Monday, August 25, 2025

খাচ্ছেন-দাচ্ছেন, গল্প করছেন, টিভি দেখছেন, খবর পড়ছেন। গোল পার্কের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের নরম বিছানায় বহাল তবিয়তে কলকাতার প্রাক্তন মহানাগরিক শোভন চট্টোপাধ্যায়। ২৪ ঘন্টার জন্য তাঁর পরিচর্যায় মেন্টর, বন্ধুনী, পরামর্শদাতা, দুঃসময়ের সঙ্গী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিই জানাচ্ছেন, ডায়াবেটিকের ওষুধ ছাড়া কার্যত কোনও ওষুধই নিতে হচ্ছে না। যাকে বলে তন্দুরস্ত রয়েছেন বন্ধু।

নারদাকাণ্ডে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই শোভন বিতর্কে। নিন্দুকেরা বলছেন, সৌজন্যে অবশ্যই শোভন-বান্ধবী। নিজামে সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই দফতরে নাকি শোভন এমন কিছু আচরণ করেছিলেন, যা দেখে তদন্তকারী কর্তাদের চক্ষু ছানাবড়া, বিস্মিত। তাঁরা নাকি ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, ইয়ে আদমি কা ক্লার্ক বাননে কা আওকাত নেহি, ইয়ে ক্যায়সে মেয়র অউর মন্ত্রী বানা!

শোভন যেখানে শেষ করছেন, বৈশাখী সেখান থেকে শুরু করছেন। জেলে যাওয়ার পর বৈশাখী যেভাবে জেল গেটের দরজায় কার্যত মাথা কুটেছেন, তা দেখে এক বাংলা ফিল্মি তারকা হাসতে হাসতে বলেছেন, বিশ্বাস করুন, বাংলা তৃতীয় শ্রেণির ছবিতে শ্বাশুড়ি বাড়ি থেকে বৌমাকে বের করে দিলে যেভাবে মাথা কুটে কান্নায় ভেঙে পড়ে, আমার সেদিন শুধু সেই দৃশ্যের কথাই মনে পড়ছিল!

তারপর হাসপাতালে এসে আর এক কাণ্ড। শোভনের নাকি আবদার ছিল, বৈশাখীকেও তাঁর উডবার্ন ওয়ার্ডে একটা বেড দিতে হবে। তাতে কেউ কেউ ভ্রূকুঞ্চিত করলেও শোভন তাতে কিছু মনে করেননি। শুধু কি তাই! উডবার্নে শোভনকে যেমন অবাধে ঘুরতে দেখা গিয়েছে, তেমনি বৈশাখীকেও। রাতের পোশাকে শোভনকে দেখে কে বলবে তিনি বন্দি আসামি!

বন্ধু শোভনকে হাসপাতালে থেকে ছাড়াতে মরিয়া বৈশাখী রাজ্য সরকারকেও কাঠগড়ায় তোলেন। পালটা তাঁর দিকে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্রোক্তি, হাসপাতালটা কি মধুচক্র? আবদার করছেন, ঘুরে বেড়াচ্ছেন, ফাজলামি নাকি? সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্রকে বেকায়দায় ফেলছেন। রেগে গিয়ে বন্দিদশার সমস্ত নিয়মনীতি ভেঙে শোভন হাসপাতালের জানলা দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন। সাংবাদিক সম্মেলন কোথায়! ব্যক্তি আক্রমণ, আর বৈশাখী যে মহীয়সী, তা প্রমাণে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।

স্ত্রী রত্নার ভাই অর্থাৎ শালাবাবুর নামে নাকি শোভনের গোলপার্কের ফ্ল্যাট। সেখানেই যশের ভয়াবহ ভ্রূকুটির মাঝেও পরম শান্তিতে শোভন। নেবুলাইজার, অক্সিজেন হাতের কাছে থাকলেও সেসব লাগছে না। খাচ্ছেন, গল্প করছেন, খবর দেখছেন, কাগজ পড়ছেন। হাসপাতালের দেওয়া ওষুধ খেলেও কোনও অস্বস্তি নেই। তবে বুকে একটা চিনচিনে ব্যথা আছে। ডাক্তারকে অবশ্য ফোন পর্যন্ত করতে হয়নি। বাড়ির পরিবেশ বোধহয় সেসব কাটিয়ে দেবে। দাদার মৃত্যুর কথা জেনেছেন। তবে আপাত গৃহসুখে কাঁটার মতো বিঁধে রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে নারদ মামলা যাওয়ায়।

শোভন শুভানুধ্যায়ীরা শঙ্কায় বলছেন, সবই তো ঠিক আছে, কিন্তু কখন কী ঘটে যায়, কিচ্ছু বলা যায় না।

Related articles

চাঞ্চল্যকর ঘটনা পূর্ব মেদিনীপুরে! প্রতিশোধ নিতে শিক্ষকের হাতের কব্জি কেটে নিল যুবক

রোমহর্ষক ঘটনা! প্রতিশোধ নিতে শিক্ষকের হাতের কব্জি কেটে নিল যুবক। ঘটনার জেরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর...

একগুচ্ছ প্রকল্পের শিলান্যাস! মঙ্গলে জেলা সফরে বর্ধমানে মুখ্যমন্ত্রী

আগামিকাল, মঙ্গলবার বর্ধমানে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলা সফর ঘিরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ইতিমধ্যেই সাজিয়ে তোলা হয়েছে...

বিদ্যাপতি সেতুর সংস্কার শুরু, ধাপে ধাপে সরানো হবে দোকান

শিয়ালদহ ফ্লাইওভার বা বিদ্যাপতি সেতুর সংস্কার কাজ শুরু করতে চলেছে কেএমডিএ। তার আগে সেতুর নীচে গড়ে ওঠা দোকানগুলিকে...

দার্জিলিংয়ে প্রথম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, তাকদায় সূচনা নতুন দিগন্তের

চলতি সপ্তাহেই নতুন দিগন্ত খুলতে চলেছে দার্জিলিং পাহাড়ে। প্রথমবারের জন্য পাহাড় পাচ্ছে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে...
Exit mobile version