ক্লাবে মদ্যপান প্রসঙ্গে সরগরম সংসদ, তদন্তের দাবি নিয়ে হাসিনার দ্বারস্থ

খায়রুল আলম, ঢাকা: জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনে বৃহস্পতিবার রাজধানী, ঢাকায় বিভিন্ন ক্লাব, মদ ও জুয়া নিয়ে আলোচনা চরমে উঠে। শুধু সংসদের বিরোধী দলই নয়, সরকারি দলের সাংসদরাও এ ব্যাপারে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।এনিয়ে আলোচনা এতটাই গড়িয়েছে যে ক্লাবগুলি বন্ধের দাবিও উঠেছে । সাংসদদের প্রশ্ন, কে বা কারা তৈরি করেছে এইসকল ক্লাব? এ ব্যাপারে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সাংসদরা নিজেদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু করেন। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ এইসকল জায়গা থেকে তোলাও তোলে।

বৃহস্পতিবার অভিনেত্রী পরীমনির ঘটনার সূত্র ধরে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনা শুরু করেন। পরে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ অন্য দলের সাংসদরাও এতে অংশ নেন। এ সময় মদের অনুমোদন নিয়ে পরস্পরের ওপর দোষারোপ করা হয়। আলোচনা এতটাই চরমে উঠে যে কিছুক্ষণের জন্য সরগরম হয়ে ওঠে সংসদ।

জাতীয় পার্টির সাংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু ছাড়াও আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বিএনপির হারুনুর রশীদ, তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এবং বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা আলোচনায় অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতেই এই বাগবিতণ্ডা চলে।

আলোচনার শুরুতে চুন্নু বলেন, কয়েক দিন ধরে একজন অভিনেত্রীর বিষয়ে আলোচনা চলছে। যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি হল, উত্তরা বোট ক্লাব। কে করল এই ক্লাব? এই ক্লাবের সদস্য কারা? শুনেছি ৫০-৬০ লাখ টাকা দিয়ে এর সদস্য হতে হয়। এত টাকা দিয়ে কারা এর সদস্য হন? আমরা তো ভাবতেই পারি না। সারাজীবন এত উপার্জনও করি না। এর সূত্র ধরেই রাজধানীর আরও কয়েকটি বিলাসবহুল ক্লাবের নাম উল্লেখ করে সাবেক প্রতিমন্ত্রী চুন্নু বলেন, এসব ক্লাবে মদ খাওয়া হয়। জুয়া খেলা হয়। বাংলাদেশে মদ খেতে হলে লাইসেন্স লাগে। সেখানে গ্যালন গ্যালন মদ বিক্রি হয়। লাইসেন্স নিয়ে খেতে হলে এত মদ তো বিক্রি হওয়ার কথা নয়। তারপরই তিনি প্রশ্ন করেন, সরকারি কর্মকর্তারা এখানে কীভাবে সদস্য হন? এত টাকা কোথা থেকে আসে? এসব আমাদের আইনে নেই, সংস্কৃতিতে নেই, ধর্মে নেই।

এরপ প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীকে বলব, আপনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দিন- কেন এসব হচ্ছে? কেন বন্ধ করা হবে না? ওইসব ক্লাবের সদস্য কারা হন? পরীমনির যে ঘটনা সেটা বোট ক্লাবে। ওই জায়গার একজন মালিক আছেন। তিনি যেতেও পারেন না। এসব খতিয়ে দেখতে হবে।“

চুন্নুর বক্তব্যের পরই শেখ সেলিম এপ্রসঙ্গে বাংলাদেশে মদ ও জুয়ার লাইসেন্স দেওয়ার জন্য বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান স্টিমার ক্লাব করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু মদ-জুয়ার লাইসেন্স বন্ধ করে দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান আবার চালু করেছিলেন। যারা অপরাধের শুরু করেছেন তাদের আগে বিচার করা উচিত। প্রথম থেকেই শাস্তি দেওয়া হোক বলে দাবিও জানান তিনি। অন্যদিকে, বিএনপির হারুনুর রশীদ এ সময় স্পিকারের কাছে অনুমতি নিয়ে বলেন, আমাদের বিরোধী দলের একজন সাংসদ সদস্য একটি বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু সিনিয়র এক সদস্য (শেখ সেলিম) কোথায় চলে গেলেন? বাংলাদেশে অনেক বিদেশি থাকেন। তিনি আরও বলেন, এছাড়া অন্য ধর্মের মানুষদের জন্য, ডোমদের জন্য মদের বৈধতা আছে। কোনও মুসলমানের জন্য আইনে অনুমতি নেই। জিয়াউর রহমান যদি মুসলমানদের মদের লাইসেন্স দিয়ে থাকেন যদি প্রমাণ করতে পারেন আমি সদস্য পদ ছেড়ে দেব।তিনি বলেন, এসব ক্লাবে, মদের ব্যবসার সঙ্গে সরকারি লোক জড়িত। আমি চ্যালেঞ্জ করছি। পুলিশ এসব জায়গা থেকে টাকা নেয়। প্রধানমন্ত্রী কোনও দলের নন, তিনি রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী। এসব খতিয়ে দেখা হোক। হারুনের বক্তব্যের পর শেখ সেলিম ফের বলেন, একাধিক উদাহরণ দিয়ে জিয়াউর রহমানকেই কাঠগোড়ায় তোলেন।

এভাবে বেশ কিছুক্ষণ বাদানুবাদ চলার পর জাতীয় পার্টির সদস্য বিরোধী দলের প্রধান, হুইপ মসিউর রহমান বলেন, এখানে রাষ্ট্রীয় কিছু বিষয় আছে। বঙ্গবন্ধু লাইসেন্স দেননি। ২১ বছরে আইনকে মিসইউজ করে এটা করা হয়েছে। বিদেশিদের অ্যারেঞ্জমেন্টের জন্য এটা করেছে। ক্লাবগুলো একজন ডাক্তারকে দিয়ে সার্টিফিকেট বানিয়ে নেয়।তারপর লাইসেন্স নেওয়া হয়। বিএনপি এই লাইসেন্স দিয়েছিল। এখন কোনও মুসলমান যদি মদ খায় সেখানে সরকারের কিছু করার নেই।

 

Previous articleত্রিপুরায় বিজেপির ভাঙন রুখতে তিন নেতাকে তড়িঘড়ি আগরতলায় পাঠালো বিজেপি
Next articleঅ্যামাজনের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে কর ফাঁকি, নাম জড়ালো ইনফোসিস প্রধান নারায়ণ মূর্তির