সুপ্রিম কোর্ট ঘুরে আসা নারদ-মামলার শুনানি আজ ফের হাইকোর্টেই

নারদ মামলা সুপ্রিম কোর্ট ঘুরে ফের হাইকোর্টেই৷ বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের ৫ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা৷

গত ২৫ মে সুপ্রিম কোর্টে তীব্র সমালোচিত হয়েছে CBI- এর ভূমিকা৷ পরিস্থিতি এমন হয়, CBI মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়৷ আইনি মহলের ধারনা, বৃহস্পতিবার বৃহত্তর বেঞ্চ নারদ-মামলার আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ কোনও রায় ঘোষণা করতে পারে। জামিনও পেতে পারেন চার অভিযুক্ত, ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়৷

প্রসঙ্গত, গত সোমবার হাইকোর্টের à§« বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চে নারদ মামলার শুনানি হয়। বুধবার ওই মামলার শুনানির কথা থাকলেও ইয়াস-এর প্রভাবের কারণে শুনানি স্থগিত রাখা হয়৷ বুধবার ও বৃহস্পতিবার আদালতের সমস্ত কার্যাবলি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বুধবারের ঝড়ে কলকাতায় তেমন কোনও প্রভাব না পড়ায় এই সিদ্ধান্তে কিছুটা বদল আনে হাইকোর্ট কর্তৃপক্ষ à§· বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট ফের বসবে, এমন সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে। সেই অনুসারে হাইকোর্টের ‘কজ-লিস্ট’-এ শুনানির জন্য রাখা হয়েছে নারদ-মামলা৷ বলা হয়েছে, এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল, বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, বিচারপতি হরিশ টন্ডন এবং বিচারপতি সৌমেন সেনের বিশেষ বৃহত্তর বেঞ্চে মামলাটি উঠবে।

◾এক নজরে নারদ-মামলার পর্যায়ক্রম

◾১৭ মে – নারদ-মামলার চার্জশিট পেশ করার আগে ভোর রাত থেকে CBI একে একে বাড়ি থেকে তুলে আনে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, বিধায়ক মদন মিত্র এবং প্রাক্তণ মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে৷

• এই চারজনকেই নিয়ে যাওয়া হয় নিজাম প্যালেসের CBI দফতরে৷

• বেলা ৪টে নাগাদ CBI-এর বিশেষ আদালত চার নেতা-মন্ত্রীকে জামিন দেয়৷

• জামিনে মুক্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সত্ত্বেও চার অভিযুক্তকে বসিয়ে রাখা হয় CBI দফতরে৷

• রাত ৮টা নাগাদ CBI কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল এবং বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে জামিন বাতিলের আর্জি জানায়৷

• একতরফা শুনানির ভিত্তিতে হাইকোর্ট চার অভিযুক্তের জামিনে স্থগিতাদেশ জারি করেন এবং তাঁদের জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়৷

• ওই রাতেই চার অভিযুক্তকে নিজাম প্যালেসের CBI দফতর থেকে পাঠানো হয় প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে৷

◾২১ মে- হাইকোর্টে শুনানিতে শুরু থেকেই হেভিওয়েটদের জামিনের বিষয়টিতে দুই বিচারপতির মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হয়।

• হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল তাঁদের গৃহবন্দি রাখার পক্ষে ছিলেন, অপর বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের জামিন দেওয়ার পক্ষে ছিলেন।

• শেষ পর্যন্ত চার অভিযুক্তকে গৃহবন্দি করার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট ৷

• পাশাপাশি দুই বিচারপতির মতপার্থক্য হওয়ায় মামলা বৃহত্তর বেঞ্চে যায়।

• নারদ মামলার তদন্তে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করা হয়। এই বৃহত্তর বেঞ্চে রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল, বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন, বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।

◾ ২৪ মে- বৃহত্তর বেঞ্চে শুনানি হলেও কোনও রায় ঘোষণা হয়না।

• মধ্যরাতে নাটকীয়ভাবে CBI আর্জি জানায় সুপ্রিম কোর্টে।

• আবেদনে কিছু ক্রুটি থাকাতে, তা বাতিল হয়। ফের নতুন করে CBI আবেদন করে।

◾২৫ মে- শুনানি হয় সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির ‘ভ্যাকেশন’ ডিভিশন বেঞ্চে৷

• কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে শীর্ষ আদালত।

• CBI মামলা প্রত্যাহার করে নেয়৷

•নারদ-মামলা ফেরে হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চেই।

◾২৭ মে- হাইকোর্টের পাঁচ বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চে ভার্চুয়াল শুনানি ধার্য করা হয়েছে৷

আইনি মহলের অভিমত, ২৫ মে সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে যে ধরনের পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে, বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ সেই বিষয়গুলিকে সামনে রেখেই এগোবে। শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতিই সেদিন জোর দিয়েছিলেন অভিযুক্ত গৃহবন্দিদের জামিন দেওয়ার বিষয়ে৷ শীর্ষ আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, আদালতের বাইরের রাজনৈতিক তৎপরতার কারণে চার অভিযুক্তের জামিন পাওয়ার অধিকার খর্ব করা যায়না৷ আইনি মহলের ধারনা, এই পর্যবেক্ষণকে ভিত্তি করে হাইকোর্টের ৫ বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চে জামিন পেতে পারেন চার অভিযুক্ত৷ তবে মূল মামলা চলবে৷

আরও পড়ুন- শক্তি হারিয়ে সুপার সাইক্লোন ইয়াস এখন গভীর নিম্নচাপ, কলকাতাতেও বৃষ্টির পূর্বাভাস