সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নবাণে খেই হারায় CBI, মামলা ফিরিয়ে নেন সলিসিটর জেনারেল

সুপ্রিম কোর্টে নারদ মামলার শুনানিতে মঙ্গলবার দুই বিচারপতি বিনীত শরন এবং বিআর গাভাই-এর একের পর এক আইনি প্রশ্নের মুখে কার্যত খেই হারান CBI- এর কৌঁসুলি দেশের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা৷ এদিন চার অভিযুক্তের তরফের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি এবং সিদ্ধার্ধ লুথরাকে সেইভাবে সওয়ালও করতে দেখা যায়নি৷ দেশের সলিসিটর জেনারেল কোনও সওয়ালেই বিচারপতিদের সন্তুষ্ট করতে পারেননি৷

শুনানির শুরুতেই মেহেতা সেই পুরোনো প্রশ্নই সামনে নিয়ে আসেন৷ বলেন, “নারদ-মামলায় বাংলার শাসক দলের প্রভাবশালীরা যুক্ত৷ গত ১৭ মে, চার অভিযুক্তকে গ্রেফতারের পর থেকেই কলকাতার পরিস্থিতি এমন হয়, অভিযুক্তদের আদালতে নেওয়া যায়নি৷ CBI-কোর্টে জামিনের আর্জির শুনানির সময়ও মন্ত্রীরা হাজির থেকে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছেন৷ ওখানে বিচার চালানোর পরিবেশ নেই৷ তাই CBI শীর্ষ আদালতে এসেছে৷ হাইকোর্টের গৃহবন্দি করার নির্দেশ খারিজ করে মামলা স্থানান্তরের নির্দেশ চাইতে এসেছি”৷ মামলা সরানোর পক্ষে আদালতে সওয়াল করে মেহতা বলেন, ‘‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির পরিবর্তন না করেই জামিন দেওয়া হয়েছে। আপনারা কি এই দিক খতিয়ে দেখবেন না? আমরা এর পিছনের কারণগুলি আর উল্লেখ করতে চাইছি না। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’’

এরপরই যেন গোটা শুনানি পর্ব হাতে নিয়ে নেয় আদালত৷ বিচারপতি বিনীত শরন এবং বিচারপতি বিআর গাভাই৷ একের পর এক প্রশ্ন করেন তুষার মেহেতাকে, যার একটারও সদুত্তর না দিয়ে CBI আইনজীবী প্রভাবশালী তত্ত্বেই জোর দেন৷ তখনই বিচারপতি গাভাই মেহেতাকে বলেন, “আপনারা ঠিক কী চান ? গৃহবন্দি করার নির্দেশ দেওয়া হলেও তারা তো আপনাদের CCTV র নজরদারিতেই আছেন৷ অন্য শর্তও তাঁরা মানছেন৷ তাহলে গৃহবন্দির আদেশ খারিজ করতে চাইছেন কেন ?
এই সময়ই দুই বিচারপতিই CBI-কে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “একজন নাগরিককে সংবিধানে যে অধিকার দেওয়া হয়েছে, সেই অধিকার কি প্রত্যাহার করা যায় ? মুখ্যমন্ত্রী বা আইনমন্ত্রী যদি আইন তাদের হাতে তুলেও নেন, তার জন্যে একজন অভিযুক্ত কেন হয়রানির শিকার হবেন?” তুষার মেহেতাকে বিচারপতি গাভাই বলেন, “CBI কোর্টে মামলা চলা সত্ত্বেও কলকাতা হাইকোর্ট আপনাদের আবেদন সাড়া দিয়ে বিশেষ ভাবে মামলা শুনেছে৷ কিন্তু আপনারা অভিযুক্তদের নোটিশই দেননি৷ কেন এমন হলো “? উত্তরে মেহতা বলেন, ‘‘সরকারি আইনজীবী বলছেন, ভিড়ের চাপে তিনি মোবাইলের মাধ্যমে সওয়াল জবাব করছেন।’’ বিচারপতিদের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘আমরা যখন আইনজীবী ছিলাম, আমরা কি চার্জশিট জমা দেওয়ার পরেও সওয়াল জবাব করতাম? উনি কেন করতে গিয়েছিলেন?”
প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে মেহতা তখন বলেন, ‘‘আপনারা মামলাটি স্থানান্তর করতে পারেন।’’ বিচারপতিরা পাল্টা বলেন, ‘‘তা হলে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণকে অগ্রাহ্য করা হবে। হাইকোর্টের মনোবল নষ্ট হবে৷ এটা আমরা করতে পারিনা”৷ মেহেতা বলেন, ‘‘হাইকোর্টকে অবিশ্বাস করছি না, এটা আমি বলতেও চাইছি না। আমার বক্তব্য, মামলাটি রাজ্যের বাইরে স্থানান্তরিত করা হোক। রাজ্যের পরিস্থিতির উপর ভরসা রাখা উচিত হবে না।’’

আরও পড়ুন-শীর্ষ আদালতে নারদ- মামলা প্রত্যাহার করলো CBI, শুনানি হবে হাইকোর্টেই

এর পরেই বিচারপতি বিনীত শরন এবং বিচারপতি বিআর গাভাই স্পষ্টভাবে তুষার মেহেতাকে জানান, “কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তি আইন তাঁদের হাতে তুলে নিলে সেই কারণে একজন অভিযুক্ত কেন হয়রানির শিকার হবে? মানুষের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে কিনা, সেটা মূল বিষয়। বাকিদের ভূমিকা বিচার করার অন্য উপায় আছে৷ আগে জামিনের আবেদনের নিষ্পত্তি হবে, তারপর বাকিগুলি”৷

বিচারপতিরা CBI -কে বলেন, ‘‘আমাদের কথা শুনুন। CBI-এর এই আর্জির উপর ভিত্তি করে আমরা কোনও রায় দিতে চাই না। হাইকোর্টের ৫ বিচারপতির বেঞ্চ মামলাটি শুনছেন। সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা এই আর্জি প্রত্যাহার করে ফিরে যান হাইকোর্টে৷ হাইকোর্টের কাছেই যা বলার বলুন৷” CBI আইনজীবী তখন স্বীকার করেন, হাইকোর্টের ৫ বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চ মামলাটি শুনছেন৷ বিচারপতি গাভাই বলেন ‘‘হাইকোর্টের ৫ বিচারপতির বেঞ্চ কী রায় দেয়, সে দিকে আমরা নজর রাখব। CBI যে আবেদন এখানে দাখিল করেছে, তা এখনই প্রত্যাহার করে নিক।’’

আর কোনও কথা বলার সুযোগ পাননি সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা৷ CBI-কর্তাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর সুপ্রিম কোর্টে তিনি জানান, “CBI তাঁদের পেশ করা আবেদন প্রত্যাহার করে নিচ্ছে”৷

এরপরই শীর্ষ আদালত মামলাটি কলকাতা হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেয় পরবর্তী শুনানির জন্য৷

Advt

Previous articleভ্যাকসিন নিতে নারাজ, যোগীরাজ্যে স্বাস্থ্যকর্মীদের দেখে নদীতে ঝাঁপ গ্রামবাসীর
Next article“আমফানের শিক্ষা নিয়ে ইয়াস মোকাবিলায় প্রস্তুত রাজ্য”, রাতে নবান্নেই থাকছেন মমতা