ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সঙ্গে পূর্ণিমার ভরা কোটালে ব্যাপক জলোচ্ছ্বাস ও নদী বাঁধ ভাঙন গোটা সুন্দরবন উপকূলবর্তী এলাকা জুড়ে। গজলের তোড় থেকে বাঁচাতে একদিকে যেমন সারারাত বাঁধ আখলে রয়েছেন হাজার হাজার গ্রামবাসী, অন্যদিকে বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়ে কুলতলি-ঝড়খালী-গোসাব-পাখিরালয়-সহ বিভিন্ন দ্বীপে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও জলমগ্ন জঙ্গলের বিভিন্ন জায়গা থেকে রয়েল বেঙ্গল টাইগার যে কোনও মুহূর্তে ঢুকে পড়তে পারে লোকালয়ে। ঢুকতে পারে কুমির। তবে সবচেয়ে আতঙ্কের বিষধর গোখরো ও কেউটে সাপ। বন দফতরের বক্তব্য অনুসারে, গোটা এলাকা জলের নীচে চলে যাওয়ার দরুণ সাপ রাস্তার উপর উঠে এসেছে। সেদিকে তাঁরা নজর রাখছেন।

ঝড়খালী সংলগ্নসুন্দরবন টাইগার রিজার্ভ। বন্যপ্রাণীরা যাতে লোকালয়ে না আসতে পারে সেজন্য লোকালয়ের কাছে খুঁটি পুঁতে নাইলনের জাল দিয়ে বনাঞ্চল ঘিরে দেওয়া হয়েছে। যদিও ইয়াসের দাপটে তা লণ্ডভণ্ড। দ্বীপের বিভিন্ন প্রান্ত দিয়ে বন্যপ্রাণী লোকালয়ে প্রবেশ করার ব্যাপক আশঙ্কা করছে বন দফতর। আশঙ্কা, জাল গুটিয়ে গিয়ে যে জায়গাগুলি অরক্ষিত হয়ে গেছে, সেখান দিয়ে হিংস্র জন্তুও লোকালয়ে ঢুকে পড়তে পারে।

সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা মিলিয়ে গোটা এই রিজার্ভটি হল ২,৫৮৪ বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১০৭ কিলোমিটার এলাকায় ফেন্সিং দেওয়া আছে। ৫০ কিলোমিটারের কাছাকাছি ফেন্সিং ইয়াসের দাপটে নষ্ট হয়ে গেছে। সারাইয়ের কাজটা বৃহস্পতিবারের আগে শুরু সম্ভব নয়। ফলে বন্যপ্রাণীদের লোকালয়ে ঢুকে পড়ার আশঙ্কাটা মোটেও অমূলক নয়। তাঁর কথায়, বিদ্যাধরী, হেরোভাঙ্গা, মাতলা, কোরানখালি ও ঝিলা নদীর ধারে যে বনাঞ্চল আছে, সেখানে এই ক্ষতিটা হয়েছে।

আরও পড়ুন:হাইকোর্টের ৫ বিচারপতির বেঞ্চে বৃহস্পতিবারই নারদ-মামলার শুনানি
ইয়াসের দাপটে ক্ষতি হয়েছে বন দফতরের ক্যাম্পগুলিরও।মোট ২১টি ক্যাম্পের মধ্যে ১৬টি ক্যাম্পের অবস্থা খুবই সঙ্গীন। প্রায় সব ক্যাম্পেই জল ঢুকে গেছে। বিদ্যুৎ নেই। সোলার পাওয়ারও নষ্ট হয়ে গেছে। ক্যাম্প সংলগ্ন জেটি গেছে ভেঙে। ফলে রাতে ভরসা মোমবাতির আলো। তার মধ্যেও ভুটভুটি ও লঞ্চ নিয়ে অতন্দ্র প্রহরীর মতো ফেন্সিং পাহারা দিচ্ছেন রেঞ্জ অফিসার থেকে বন দফতরের অন্য আধিকারিক ও কর্মীরা। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন কোস্টাল থানার পুলিশ। এই দুর্বিষহ রাতটা কাটানোই সকলের কাছে চ্যালেঞ্জের।
