নারদ-মামলা ‘অন্যত্র’ কেন সরাতে চাইছে CBI ?

বহুচর্চিত ‘প্রভাবশালী’ তত্ত্বকে সামনে এনে আজ সোমবার হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে CBI-এর মামলা অন্যত্র সরানোর সওয়াল করার কথা৷ আর
নিজেদের এক্তিয়ারের মধ্যে থেকে এই আর্জি কতখানি আইনসঙ্গত, কতখানি যুক্তিযুক্ত, তা বিচার করবেন বৃহত্তর বেঞ্চের পাঁচ বিচারপতি৷

নারদ মামলায় হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে দুটি বিষয় নিয়ে CBI আর্জি জানিয়েছিলো৷ প্রথমটি, হেফাজতে থাকা চার নেতা-মন্ত্রীকে জামিন মঞ্জুর করা চলবে না৷ দ্বিতীয়টি, ধৃতরা প্রভাবশালী, তাই মামলাটি অন্যত্র সরানো হোক। প্রথমটির ফয়সালা হয়ে গিয়েছে গত শুক্রবার৷ CBI-এর আপত্তি উড়িয়ে বৃহত্তর বেঞ্চ চার নেতা-মন্ত্রীকেই শর্তাধীন জামিন দিয়েছে৷

এবার CBI আইনি লড়াইয়ে নেমেছে দ্বিতীয় আর্জি নিয়ে৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, হাইকোর্ট এই আর্জি নিয়ে কতখানি এগোতে পারে ?
নিম্ন আদালত, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট কিংবা বিশেষ বৃহত্তর বেঞ্চে CBI প্রতি শুনানিতেই রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, তদন্তকারীদের কাজে বাধাদান, নিম্ন আদালতকে প্রভাবিত করার বিষয় নিয়েই সওয়াল চালাচ্ছে৷ সোমবারও তাই-ই করবে৷
কিন্তু CBI যে চাইছে নারদ- মামলা অন্যত্র সরাতে, তাতে তদন্তকারীদের ‘সমস্যা’-র সুরাহা কতখানি হবে ?

১) বিষয়টি স্পষ্ট নয়, মামলা ‘অন্যত্র’ সরানো বলতে CBI ঠিক কী বোঝাতে চাইছে, এই রাজ্যের অন্য আদালতে ? না’কি ভিন রাজ্যে ?

২) কোনও মামলা এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে নিয়ে যেতে গেলে সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি প্রয়োজন।

৩) আইন বলছে, ভিন রাজ্যে কোনও মামলা স্থানান্তরের অনুমতি দিতে পারে না হাইকোর্ট।

৪) হাইকোর্ট নিজের এক্তিয়ার অনুযায়ী শুধু রাজ্যের অন্য কোনও আদালতে নারদ-মামলাটি সরানোর অনুমতি দিতে পারে।

৫) হাইকোর্ট রাজ্যের অন্য কোনও আদালতে মামলা সরানোর অনুমতি দিতেই পারে৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, নারদ- মামলা তো সেক্ষেত্রে এই রাজ্যেই থাকবে৷ আর যদি এ রাজ্যেই থাকে, অর্থাৎ মামলাটি ব্যাঙ্কশাল কোর্টের পরিবর্তে অন্য কোর্টে স্থানান্তরিত হয়, তাতে CBI-এর কতখানি লাভ হবে ? CBI- এর তোলা তথাকথিত রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, তদন্তকারীদের কাজে বাধা, নিম্ন আদালতকে প্রভাবিত করার বিষয়গুলো তো থেকেই যাবে৷ তাহলে CBI এতখানি মরিয়া হয়ে এই শুনানি চাইছে কেন ?

৫) বৃহত্তর বেঞ্চ ব্যাঙ্কশাল কোর্টের পরিবর্তে অন্য কোর্টে নারদ-মামলা স্থানান্তর করলে CBI ফের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারে৷

৭) কিন্তু এই ইস্যুতে শীর্ষ আদালতে গেলে CBI- এর ফের মুখ পোড়ার আশঙ্কা থাকছে৷ কারণ, হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চের রায় এক কথায় নাকচ করা যায়না৷ দীর্ঘ শুনানি হবেই৷ হাইকোর্টের শুনানি বা রায় এড়িয়ে যাওয়াও যাবে না।

৮) CBI যদি ভিন রাজ্যেই নারদ-মামলা সরাতে চায়, তাহলে সুপ্রিম কোর্টে না গিয়ে হাইকোর্টে এই আর্জি জানালো কেন ?

৯) নারদ-মামলার এই অংশ নিয়ে হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ CBI-কে কতখানি ‘রিলিফ’ দিতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে৷

১০) অবশ্য এটাও জানা যাচ্ছে না, CBI-এর আস্তিনে কোনও তাস লুকানো আছে কি’না৷ কারণ, আজ হোক বা কাল, CBI-কে নারদ- মামলায় অভিযুক্ত বিজেপির দুই বিধায়ক, মুকুল রায় এবং শুভেন্দু অধিকারীকে ডাকতেই হবে, চার্জশিটও দিতে হবে৷ চার অভিযুক্তকে যে যে কারণে ‘প্রভাবশালী’ বলা হচ্ছে, এই দু’জনের ক্ষেত্রেও CBI-কে সেকথাই বলতে হবে৷ চার অভিযুক্তকে যে কারণ দেখিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছিলো, সেই একই কারণ দেখিয়ে মুকুল-শুভেন্দুকেও গ্রেফতার করতে হবে৷ এই দু’জনও ‘প্রভাবশালী’ বলে তাঁদের জামিনে আপত্তি জানাতে হবে৷ এবং এই সব আইনি প্রক্রিয়া চলবে এ রাজ্যের নিম্ন আদালতে৷ একই মামলায় চার অভিযুক্তের জামিন পাওয়ার কাগজ দেখিয়ে এই দু’জন চট করে রেহাই নাও পেতে পারেন৷

১১) ফলে, প্রশ্ন উঠছে, কেন্দ্রের পছন্দের দুই অভিযুক্তের স্বার্থেই কি ‘বিশেষ মহল’-এর নির্দেশে নারদ-মামলা অন্যত্র সরাতে চাইছে CBI ?

মোটের উপর, প্যাণ্ডোরার বাক্স খুলে দিয়েছে CBI, সামলাতে হবে তাঁদেরকেই!

Advt

Previous articleনবান্নে আলাপন: বদলির নির্দেশ প্রত্যাহারের আবেদন করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর
Next articleBreaking: আলাপনের বিরুদ্ধে শৃঙখলাভঙ্গের অভিযোগ এনে ব্যবস্থা নিচ্ছে কেন্দ্র