Thursday, December 18, 2025

প্রতিবাদ আর জঙ্গি কার্যকলাপ এক নয়- দিল্লি হাইকোর্ট

Date:

Share post:

অমিতাভ সিংহ

ওরা আমাদের শুধু বন্দি করার ভয় দেখাতে পারে কিন্তু সেটাই আমাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সংকল্পকে দৃঢ় করবে- নাতাশা নারওয়াল।
গ্রেপ্তারির দিন থেকেই বলা হচ্ছিল আমরা জঙ্গি।জেলে এত মার খেয়েছি যে উঠতে বসতেও পারতাম না। মানবতার জন্য যে লড়াই তা থামবে না।সিএএ ও এনআরসির জন্য লড়াই চলবে ভয় ছাড়াই- আসিফ ইকবাল।
আমাদের দমন করার কতটা দম আছে তোমাদের,তা আমরা দেখেছি,আরও দেখব- গত বৃহস্পতিবার তিহার জেলের বাইরে থাকা জনতা।
সারা দেশের গণতন্ত্র প্রেমিক মানুষের কন্ঠে একই কথা প্রতিধ্বনিত হচ্ছে আজ। বিজেপি সরকারের ফ্যাসিস্ত আচরন ও সরকারের কোন নীতির বিরোধীতা করলেই ইউ এ পি এ আইন,রাষ্ট্রদোহ বা এমনকিছু ধারা দিয়ে প্রতিবাদীদের দীর্ঘদিন জেলবন্দী করে মানুষের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ করার অধিকার বন্ধ করা একটা অভ্যাস হয়ে গেছে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের ও বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির।
একবছর আগে দেবাঙ্গনা কলিতা,নাতাশা নারওয়াল ও আসিফ ইকবাল তানহাকে দিল্লী পুলিশ তাদের দিল্লীর বাসস্থান থেকে গ্রেপ্তার করে ইউএপিএ আইনে। পুলিশের অভিযোগ ছিল এনআরসি ও সিএএ নিয়ে বিক্ষোভের নামে দিল্লী দাঙ্গায় ইন্ধন জুগিয়েছিল এই ছাত্র ও ছাত্রীরা। এই একবছরের মধ্যে একবারই নাতাশাকে পিতার শেষকৃত্যর সময় তিন সপ্তাহের প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিল।যদিও মরণাপন্ন পিতাকে একবার চোখের দেখাও দেখতে অনুমতি দেন নি তৎকালীন বিচারপতিরা।
মহাত্মাজি, জওহরলাল, আম্বেদকর প্রমূখদের দেশের মহান গণতন্ত্রর ধারনাটিকে শ্রদ্ধা জানিয়েও বলতে বাধ্য হচ্ছি যে বিজেপির আমলে তা শুধু বার বার ধর্ষিত হচ্ছে তাই নয়, তাদের দাদাগিরি ও লোভের শিকার হচ্ছে দেশের বিচারব্যবস্থা। তাই যখন বিচারপতি অনুপ ভম্বানি ও বিচারপতি সিদ্ধার্থ মৃদুলের বেঞ্চ এই মামলায় ধৃতদের জামিন দিতে গিয়ে মন্তব্য করেন ” সংবিধান স্বীকৃত প্রতিবাদের অধিকার এবং সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের মধ্যে পার্থক্য আাছে, কিন্তু বিক্ষোভ দমনের জন্য রাষ্ট্রের চোখে তা ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে”,তখন কিছুটা আশ্চর্য হতেই হয়। তবে তাঁরা একথা বলে আমাদের সংবিধানের প্রতি যেভাবে দায়বদ্ধতা দেখিয়েছেন তাতে ভরসা পাওয়া যায়।তাঁরা বলেছেন,এই ধরনের মানসিকতা প্রাধান্য পেলে তা হবে গণতন্ত্রর পক্ষে দুঃখের দিন।ধৃতদের কার্যকলাপকে তাঁরা সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বা ষড়যন্ত্র বলতে রাজী হন নি,তাদের মতে তারা শুধুমাত্র বিক্ষোভ সংগঠিত করেছেন।
জামিন দেওয়া হয়েছে গত মঙ্গলবার,কিন্তু জেল থেকে মুক্তি পেতে সময় লাগলো ৪৮ ঘন্টারও বেশী।কারণ দিল্লী পুলিশের উদ্দেশ্য ছিল যেকোনভাবে জামিন আটকানো,এজন্য সুপ্রীম কোর্টে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল তারা।তাই তারা জামিনদার ও বাসস্থান সংক্রান্ত রিপোর্ট দিতে অহেতুক দেরী করেছে।হাস্যকর যুক্তি দিয়ে বলেছে যে ধৃতদের বাসস্থান যাচাই করতে তাদের পিতা মাতার রাজ্যে, অর্থাৎ অসম,ঝাড়খন্ড ও হরিয়ানায় ট্রেনে করে যেতে আসতে অন্ততঃ তিনদিন সময় লাগবে।কিন্তু বিচারপতির নির্দেশে দিল্লী পুলিশ ধৃতদের দিল্লির ঠিকানা যাচাই করতে বাধ্য হয়।
কয়েকদিন আগে জামিন পেয়েছেন হাথারসে দলিতকন্যা ধর্ষণ, হত্যা ও পুলিশের রাতের অন্ধকারে তাঁর মৃতদেহ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার খবর করতে যাওয়া সাংবাদিক সিদ্দিকি কাপ্পান। ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর অনেক আগেই ইউএপিএ আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাকে।প্রায় নয়মাস তাকে জেলে থাকতে হয়েছিল। মনে হয় এই বিচারবিভাগের ওপর আস্থা রাখা যেতে পারে।তবে এটা সম্ভব হবে সম্মিলিতভাবে মানুষের প্রতিবাদে অংশগ্রহণ।

spot_img

Related articles

মানহানির অভিযোগে প্রাক্তন স্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ কুমার শানু

সংগীতজগতে দীর্ঘ চার দশকের সাফল্যের কাহিনি থাকলেও ব্যক্তিগত জীবনের বিতর্কে ফের শিরোনামে কিংবদন্তি গায়ক কুমার শানু। প্রাক্তন স্ত্রী...

বড়দিন ও বর্ষবরণে আইনশৃঙ্খলা আঁটসাঁট, পুলিশের ছুটিতে নিষেধাজ্ঞা রাজ্য জুড়ে 

বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়ে গেল বড়দিনের উৎসব। কলকাতার অ্যালেন পার্ক থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসবের...

বাজেয়াপ্ত যুবভারতীর সিসিটিভি ফুটেজ, নজরে শতদ্রু ঘনিষ্ঠরা

যুবভারতীতে মেসি(Messi) ইভেন্ট চরম বিশৃঙ্খলায় তদন্ত শুরু করেছে রাজ্য সরকার গঠিত সিট(SIT)। যুবভারতীর (Yubha bharati) যাবতীয় সিসিটিভি ফুটেজ...

সিইও দফতরের নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনী, শুক্রবার থেকেই মোতায়েন

রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর নিরাপত্তায় এবার কেন্দ্রীয় বাহিনী (central security force) মোতায়েন করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের তরফে...