাবেনা, তার নিশ্চয়তাই বা কোথায়? চার অভিযুক্ত শুক্রবারও জামিন না পাওয়ায় অনেক প্রশ্নই নতুনভাবে সামনে চলে আসছে বলে মনে করছেন আইনি মহলের একাংশ৷
আরও পড়ুন- বারাকপুরে প্রথম অক্সিজেন পার্লার চালু, উদ্বোধন করলেন রাজ