তৃণমূলের জয়ে মুকুল ঘনিষ্ঠ সুদীপের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, “ত্রিপুরা বাংলার ছোট ভাই”!

বিজেপি (BJP) ছেড়ে “ঘর ওয়াপাসি” হয়েছে মুকুল রায়ের (Mukul Roy)। আর দলনেত্রীর হাত ধরে ঘরের ছেলে ঘরে ফেরার পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে জোর গুঞ্জন, মুকুলের ফুল বদল করবেন আরও বেশকিছু নেতা-নেত্রী। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে বিজেপি। তবে শুধু যে এ রাজ্যে বিজেপি ভাঙবে তা নয়, ভিন রাজ্যেও গেরুয়া শিবিরের মাথায় উপর আশঙ্কার কালো মেঘ। আর সেই তালিকাতে শীর্ষে রয়েছে পাশের আরেক বাংলি রাজ্য ত্রিপুরা (Tripura)।

আগরতলার (Agartala) রাজনীতিতে কান পাতলেই নাকি শোনা যাচ্ছে, এবার সদলবলে বিজেপি ছাড়তে পারেন মুকুল রায় ঘনিষ্ঠ সুদীপ রায় বর্মন (Sudip Roy Barman)। এবং তার জন্য দায়ী থাকবেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব (Biplab Dev)। মানিক সরকারের (Manik Sarkar) দীর্ঘ প্রায় আড়াই দশকের বাম (Left front) দুর্গে ফাটল ধরিয়ে ২০১৮ সালে ত্রিপুরায় প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন রাজনীতিতে অপেক্ষাকৃত অপরিচিত আনকোড়া বিপ্লব দেব।

সরকার গঠনের কয়েক মাস পর থেকেই সরকারি দলের অন্দরে প্রবল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথা চাড়া দেয়। একদিকে সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ বিপ্লব দেবের লবি তো অন্যদিকে কংগ্রেস, তৃণমূল (TMC) হয়ে বিজেপিতে নাম লেখানো সুদীপ রায় বর্মন। এরপর একটা সময় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন সুদীপ রায় বর্মন। বর্তমানে দলের সংগঠনের কোনও পদেও তিনি নেই। মোটকথা ত্রিপুরা বিজেপিতে কোণঠাসা সুদীপ রায় বর্মন গোষ্ঠী। অথচ, সুনীল দেওধরদের হাত ধরে তৃণমূল ভেঙে সুদীপ রায় বর্মন গোষ্ঠী গেরুয়া শিবিরে যোগ না দিলে ত্রিপুরায় বিজেপি ক্ষমতায় আসতো কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

ত্রিপুরার রাজনীতিতে সুদীপ রায় বর্মনের কেরিয়ার যথেষ্ট উজ্জ্বল। বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে বাম বিরোধী রাজনীতির সবচেয়ে বড় মুখ ছিলেন সুদীপবাবু। ১৯৯৮ সাল থেকে একটানা আগরতলা আসন থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়ে আসছেন তিনি। বহু বছর ত্রিপুরা বিধানসভায় বিরোধী নেতা ছিলেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন তিনি। কংগ্রেস আমলে একটা সময়ে তাঁর বাবা সমীর রায় বর্মন ছিলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী। খুব স্বাভাবিকভাবেই ত্রিপুরায় পালা বদলের পর মনে করা হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসবেন সুদীপ রায় বর্মন। কিন্তু সঙ্ঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী হয়ে যান বিপ্লব দেব। যা অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। সেখান থেকেও বিজেপির সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল সুদীপবাবুর।

এর আগে ২০১৬ সালে মুকুল রায়ের হাত ধরে তৃণমূল কংগ্রেসে আসেন সুদীপ রায় বর্মন। তার পর মুকুল রায় বিজেপি–তে যোগ দিলে তিনিও যোগ দেন। কিন্তু বিজেপি–তে যোগ দিলেও তাঁর সেই আগের প্রভাব অনেকটাই কমতে থাকে। এবার মুকুল তৃণমূলে ফিরেছেন। তাই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তিনিও সেই পথ নিতে পারেন। এবং ত্রিপুরার রাজনীতিতে এই মুহূর্তে যা ডামাডোল পরিস্থিতি, তাতে এটাই সুদীপ রায় বর্মন ও তাঁর অনুগামীদের জন্য তৃণমূলে যোগদানের আদর্শ সময় বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

এদিকে, পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপুল জয় শুধু রাজ্য রাজনীতি নয়, জাতীয় রাজনীতিতেও যে প্রভাব ফেলেছে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে ত্রিপুরাতে। বাংলায় তৃণমূলের বিপুল জয়ে উৎসাহিত হয়ে শুধু বিজেপি বিক্ষুব্ধরা নন, বাম ও কংগ্রেস থেকে ঘাসফুল শিবিরে যোগদানের ভিড় লেগেছে। যেহেতু একটা সময় ত্রিপুরা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক ছিলেন মুকুল রায়, ফলে তিনি নতুন করে তৃণমূলে ফিরতেই অক্সিজেন পেয়েছে সে রাজ্যের ঘাসফুল শিবিরের নেতারা। ত্রিপুরা তৃণমূলের প্রেসিডেন্ট আশিস লাল সিং বলেন, “বিপ্লব দেবের তিন বছরের অপশাসনে মানুষ হতাশ। তৃণমূলই বিজেপি অপশাসনের হাত থেকে ত্রিপুরাকে রক্ষা করবে।”

আরও পড়ুন:ধনকড়কে সময় দিলেন না শাহ, রাজ্যপালের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের সম্ভাবনাও ক্ষীণ

২০২৩-এ ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে এখন থেকেই কোমর বেঁধে মাঠে নামছে তৃণমূল। সেই পালের হাওয়ায় কি ফের একবার গা ভাসাবেন মুকুল ঘনিষ্ঠ নেতা সুদীপ রায় বর্মন? তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, “এখনও আমি বিজেপিতে আসছি। আগামিকাল কী হবে কে বলতে পারে?”
পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের জয় কীভাবে দেখছেন? সুদীপ রায় বর্মন বলেন, “গণতন্ত্রে মানুষের সঠিক রায়ের প্রতিফলন হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। তা না হলে এতো বিরাট জয় আসতো না।” বাংলার জয়ের প্রভাব কি ত্রিপুরাতে পড়বে? মুচকি হেঁসে সুদীপ রায় বর্মনের উত্তর, “ত্রিপুরা বাংলার ছোট ভাই…!”

Previous articleধনকড়কে সময় দিলেন না শাহ, রাজ্যপালের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের সম্ভাবনাও ক্ষীণ
Next articleআইসিসি টেস্ট র‍্যাঙ্কি এ ব‍্যাটসম‍্যানদের মধ‍্যে শীর্ষে উঠে এলেন স্টিভ স্মিথ, চতুর্থ স্থানে কোহলি